কভফেফে: যেভাবে আবারও ইন্টারনেট মাতালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: একটি মাত্র শব্দ যে ইন্টারনেটকে মাতিয়ে তুলতে পারে, তা আরও একবার প্রমাণ করলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

পুরো দুনিয়া জুড়ে এ নিয়ে তোলপাড় – এটি কি একটা গোপন বার্তা? যদি তাই হয়, তাহলে কার জন্যে ছিল সেই সিক্রেট মেসেজ? রাশিয়া?

শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে হলো হোয়াইট হাউজকে। কিন্তু তাতে কি রহস্য কেটেছে, না-কি আরও ঘনীভূত হয়েছে?

মঙ্গলবার রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি টুইট করেছিলেন, তাতে ছিল ঐ শব্দটি – কভফেফে।

এমন একটি শব্দ, যার আভিধানিক কোন অর্থ নেই।

তিনি লিখেছিলেন, ‘ডেসপাইট দ্যা কনস্ট্যান্ট নেগেটিভ প্রেস কভফেফে’ – অর্থাৎ ‘অব্যাহত নেতিবাচক প্রেস কভফেফে সত্ত্বেও’।

শুধু ঐটুকুই – এরপর পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই প্রেসিডেন্ট হয়তো চলে গিয়েছিলেন বিছানায়, নিজের চিন্তার বিষয়টিতে সমাপ্তি না টেনেই।

সারারাত ধরে টুইটটি ছিল, আর এরপর বুধবার সকালেই বলা যায় ভেঙ্গে পড়ে ইন্টারনেট।

এ নিয়ে শুরু হয় নানা কৌতুক, টিক্কা-টিপ্পনী, আমোদ-হুল্লোড় – মজা করতে থাকেন পুরো বিশ্বের ইন্টারনেট জগতের মানুষেরা।

বুধবারে হোয়াইট হাউজের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক এ নিয়ে প্রশ্ন করেন প্রেস সচিব শন স্পাইসারকে। তিনি জানতে চান যে প্রেসিডেন্টকে নিয়ে সত্যিই উদ্বেগের কিছু আছে কি-না।

জবাবে মি. স্পাইসার ঐ টুইট নিয়ে যা বলেন, তাতে বরং রহস্য আরও বাড়ে।

মি. স্পাইসারের উত্তর ছিল: “না, প্রেসিডেন্ট এবং মাত্র অল্প কয়েকজনই জানেন তিনি সত্যিকার অর্থে কী বলতে চেয়েছেন”।

ছয় ঘণ্টারও বেশী সময় পর মি. ট্রাম্প নিজেই টুইটটি মুছে দিয়ে আরেকটি টুইট করেন – “কভফেফের সত্যিকার মানে কে বের করতে পেরেছে??? উপভোগ করুন”।

অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট নিজেও রহস্য খোলাসা করেননি, বরং সবাইকে খানিকটা খোঁচা মেরেছেন বলেই মনে হয়।

তবে এরই মধ্যে মাতামাতি যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।

কেউ কেউ টি-শার্ট বানিয়ে ফেলেছেন এই শব্দ লিখে, যা আবার বিক্রি হয়েছে ই-বে সাইটে। কেউ একজন ‘কভফেফে ডট ইউএস’ এই ডোমেন নাম কিনেও ফেলেন।

তৈরি হয় একের পর এক মেমে।

অনেক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী জানান যে তাঁরা ভালো করে ঘুমাতেও পারেননি, কারণ সবারই চেষ্টা ছিল কে কার চেয়ে এক কাঠি বেশী সরেস জবাব দিতে পারে।

আমেরিকার সেলেব্রিটি কমেডিয়ান জিমি কিমেল তাঁর টুইটে লেখেন: “যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশী বিষণ্ণ করেছে তাহলো আমি জানি আমি কখনোই কভফেফের চেয়ে হাস্যকর কিছু লিখবো না।”

আর এরপর ইউরোপ জেগে ওঠার পর শুরু হয় আরেক দফা হৈচৈ।

ঐ শব্দ নিয়ে টুইটার অ্যাকাউন্টও তৈরি হয় – ‘কভফেফে দ্যা স্ট্রং’ নামের এক অ্যাকাউন্ট থেকে জানানো হয় যে মি. ট্রাম্পের অদ্ভুতুড়ে শব্দ তাকে ডেকে পাঠিয়েছে।

হোয়াইট হাউজে প্রেস সেক্রেটারি শন স্পাইসার ‘কভফেফে’-এর কোন মানে করতে না পারলেও ধারণা করা হচ্ছে যে এটি ছিল টাইপের ভুল এবং প্রেসিডেন্ট আসলে “কাভারেজ” শব্দটি লিখতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু বাক্যটি শেষ না করেই তিনি টুইটটি পোস্ট করে দেন, আর কেউ হয়তো ভুলটি ধরিয়েও দেননি।

জানুয়ারি মাসে দায়িত্ব নেয়ার পরও মি. ট্রাম্প টুইটারে তাঁর ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে টুইট করেই যাচ্ছেন। তাঁর যুক্তি হলো, এর ফলে তিনি আমেরিকান জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন।

মাঝেমধ্যেই তিনি বিতর্কিত মন্তব্য করেন এসব টুইটের মাধ্যমে – বানান ভুলও করেন হরহামেশা।

কিন্তু তাঁর কোন টুইটই – যাকে এখন ট্রাম্পিজম বলা হচ্ছে – এতটা আলোড়ন তুলতে পারেনি, যতটা তুলেছে “কভফেফে”।

মি. ট্রাম্পের এই টুইট কিন্তু নজর এড়ায়নি নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের।

ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি অনুষ্ঠানে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি এ নিয়ে রীতিমতও মজা করেন। তাঁর মন্তব্য ছিল: “আমার মনে হয়েছিল এটা রাশানদের জন্যে একটা গোপন বার্তা”। সূত্র: বিবিসি বাংলা