এখনও নিবন্ধন করেনি পাঠাও উবারের মতো প্রতিষ্ঠান

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

আজকে থেকে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স দেয়া শুরু করেছে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। শুধুমাত্র পিক মি লিমিটেড ছাড়া এখন পর্যন্ত কোন রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সের আবেদন করেনি বলে জানিয়েছে বিআরটিএ।

গত ২০ জুন এক বৈঠকে পহেলা জুলাই থেকে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোকে লাইসেন্স দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিআরটিএ। নিবন্ধনের কোন সময়সীমা না থাকায় পরে যেকোন সময় নিবন্ধনের সুযোগ রয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এতে কী ধরণের সুবিধা পাওয়া যাবে?

মূলত পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি নজরদারিতে আনার পাশাপাশি বৈধতা দিতে এই লাইসেন্স দেবে বিআরটিএ।
সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক পরিচালক মাহবুব-ই রব্বানি বলেছেন, রাইড শেয়ারিং সেবাদাতা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে এতদিন নানা অভিযোগ থাকলেও বিআরটিএ কোন ব্যবস্থা নিতে পারছিল না। এখন নীতিমালার আওতায় সব প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাবে। পাশাপাশি পুরো প্রক্রিয়াটিকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনার মাধ্যমে সরকারও রাজস্ব আদায় করতে পারবে বলে তিনি জানান।

নিবন্ধনের পর রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলো আগের নিয়মেই পরিচালিত হবে। রাইড ডাকা বা রাইডে চলাচলের পদ্ধতিতে কোন পরিবর্তন হবেনা। তবে নীতিমালার আওতায় গ্রাহক সেবার মান উন্নত হওয়ার পাশাপাশি নিরাপত্তা অনেকাংশে নিশ্চিত করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বিআরটিএ।

লাইসেন্স না থাকলে কি হবে

যদি কোন রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান একবার বিটিআরসি-এর নিবন্ধন পায়,তাহলে তাদের প্রতিটি নীতিমালা মেনে চলতে হবে বলে জানিয়েছেন রব্বানি। যদি কোন প্রতিষ্ঠান নীতিমালার শর্ত ভাঙেন তাদের প্রাথমিকভাবে ওই প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করে দেয়া হবে। পাশাপাশি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করাসহ প্রচলিত আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানান তিনি।

রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পরিচালনার শর্তাবলী

রাইড শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা ২০১৭-এ পরিসেবাগুলো পরিচালনার জন্য ৮টি অনুচ্ছেদে মোট ৫০টি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়।

এর মধ্যে গ্রাহক সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু শর্ত এখানে উল্লেখ করা হলো:

১. একজন মোটরযান মালিক শুধুমাত্র একটি রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় সেবা প্রদানের অনুমোদন পাবেন।

২. ব্যক্তিগত মোটরযান রেজিস্ট্রেশন গ্রহণের একবছর পর এসব রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের আওতায় সেবা দিতে পারবে। তার আগে নয়।

৩. রাইড শেয়ারিং অ্যাপে এমন একটি এসওএস সুবিধা রাখতে হবে যার বোতাম স্পর্শের সাথে সাথে মোটরযান চালকের তথ্যাদি ও যাত্রীর জিপিএস লোকেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৯৯৯ নম্বরে চলে যাবে।

৪. বিআরটিএ-এর ওয়েবসাইট এবং রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অ্যাপসে অভিযোগ দায়ের ও নিষ্পত্তির গতিবিধি অনুসরণের সুবিধাসহ সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৫. রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, অন্য কোন পক্ষের কাছে ড্রাইভার বা যাত্রীর ব্যক্তিগত, সনাক্তযোগ্য কোন তথ্য প্রকাশ করবেনা। এবং এসব তথ্য বাংলাদেশের মধ্যেই প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণ করতে হবে। কোন তথ্য বাংলাদেশের বাইরে পাঠানো যাবেনা।

৬. রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এসব অ্যাপ্লিকেশনের ইন্সটলেশন ও সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে চালকদের প্রশিক্ষণ দেবে।

