এবার ঘর নির্মাণের ইট বিক্রি করে ইফতারী দিলেন বাগাতিপাড়ার সেই দম্পতি

মঞ্জুরুল আলম মাসুম, বাগাতিপাড়া:
তবুও থেমে নেই ওদের পথ চলা। করোনা (কোভিট-১৯) সংকটে নিজের চিকিৎসার পুরো অর্থ কর্মহীন অসহায়দের মাঝে বিলিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হননি। কখনও কখনও নিজেদের রান্না করা খাবার আবার কখনও নিজেদের জন্য করা বাজারও বিলিয়েছেন । নাটোরের বাগাতিপাড়ার সেই শিরিন-জিয়া দম্পতি এবার নিজের মহল্লার মানুষদের মাঝে বিতরণ করলেন ইফতার সামগ্রী।
আর অসুস্থ শরীরে নিজের হাতে বানানো ব্যাগেই ইফতার সামগ্রী তুলে দেন শিরিন আক্তার। অবাক করা বিষয় হলো, এবার নিজেদের বাড়ি নির্মাণের জন্য কিনে রাখা ইট বিক্রির টাকায় অসহায়দের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেন। এদিকে, চিকিৎসার জন্য জমানো পুরো এক লাখ টাকা অসহায়দের মাঝে বিলিয়ে ইতোমধ্যেই সাড়া ফেলেছেন এই দম্পতি।
সিল্কসিটি নিউজসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও প্রচার-প্রকাশ হয় তাদের মানবিক সহায়তার খবর। রেলের পরিত্যক্ত জমিতে বসবাস করা এই দম্পতি অন্যের সাহায্যের মাঝে যেন খুঁজে পেয়েছেন শান্তির দিশা। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বাগাতিপাড়া পৌর এলাকার ৬০টি অসহায় পরিবারের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেন। পেড়াবাড়িয়া ঈদগাহ মাঠে অনেকটা সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে নিজের বানানো ব্যাগে ভরা এই ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেন তারা। এ সহযোগিতা পেয়ে অসহায় মানুষগুলোও বেশ সন্তুষ্ট।
ওই দম্পতি জানান, স্ত্রী শিিরন আক্তার নিজেদের চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে নিজে সেলাইয়ের কাজ করে এবং স্বামী জিয়াউর রহমানের ঠিকাদারীর সহযোগী হিসেবে কাজ করে তিলে তিলে জমিয়েছিলেন এক লাখ টাকা। সেই জমানো সব টাকা বিলিয়ে দেন করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায় মানুষদের মাঝে।এসব অসহায় মানুষের খাবারের জন্য আকুতির কথা মাথায় রেখেই তাদের এই ত্যাগ। শিরিন- জিয়া দম্পতির বসবাস বাগাতিপাড়া পৌরসভার মালঞ্চি রেলগেট এলাকায়। নিজেদের জমিজমা না থাকায় থাকেন রেলের পরিত্যক্ত জমিতে ছোট্ট ঘর নির্মাণ করে সেখানেই থাকেন। পেশায় জিয়াউর রহমান ঠিকাদারীর সহযোগী এবং শিরিন আক্তার আনসার- ভিডিপি’র পৌর ওয়ার্ড দলনেতা।
ব্যক্তিগত জীবনে তাদের দুটি সন্তান। একটি হাফেজিয়া মাদরাসায়, আর বড় ছেলে রাজশাহী পলিটেকনিক্যালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা করছে।
তারা জানান, করোনা মোকাবেলার যুদ্ধে ঘরে থাকতে গিয়ে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এসব অসহায় মানুষদের চাপা কান্না তাদেরকে আলোড়িত করেছে। তাই নিজেদের চিকিৎসার জন্য জমানো সব টাকা দিয়ে গত ২৯ মার্চ থেকে সমাজের এসব মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন । নিজেরায় বাজার করে চাল, ডাল, আলু, শাক-সবজি, তেল, সাবান বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন।
জিয়াউর রহমান বলেন, তার অসুস্থ স্ত্রীর ইচ্ছায় চিকিৎসার টাকা দিয়ে এই মহামারির সময় প্রথম থেকেই গরীব দুঃখীর পাশে দাঁড়িয়েছেন।
এ নিয়ে শিরিন আক্তার বলেন, করোনা প্রভাবে তিনি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চিকিৎসা নিতে যেতে পারেননি। তাই স্বামীর সাথে পরামর্শ করে এই ভাইরাসের প্রভাবে যেসকল নিম্ন আয়ের মানুষ কর্মহীন হয়ে কষ্টে জীবন যাপন করছে তাদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন। যতক্ষণ সামর্থ্য থাকবে ততক্ষণ এ কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন বলেও তিনি জানান। এছাড়াও সমাজের সকল ধনী বিত্তবানদের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্যও আহ্বান জানান শিরিন-জিয়া দম্পতি।
উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল সিল্কসিটি নিউজে প্রথম শিরিন-জিয়া দম্পতির মানবসেবা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়।