একতরফা নির্বাচনের তফসিল মানি না: গণতন্ত্র মঞ্চ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক :
তারা বলেছেন, আমরা একতরফা নির্বাচন মানি না।

বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) হরতালের সমর্থনে মিছিল শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন। একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল-সন্ধ্যা হরতালে পালন করছে ছয়টি রাজনৈতিক দলের এ জোট।

সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বুধবার (১৫ নভেম্বর) এ সরকারের নিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন যে শেষ পর্যন্ত সরকারেরই তল্পীবাহক থাকবে, সেটি আমরা আগেই বলেছিলাম। কালকে তারা সেটির প্রমাণ দিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সাহেব গতকাল বললেন, নির্বাচন নাকি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। আপনাকে নাকি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতেই হবে। কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, নির্বাচনের পরিবেশ নেই। নির্বাচন যেমন একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা, তেমনি সংবিধানেই বলা আছে, নির্বাচনের যদি পরিবেশ না থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশন তফসিল স্থগিত করতে পারে, নির্বাচন পিছিয়ে দিতে পারে। সেই কাজ আপনারা (ইসি) করেননি।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ না থাকা সত্ত্বেও সরকার তথাকথিত সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলে আজকে একটি একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচন করতে চাচ্ছে। সে ভোটকে আপনি (সিইসি) জায়েজ করার ঘোষণা দিলেন। অনেক জ্ঞানী গুণী আপনার চাকরি জীবনের সুনামের ওপর ভিত্তি করে আপনার নাম প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন। আজকে নিজের সমস্ত সুনাম ধ্বংস করে এ সরকারের দালাল হিসেবে আপনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলেন। জনতার আদালতে আপনাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ এই নেতা আরও বলেন, আমরা একতরফা নির্বাচন মানি না। আর এ একতরফা নির্বাচনের জন্য যে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, আমরা সেটাও মানি না। দেশের জনগণ তার ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কারের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবেই করবে। সে লক্ষে আন্দোলন চলবে।

সরকার নানাভাবে আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করেছে অভিযো করে তিনি বলেন, নিজেদের এজেন্ট দিয়ে আপনারা (সরকার) পরিকল্পিত উসকানি, সহিংসতা তৈরি করে সমস্ত দোষ বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে এক মহা ক্র্যাকডাউন চালিয়েছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তাদের একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত প্রতিদিন শত শত নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৫ হাজারের বেশি গ্রেপ্তার। কারাগারে জায়গা হবে না। নতুন নতুন কারাগার বানাতে হবে। যদিও আর এত অল্প সময়ে বানাতে পারবেন না। কাজেই বাংলাদেশকে পুরোটা কারাগার বানিয়েছেন। মানুষ এ কারাগার ভাঙবে।

জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, এ সরকার কেবলমাত্র নিজের গদি টিকিয়ে রাখার জন্য বাংলাদেশকে নিয়ে আজকে বাজি ধরেছে। তারা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সার্বভৌমত্বের দিক থেকে বাংলাদেশকে হুমকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। আজকে দ্রব্যমূল্য মানুষের পেটে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এ সরকারের কোনো মাথা নেই। তারা লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করে, আর শ্রমিক মজুরি চাইলে তাকে গুলি করে। এ হচ্ছে ফ্যাসিস্ট সরকার। এদের ক্ষমতা থেকে নামাতেই হবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, বুধবার এদেশের গণতান্ত্রিক মানুষের নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের জনদাবি উপেক্ষা করে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। আমরা এ নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগে বাধ্য করার মাধ্যমে এ ফ্যাসিস্ট সরকারের অপসারণ করে দেশে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবো।

নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের ফ্যাসিবাদী নৈরাজ্যকর অবস্থাকে বহাল রেখে চোখ কানা, দল কানা নির্বাচন কমিশন একটি অশুভ নির্বাচনের পথে হাঁটছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই বাংলাদেশের জনগণ ২০১৪, ২০১৮  সালের প্রতারণার নির্বাচন দেখেছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ কোনো ভাওতাবাজি মেনে নেবে না। তাই এ নির্বাচন কমিশনকে বলতে চাই, যে তফসিল ঘোষণা করেছ, সেটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করো। নির্বাচন স্থগিত করো, সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করো।

সভাপতির বক্তব্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান বলেন, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা দেশের মানুষকে জানিয়ে দিতে চেয়েছিলাম, এ সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা নেই। সরকার তার বিভিন্ন এজেন্ট দিয়ে পরিকল্পিতভাবে সে সমাবেশে সহিংসতা সৃষ্টি করে এবং তার দায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর চাপিয়ে দেয়। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে ভয় দেখিয়ে তারা বুধবার তাদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে একটি একতরফা নীল নকশার নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য আবার একটি তফসিল ঘোষণা করেছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এ তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এ নির্বাচন হতে দেবে না। আপনি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সে নির্বাচন রাতে হবে না দিনে হবে, সেটা বলেননি। ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাতে ভোট হয়েছিল। এবার জনগণ রাতে ভোট দিতে চায় না। তারা দিনে ভোট দিতে চায়। কিন্তু এ সরকারের অধীনে আর দিনে ভোট হবে না।

এ সময় ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম, সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাখরুল ইসলাম নবাব, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমনসহ গণতন্ত্র মঞ্চের অধীন বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে শেষে তারা পুরনায় পল্টন অভিমুখে মিছিল করেন।