একটি খুদে বার্তা ও সাকিবের চিঠি

এর আগেও দুইবার নিউজিল্যান্ড সফরে যাননি সাকিব আল হাসান। তবে দুইবারই চোট-আঘাতের জন্য। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চের টেস্ট সফরে যেতে দেয়নি হাতের আঙুলের চোট। কুঁচকির সমস্যা কাটিয়ে উঠতে না পারায় চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলের ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজও খেলতে যাওয়া হয়নি। তুলনায় এই নিয়ে তৃতীয়বার না যেতে চাওয়াই বরং দৃষ্টি কাড়ছে বেশি। এবার যে এই অলরাউন্ডার দেখাচ্ছেন পারিবারিক কারণ!

তাঁকে রেখেই দুই টেস্টের সফরের জন্য বাংলাদেশ দল ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর চিঠি দিয়ে সে কারণটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন সাকিব। এমন নয় যে তিনি আগেভাগেই তা জানিয়ে রাখেননি। তবে সেই জানানোটা মৌখিক ছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান তাই গত পরশু জানিয়ে দেন যে চিঠি দিয়ে জানালেই কেবল বিবেচনা করা হবে। তাঁর ওই বক্তব্যের পর সাকিবও কালক্ষেপণ করেননি। তবে নিউজিল্যান্ডে যেতে অনিচ্ছুক সাকিবের আবেদন নিয়ে গতকাল সারা দিনেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বরং বিসিবি সভাপতি কী সিদ্ধান্ত দেন, সবাই তাকিয়ে সেদিকেই।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী থেকে শুরু করে ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির প্রধান আকরাম খান ও মুখপাত্র জালাল ইউনুস, সংবাদমাধ্যমকে বলা প্রত্যেকের কথার সুরই অবিকল এক, ‘আমরা সাকিবের চিঠি পেয়েছি। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এখনো। সিদ্ধান্ত যা নেওয়ার, বোর্ড সভাপতি নেবেন।’ নাজমুলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় কর্তারা থাকলেও সাকিবকে ছাড়াই নিউজিল্যান্ড যাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি তাঁর সতীর্থরা আগে থেকেই নিয়ে রেখেছেন বলে জানা গেছে। সতীর্থদের সবাই জানেন যে বাংলাদেশ দল যখন নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশে দেশ ছাড়বে, কাছাকাছি সময়ের মধ্যে সাকিব উড়বেন যুক্তরাষ্ট্রের পথে।

পুরো দলের যা জানা, তা নির্বাচকদেরও অজানা ছিল না। তবে এই ঘটনায় সমন্বয়হীনতার অভিযোগের তীর ছুটে যাচ্ছে তাঁদের দিকেও। এর আগে কভিড আক্রান্ত মা-বাবার পাশে থাকতে জিম্বাবুয়ে সফর থেকে ফিরে আসা মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে তাঁরা ঠিকমতো যোগাযোগ করেননি বলে অভিযোগ আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের জৈব সুরক্ষা বলয়ে যথাসময়ে ঢুকতে না পারা মুশফিকের পাঁচ ম্যাচের সেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলা হয়নি। এবার সাকিবের ক্ষেত্রেও নির্বাচকদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে দলসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। তাঁদের বলা হয়েছিল, এই অলরাউন্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে যে তিনি নিউজিল্যান্ডে যাবেন কি না। তাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তবে ফোন করেননি। নির্বাচকদের একজন টেক্সট মেসেজ পাঠিয়েই কাজ সারেন। সাকিবও পাল্টা টেক্সটে জানিয়ে দেন, ‘নট অ্যাভেইলেবল’।

সাকিব নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়ার পরও নির্বাচকদের তাঁকে দলে রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে স্বাভাবিক। তাঁরা আগেভাগেই শীর্ষ মহলে বিষয়টি জানালে দল ঘোষণার পর এ রকম অস্বস্তিকর পরিস্থিতিও এড়ানো যেত। কিন্তু তা না হয়ে এখন চলছে আরেক প্রস্ত নাটক। যদিও তিন সংস্করণে খেলার সম্মতি দিয়েই বিসিবির নতুন কেন্দ্রীয় চুক্তিতে সই করেছিলেন সাকিব। অবশ্য একই কাজ করা মাহমুদ উল্লাহ টেস্ট থেকে অবসরে গেছেন। এমনও নয় যে সাকিব চোট ছাড়া অন্য কোনো কারণে কখনো সরে দাঁড়াননি। ২০১৭ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাননি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের ছুটি নিয়ে ঝরঝরে হওয়ার জন্য। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ প্রস্তুতির জন্য আইপিএল খেলবেন বলে গত মে মাসে যাননি শ্রীলঙ্কায় দুই টেস্টের সফরে।

এবার নিউজিল্যান্ডে দুই টেস্টের সফরেও যাবেন না ধরে নিয়ে এগোচ্ছিল মমিনুলদের প্রস্তুতি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর ফিল্ডিং কোচের দায়িত্ব পাওয়া মিজানুর রহমানের কথায়ও সেটি বুঝে নিতে সমস্যা হলো না, ‘এটি যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এই বিষয়গুলো আসলে দলে কোনো প্রভাব ফেলে না। কারণ অন্যরা নিজের ও দলের পারফরম্যান্স নিয়েই চিন্তা করে। তাই যদি কেউ না যায়, তাকে নিয়ে চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই।’

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