এবার বাংলাদেশকেই মামলার হুমকি দিচ্ছে আরসিবিসি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার অর্থ চুরির ঘটনায় আবারও নিজেদের দায় অস্বীকার করেছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি)। বাংলাদেশের অভিযোগকে ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়ে ওই অভিযোগের বিরুদ্ধে মামলার হুমকিও দিয়েছে তারা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের নিজস্ব সূত্রের বরাতে এইসব কথা জানিয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে হওয়া তদন্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের একাংশের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) নতুন করে এ প্রতিক্রিয়ায় জানায় তারা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শুরু থেকেই দায় এড়ানোর চেষ্টারত রিজাল ব্যাংক আইনজীবী বলেছেন, যেখানে এই সাইবার ডাকাতির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংক দায়ী, সেখানে অন্যের ওপর যেকোনও দায় চাপানো উচিত নয়। আরসিবিসির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ করায় উল্টো বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করায় যায় কিনা তার আইনি উপায় খুঁজবে বলে জানিয়েছে ফিলিপাইনি এ ব্যাংকটি।

গত ফ্রেব্রয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক-এ সাইবার ডাকাতি হয়
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তের সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহ আলম সোমবার রয়টার্সকে বলেন, কিছু কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তা জেনেশুনে ব্যাংকের সঙ্গে সুইফটের সংযোগ ব্যবস্থাকে নড়বড়ে করে রেখেছিলেন। তারা কয়েকজন বিদেশির সঙ্গে এ কাজ করেছেন। মাঝারি পর্যায়ের ওইসব কর্মকর্তা কিভাবে হ্যাকারদের সঙ্গে যুক্ত হলেন এবং কিভাবে তারা সাইবার ডাকাতির এ ঘটনায় আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছিলেন তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি। শিগগিরই জড়িতদের গ্রেফতারেরও ইঙ্গিত দেন শাহ আলম।

 

আর শাহ আলমের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আরসিবিসির আইনজীবী থিয়া দায়েপ রয়টার্সকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দিষ্ট সংখ্যক কর্মকর্তার এ ব্যাপারে অপরাধমূলক অবহেলা রয়েছে বলে বাংলাদেশের তদন্তকারীরা যে ইঙ্গিত দিয়েছে তার মধ্য দিয়ে আরসিবিসির দাবির বৈধতা মিলেছে। এবং তাহল বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব কর্মকাণ্ডই নিজেদের ক্ষতির কারণ। তারা আরসিবিসির ওপর দায় চাপাতে পারে না। কেননা, অর্থচুরির ঘটনায় আরসিবিসির কিছু করার ছিল না।’

 

দায়েপ আরও জানান, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনায় উল্টো বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় কিনা তার আইনি উপায় খুঁজবে আরসিবিসি।

 

উল্লেখ্য, হ্যাকারদের একটি গ্রুপ চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ চুরি করার চেষ্টা করে। তবে পুরোপুরি সফল না হলেও ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করতে সক্ষম হয় তারা। রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর আরসিবিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। বলা হয়, ৫০০ ডলার করে জমা দিয়ে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনে (আরসিবিসি) ২০১৫ সালের ১৫ মে কয়েকটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে আর কোনও লেনদেন হয়নি। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে হ্যাকাররা ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ চুরি করে ওই অ্যাকাউন্টগুলোতে স্থানান্তর করে। সেখান থেকে ক্যাসিনো হয়ে হংকংয়ে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয় ওই অর্থ। এ ঘটনায় আরসিবিসির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে আরসিবিসিও বার বার দাবি করে আসছে, এ ঘটনায় তাদের দায় নেই। এখন পর্যন্ত চুরি যাওয়া অর্থের মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন