এন্ড্রু কিশোর বার বার ফিরে আসতেন রাজশাহীতে, চিরবিদায় নিলেন এখানেই

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাসায় চিকিৎসা ছিলেন ক্যানসার আক্রান্ত এন্ড্রু কিশোর। দেশের প্রখ্যাত এ শিল্পী দুলাভাই ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি। ডা. বিপুল বিশ্বাস নিজেও একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ। কিন্তু তিনিও আর বাঁচাতে পারলেন না খ্যাতিমাণ শিল্পী এন্ড্রু কিশোরকে। মাটির টানে বার বার রাজশাহীতে ফিরে আসা এই বরেণ্য শিল্পীর শেষ বিদায় হলো এই রাজশাহীতেই। তার জন্মও ছিলো রাজশাহীর মহিষ বাথান  এলাকায়। তিনি চলে গেলেন এই মহিষ বাথান এলাকাতেই। তাকে সমাহিত করা হবে নগরীতেই।

গত বছরের ৯ সেপ্টেস্বর শরীরের নানা জটিলতা নিয়ে সিঙ্গাপুর চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তার শরীরে ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর থেকেই সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। ছয়টি ধাপে তাকে ২৪টি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। এরপর ১১ জুন রাতে একটি বিশেষ ফ্লাইটে তাকে দেশে আনা হয়। এরপর থেকে তিনি রাজশাহীতে আছেন।

১৯৭৭ সালে ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে প্লেব্যাকে যাত্রা শুরু করেন এন্ড্রু কিশোর; এরপর আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেও গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা গান উপহার দিয়েছেন শ্রোতাদের।

এন্ড্রু কিশোর আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সঙ্গীত পাঠ গ্রহণ শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর কিশোর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওতে তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কিশোর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধক গান শ্রেণিতে রাজশাহী বেতারের সঙ্গে তালিকাভুক্ত ছিলেন।

এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত মেইল ট্রেন চলচ্চিত্রের “অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তাঁর কেউ” গানের মধ্য দিয়ে। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী চলচ্চিত্রের “ধুম ধাড়াক্কা”। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রতীজ্ঞা চলচ্চিত্রের “এক চোর যায় চলে” গানে প্রথম দর্শক তার গান শুনে এবং গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি অন্যান্য প্লেব্যাক গান রেকর্ড করেন যেমন ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘ভালবেসে গেলাম শুধু’ এর মত জনপ্রিয় সব গান।

এন্ড্রু কিশোরের দুই ছেলে রয়েছে। তারা দুজনেই অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন। প্রথম সন্তানের নাম সংজ্ঞা আর দ্বিতীয় জনের নাম সপ্তক। কিশোর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। দীর্ঘ দিন ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। কিশোর ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতেই জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি মাটির টানে এই রাজশাহীতে বার বার ফিরে আসতেন। রাজশাহীর বিভিন্ন অনুষ্টানে তিনি গান গেয়ে দর্শকদের মাতিয়ে তুলেছেন বার বার। রাজশাহী ছাড়াও দেশ-বিদেশজুড়ে তার গানের কোটি কোটি  ভক্ত রয়েছে। 

এন্ড্রু কিশোর এছাড়াও একজন ব্যবসায়ী। ১৯৮৭ সালে তিনি বরাবর আহমাদ ইউসুফ, আনোয়ার হোসেন বুলু, ডলি জহুর, দিদারুল আলম বাদল, শামসুল ইসলাম নান্টু সাথে টিভি নাটক, বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য প্রযোজনার জন্য একটি বিজ্ঞাপন প্রতিষ্ঠান ‘প্রবাহ’ শিরোনামে উদ্বোধন করেন।

স/আর