এইচএসসি পরীক্ষার মধ্যেই জয়পুরহাটে ঐতিহ্যবাহী মেলার নামে চলছে অশ্লীলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, জয়পুরহাট:

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা  চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে। এরমধ্যে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলায় গোপীনাথপুর মন্দিরের আয়োজনে দোল পূর্ণিমার মেলা চলছে। এ পরীক্ষার মধ্যেই গোপীনাথপুর মন্দিরের দোল পূর্ণিমার মেলার নামে চলছে অশ্লীল যাত্রাপালা, সার্কাস। তাছাড়াও চলছে বেশ কয়েকটি পুতুল নাচ ও যাদু প্রদর্শনী-ছায়াবাজি।

মেলার যাত্রা ও পুতুল নাচের শব্দে ব্যহত হচ্ছে লেখাপড়া। এছাড়াও স্কুল মাঠ দখল করে অসংখ্য দোকান দেওয়ায় এলাকাবাসীরা চরম ক্ষুদ্ধ। এছাড়াও অভিযোগ আছে মেলায় ক্রেতাদের কাছে অতিরিক্ত টোল আদায় সহ নানা অনিয়ম।

প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো এই ঐতিহ্যবাহী দোল পূর্ণিমার মেলার নামে অশ্লীলতায় দিনদিন হিন্দু ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত হানছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির কমিটির ব্যক্তিদের নিয়ে মেলা পরিচালনা করার কথা থাকলেও বেশির ভাগ অন্য ধর্ম্বালম্বী স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপেই চলছে এ মেলা।

গত মাসের ২০ মার্চ দোল পূর্ণিমার দিন থেকে শুরু হয়েছে এ মেলা। মূল মেলা ১৩ দিনের হওয়ার কথা থাকলেও মেলা চলে মাস ব্যাপী। গত ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ মেলার মধ্যেই উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মেলার যাত্রা ও পুতুল নাচের শত মাইকের শব্দে লেখাপড়া ব্যহত হয়। অশ্লিল নাচ-গানের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন হাজার-হাজার কিশোর, যুবকসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। অবিলম্বে এসব অশ্লিল যাত্রাপালা ও পুতুল নাচ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বলেন, মেয়েদের বিশেষ করে বেশী সমস্যা হয়। কারণ এ মেলার আগত ছেলেরা ছাত্রীদের টিস করে। এতে আমাদের বাবা-মা স্কুলে আসতে দিতে চায় না। স্কুল ছুটি দিলে শিক্ষকরা আমাদের এগিয়ে দেয়। মেলার যাত্রা, সার্কাস ও পুতুল নাচের মাইকের শব্দে আমাদের পড়াশোনা সমস্যা হয়। আবার আমাদের স্কুলের মাঠে তারা চুলা তৈরি করে রান্না করে। এই রান্নার ধোঁয়া আমাদের ক্লাস রুমের ভিতরে আসে। স্কুলের পাশেই যাত্রা, সার্কাস ও পুতুল নাচের মঞ্চ। তাছাড়া স্কুল মাঠের পাশে প্রসাব, পায়খানা, নানা আবর্জনার গন্ধে আমরা খুবই বিব্রতকর অবস্থায় আছি। তাই মেলাটি পাশেই শত শত বিঘা জমি আছে সেখানে স্থানাস্তর করলে আমাদের ভালো হবে।

গোপীনাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রুহুল আমীন বলেন, দিনের বেলা তথা স্কুল সময়ে মাইকের শব্দের গান অটোমেটিক শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট করবে। আর আমাদের স্কুল মাঠের কোন প্রাচীর নেই। যার জন্য মেলায় আসা দোকানদাররা এবার এ মাঠে এসে দোকান দিয়েছে, মাঠে চুলা তৈরি করে রান্না করে, যাতায়াত সহ বিভিন্ন কাজ করে ফলে আমাদের ব্যাপক সমস্যা হয়।

গোপীনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, স্কুলের গেটে ও মাঠেই দোকান ও স্কুল প্রাঙ্গনেই মেলার লোকজন চলাচল করে। কমলমতি শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়া করতে নানা সমস্যা হয়। অভিভাবকরা স্কুলে আসতে দিতে চায় না।

গোপীনাথপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আরজুমান্দ বানু বলেন, স্কুল মাঠ ফাঁকা হওয়ায় এখানে ট্রাক, ভুটভুটি সহ অনেক গাড়ি এসে ভিড় জোমায়। দিনের বেলা লোকজনের ভিড়ের কারণে মেয়েরা ব্যাপক সমস্যার মধ্যে চলাচল করে।

মন্দিরের সেবায়েত ও মেলা মালিক রনেন্দ্র কৃষ্ণ প্রিয়া খোকন বলেন, গত ২০ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত আমার মেলার পারমিশন ছিল। এ মেলা চলাকালীন সময়ে প্রশাসন যাত্রা, সার্কাসের পারমিশন দিয়েছে। আমি কোন যাত্রা, সার্কাসের পারমিশন চাইনি। একটি যাত্রা ও একটি সার্কাস চালানোর পারমিশন স্থানীয় লোকজন ও সরকার দলীয় প্রভাবশালীরা নিয়েছে এবং থানা পুলিশ ও প্রশাসনকে মানেজ করেই চালাচ্ছে। আর যেসব অবৈধ পুতুল নাচ ও অন্যান্য গুলো চলছে সেগুলোর কোন পারমিশন নাই। এ মেলা ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত চলার অনুমতি আবেদন করেছি।

এ বিষয়ে আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালাহ্উদ্দিন আহমেদ বলেন, পুলিশ নিয়ে আমি নিজে মেলায় গিয়ে অবৈধ অশ্লিল যাত্রাপালা, পুতুল নাচ ভেঙ্গে দিয়ে এসেছি। তারপরেও যদি আবার গড়ে ওঠে তাহলে আমি জরুরী ব্যবস্থা নেব।

পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান বলেন, গোপীনাথপুর মেলা একটি হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী মেলা। প্রতি বছর এ মেলা হয়ে থাকে। এ মেলায় যদি কোন অশ্লিল নৃত্য বা কোন অনিয়মের অভিযোগ আসে তাহলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স/অ