৭. যাত্রা শুরুর আগে ভ্রমণের সম্ভাব্য ভাড়া যাত্রীদের জানানোর মতো এবং চালকের ছবি, নাম, মোটরযানের নিবন্ধন নম্বর দেখানোর মতো সুবিধা অ্যাপে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৮. এসব অ্যাপে পরিচালিত প্রতিটি যাত্রা পুলিশ কন্ট্রোল রুম যেন প্রয়োজনে সরাসরি নজরদারি করতে পারে তার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৯. রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কল সেন্টার সপ্তাহে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকতে হবে।

১০. রাইড শেয়ারিং – এর অ্যাপ ও ওয়েব দুটি স্থানেই ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

১১. এছাড়া মোটরযান চালকের জন্য স্পষ্ট কিছু বিধি বিধান রয়েছে। সেগুলো হল: ট্রাফিক আইন মেনে চলা, যে কোনো দূরত্বে যাত্রী বহন করা, যাত্রীদের সঙ্গে সৌজন্য রক্ষা করে আচরণ করা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে রাখা, সার্ভিস পরিচালনার সময় ধূমপানসহ যেকোনো ধরণের নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি।

১২. যদি যাত্রীদের সঙ্গে এই পরিসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারও বিরোধ সৃষ্টি হয়, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকভাবে তা সমাধানের চেষ্টা করবে। যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে বিআরটিএ আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।

রাইড শেয়ারিং এর ভাড়া কিভাবে নির্ধারিত হবে

বিআরটিএ- এর রাইড শেয়ারিং নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী এই পরিসেবার আওতায় থাকা সব মোটরযানের ভাড়া ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস গাইড রাইন ২০১০ অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়ার বেশি হতে পারবেনা।

রাইড শেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে “এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট” এবং মোটরযান মালিকদের “রাইড শেয়ারিং মোটরযান এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট” পূরণ করে জমা দিতে হবে। এই সার্টিফিকেটগুলো পাওয়া যাবে বিআরটিএ-এর নিজস্ব ওয়েবসাইটে। বিআরটিএ তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে অনলাইনের মাধ্যমে তাদের লাইসেন্স প্রদান করবে বা বাতিল করবে।

আবেদনপত্রের সাথে এক লাখ টাকা এনলিস্টমেন্ট ফিস সেইসঙ্গে ট্রেড লাইসেন্স, ইটিআইএন সার্টিফিকেট, ভ্যাট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

এই সার্টিফিকেটের মেয়াদ এক বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগে ১০ হাজার টাকা ফিস দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করা যাবে। তবে এই সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে অথবা তথ্যে কোন পরিবর্তন করতে গেলে এক হাজার টাকা ফি প্রদান করতে হবে।

এছাড়া মোটরযান এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেটের জন্য মোটরযানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফিটনেস সার্টিফিকেট, ট্যাক্স টোকেন, মালিক ও চালক উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এবং গাড়ির মালিকের টিআইএন সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।

এই সার্টিফিকেটের মেয়াদ তিন বছর। মেয়াদ শেষে মোটরসাইকেল ৫০০ টাকায় এবং গাড়ি এক হাজার টাকায় এই সার্টিফিকেট নবায়ন করতে পারবে।

এই সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে এক হাজার টাকা ফি দিতে হবে। সংশোধনের জন্য দিতে হবে ৫০০ টাকা।

আগে কেন এই নীতিমালা কার্যকর করা যায়নি

মূলত ২০১৬ সালের শেষ দিক থেকে ঢাকায় রাইড শেয়ারিং অ্যাপের ব্যবহার শুরু হয়। সে সময় সরকার এই পরিষেবাকে বৈধতা না দিলেও ব্যাপক জনপ্রিয়তার মুখে বন্ধ করতে পারেনি। এর পরিবর্তে একটি নীতিমালার আওতায় পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বৈধতা দেবে বলে জানিয়েছিল বিআরটিএ।

সে লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি বিআরটিএ-এর প্রণীত ‘রাইড-শেয়ারিং সার্ভিস নীতিমালা ২০১৭’ অনুমোদন করে সরকার, যা ওই বছরের ৮ মার্চ থেকে কার্যকরের কথা ছিল।

সে সময় ১৬টি কোম্পানির আবেদন করলেও নীতিমালার কিছু শর্ত পূরণ না করতে না পারায়, তাদের কাউকেই লাইসেন্স দেয়া সম্ভব হয়নি। যদিও তারা লাইসেন্স ছাড়াই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে।