এক একটা আঘাত এক একটা শক্তি

তুমি যত আঘাত পাবে, তুমি তত এগিয়ে যাবে। এক একটা আঘাত তোমার জীবনে এক একটা বড় বড় অর্জন এনে দিতে পারে। এটাই পৃথিবীর সহজাত নিয়ম। যে মানুষটা যত কোনঠাসা সে মানুষটার সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পুঞ্জীভূত শক্তিটা তত বেশি সক্রিয়।

মানুষ যত আঘাত পায় তত সে আঘাতের বিরুদ্ধে শক্ত মনোবল নিয়ে দাঁড়াতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাসে যে মানুষটা যত প্রতিকূলতার সম্মুখীন  হয়েছে ততটাই সে অনুকূলতা তৈরী করতে পেরেছে। নিউটনের তৃতীয় সূত্রটা বলছে প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া আছে। এটা একটা থিওরিটিক্যাল ধারণা, যেটি প্রয়োগের মাধ্যমে অনেক নতুন সৃষ্টি ও ভাবনা সভ্যতার বিকাশে এগিয়ে গেছে।

মানুষের আঘাতটা শারীরিক ও মানসিক দুইভাবে ঘটতে পারে। তবে শারীরিক আঘাতের চেয়ে মানসিক আঘাতের ধাক্কাটা অনেক বেশি। আবার মানসিক আঘাতের বিপরীতে মানসিক প্রতিঘাত ও প্রতিরোধের শক্তিটা সমানের থেকেও অনেক বেশি। মানুষ যখন অন্যের দ্বারা অপমানিত হয়, তখন সেই অপমানের প্রতিরোধক শক্তি হিসেবে একটা ইতিবাচক জেদ তার মধ্যে গড়ে উঠে। যেটি তাকে আরও বেশি সক্ষম ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

 

একসময় ক্রীতদাস প্রথা প্রচলিত ছিল। একদল মানুষ তাদের গোষ্ঠীবদ্ধতা ও ক্ষমতার মাধ্যমে আরেকদল মানুষকে দাসত্বে পরিণত করতো। মানুষের উপর মানুষের এমন আঘাত মানুষকেই প্রভাবিত করেছে। ১৯৬০ সালে অ্যালেক্স হেলি পূর্বপুরুষদের মুখে মুখে সংরক্ষিত তার শেকড়ের গল্পের সন্ধান শুরু করেন। ছিয়াত্তরে প্রথম প্রকাশিত হল শেকড়ের সন্ধান, ‘রুটস: দ্য সাগা অব অ্যান আমেরিকান ফ্যামিলি’। ক্রীতদাসদের কাহিনী। খুব নির্মম আর মর্মস্পর্শী। দগ দগে আগুন পোড়ানো কপাল যেন পোড়া কপালের মতো। সভ্য ও আধুনিক বলে যে মানুষরা নাক উঁচিয়ে চলতো তাদের মুখের আড়ালের মুখোশটা উন্মোচিত হলো খুব নগ্নভাবে। কুন্টার মতো ক্রীতদাসরা তাদের তীব্র যন্ত্রণার কথা পাথরে খোদাই করে লিখেও রেখেছিল। সেগুলো  লেখা ছিলোনা সেগুলো  ছিল ইতিহাসের অন্ধকারের বিরুদ্ধে একটা একটা দ্রোহ বিদ্রোহ মনের প্রতিবাদ। কোমর কষে  রুখে দাঁড়ানো এক একটা আঘাতে গড়ে উঠা প্রতিঘাত।  আলেক্স হেলি খুঁজে পেয়েছিলেন সে দীর্ঘশ্বাসগুলো।

১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘পৃথিবী আজ দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে শোষক শ্রেণি, আরেক ভাগে শোষিত। আমি শোষিতের দলে।’ পৃথিবীর সব মহামানবরা এভাবেই সব সময় শোষিতের পক্ষে ছিলেন। শোষকরা আঘাত দিয়ে দুর্বল হয়ে যায়। পালিয়ে বেড়ায়। আর শোষিতেরা আঘাতের পর আঘাত খেতে খেতে আঘাতকে একদিন আঘাত করে। একটা জেদ মানুষকে চেপে ধরে উপরে টেনে নিয়ে যায়। সে উপরটা ধরার মতো সাহস তখন আর কারো থাকেনা। আঘাত মানুষকে বড় করে। বড়র বড় বানায়। এভাবেই আঘাতকারীরা তার উপযুক্ত জবাব একদিন পেয়ে যায়। তখন তারা আঘাত পাওয়া মানুষটার পিছনে এসে দাঁড়ায়। সেটাকে আর অস্বীকার করার মতো শক্তি তাদের তখন আর থাকেনা।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন