এক অটোচালকের মানব সেবা!

মঞ্জুরুল আলম মাসুম, বাগাতিপাড়া:
আজিজুর রহমান। বয়স ৬২ বছর। পেশায় একজন অটোচালক। এর আগে তিনি এলজিইডি এর মাস্টার রোলে রোলার ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অটোচালক হয়েও তিনি মানব সেবার এক ব্রত নিয়েছেন। তার এ কাজ রীতিমতো অন্য চালকদের পাশাপাশি যাত্রীদেরও অবাক করেছে। সাড়া ফেলে দিয়েছেন এলাকায়।

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় কসবে মালঞ্চি বসবাস করেন আজিজুর রহমান। তার স্থায়ী ঠিকানা একইজেলার লালপুর উপজেলায়। বৈবাহিক সুত্রে বাগাতিপাড়ায় আসেন। তার চার সন্তান। বড় মেয়ে হ্যাপীকে এম এ পাশ করিয়ে পাত্রস্থ করেছেন। তার ছোট আইরিনকেও বিএ পাশ করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে শারিরীক প্রতিবন্ধী ছেলে বাপ্পী এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং ছোট ছেলে অপি এইচএসসি পরীক্ষার্থী। স্ত্রী ফরিদা পারভীন আর দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি সংসার চালাচ্ছেন অটো চালিয়ে । বৃহস্পতিবার তমালতলা বাজারে কথা হয় তার সাথে। তিনি জানালেন তার জীবনের গল্প।

রোলার ড্রাইভারের চাকরি শেষে তিনি গচ্ছিত টাকা দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। আর অবশিষ্ট টাকা দিয়ে কিনেছেন একটি অটো। তিনি তার অটোর নাম দেন জনকল্যাণ এন্টারপ্রাইজ। অটো চালিয়ে তার সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা আয় হয়। উপার্জিত ওই টাকা দিয়ে সংসার আর ছেলেদের পড়ার খরচ চালান।

অনেকদিন থেকেই মানব সেবা করার এক অদ্ভুত নেশা আজিজুর রহমানকে পেয়ে বসে। নিজের স্বল্প আয়ের পেশার মধ্যে খুঁজে পান মানব সেবার সন্ধান। তিনি বেছে নেন সপ্তাহে একদিন বিনা ভাড়ায় যাত্রী বহন করবেন। তারপর থেকেই শুরু করেন এ কাজ। আড়াই বছর ধরে তিনি একাজ করছেন। এখন বাগাতিপাড়া-নাটোর, বাগাতিপাড়া-আব্দুলপুর-লালপুর সড়কের নিয়মিত যাত্রীরা সকলেই জানেন আজিজুরের ফ্রি সার্ভিসের খবর। ফ্রি সার্ভিসের দিনে তিনি ভাড়া নেন না। এরজন্য সপ্তাহে নির্দিষ্ট কোন দিন রাখেননি তিনি। তবে শুক্রবার বিশ্রাম নেন। আর অন্য ছয় দিনের একদিন ফ্রি সার্ভিস দেন। ওই দিন সকাল থেকেই অটোর সামনে লিখে রাখেন আজকে ফ্রি সার্ভিস।

তার এ মানবসেবা এখন সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিন ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, ষাটোর্দ্ধ বৃদ্ধ আর দরিদ্র গর্ভকালীন ও প্রসুতি মায়েদের ফ্রি সেবা দেন যে কোন দিন। সময় পেলেই স্কুল গেটে অপেক্ষা করেন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিনা ভাড়ায় বাড়ি পৌছে দিতে। আর নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে রেখেছেন হাসপাতালে। কল পেলেই ছুটে যান সেখানে। স্থানান্তরিত জরুরী রোগী পৌঁছে দেন শহরের অন্য হাসপাতালে। ফ্রি সেবা পাওয়া মানুষগুলোর দোয়া তার যেন বড় পাওয়া। তবে কিছুদিন থেকে শরীর তাকে সমর্থন করছে না। মাঝে মাঝে অসুস্থ থাকছেন এই ব্যতিক্রমী মানুষটি। তাই সেবা কার্যক্রমও মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে পড়ছে।

ষাটোর্দ্ধ বয়সের এই মানুষটি কথা হলো, মানব সেবা করার ইচ্ছা থাকলে যে কোন কাজের মাধ্যমেই তা করা যায়। সে ছোট-বড় যাই হোক। তার ইচ্ছা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মানুষকে এই সেবা দেওয়ার।

স/অ