ঋতু রাজ বসন্তে বাঁধন হারা মন


হাবিব আহমেদ :
ফুল ফুটুক আর নাইবা ফুটুক আজ বসন্ত। ঋতু পরিবর্তণের পালায় আজ পহেলা ফাল্গুন অর্থাৎ ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। একই দিনে বিশ্ব ভালবাসা দিবস। দুই মিলে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা প্রাণ। দখিনা হাওয়ায় কুসুম বনের বুকের কাঁপনে, চঞ্চল মৌমাছিদের ডানায়, পল্লব মর্মরে, বিবর্ণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে ওঠার সময়ে আর বনতলে কোকিলের কুহুতান জানান দিচ্ছে- ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে..।

ঋতুরাজ বসন্তকে নিয়ে কবি লিখেছেন কবিতা, গীতিকার লিখেছেন গান, আর শিল্পীর কণ্ঠে বেজে উঠে, ‘আহা, আজি এ বসন্তে, কত ফুল ফোটে, কত বাঁশি বাজে, কত পাখি গায়, আহা আজি এ বসন্তে…। বসন্ত মানে প্রাণের উচ্ছ্বাস, আর বাঁধন ছেড়া মন। বসন্ত শুধু চারপাশের প্রকৃতিতেই নয়, মানুষের মনেও জাগায় প্রাণের ছোঁয়া। শীতের জীর্ণ-রুক্ষতাকে পেছনে ফেলে প্রকৃতিকে নতুন রূপে সাজাতে শুভেচ্ছা বার্তা নিয়ে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। শীতের রুক্ষ প্রকৃতির গাছে গাছে নতুন পাতা। আম গাছে সোনালী মুকুল। বাতাসে মুকুলের মোহনীয় ঘ্রাণ।

মন পাগল করা সুরে পাখি গায় গান। আর বাতাসে ভাসে নানা রংয়ের মিষ্টি ফুলের ঘ্রাণ। প্রজাপতিরা রঙিন ডানা মেলে জানান দিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্তের খবর। বনে বনে, মনে মনে রং ছড়াতে শুরু করেছে হৃদয় উচাটন করা এ ফাগুন। বসন্তে হৃদয় বেদি আর প্রজাপতির রঙিন পাখা, মৌমাছির গুনগুনানি, বৃক্ষ-লতা-ফুলে, পত্র-পল্লবে, নবযৌবনের বান।

বাংলা ফাল্পুন ও চৈত্র, এ দুই মাস নিয়ে ঋতুরাজ বসন্ত। ফাল্পুন বাংলা বছরের ১১তম মাস। মাসটিতেই গাছে গাছে ফোটে শিমুল, সোনালু, পলাশ, গাঁদা, আম, লিচুর মুকুলসহ নানা জাতের রঙিন ফুল। শীতের শুষ্কতায় ম্লান প্রকৃতিকে সজীব করে তুলতে মানুষের মনে সজীবতা দিতে বসন্তের প্রয়োজন পড়ে। মধুর বসন্ত আসে শীতের জীর্ণতা থেকে, বের করে প্রশান্তি দিতে। বসন্ত মানে প্রকৃতির চারিপাশে দোলা। শীতের রুক্ষ, হিমেল দিনের অবসান ঘটিয়ে জেগে উঠার নাম বসন্ত।

এমন আবহে অজান্তেই হৃদয়ের গহীনে বেজে ওঠে কবি গুরুর গান।
ফাগুন, হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান-
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান-
আমার আপনহারা প্রাণ, আমার বাঁধন-ছেঁড়া প্রাণ।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বসন্তের আগমনকে ঘিরে লিখেছিলেন, ‘এলো বনান্তে পাগল বসন্ত/বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে, চঞ্চল তরুণ দুরন্ত। ’

শীতের স্পর্শে ঘুমিয়ে পড়া মালতী-রজনীগন্ধা, পলাশ-জবা, কৃষ্ণচূড়া আন্দোলিত হচ্ছে দখিনা বাতাসে। বাতাসে ভাসছে আমের মুকুলের ঘ্রাণ। প্রকৃতির এই রূপে মুগ্ধ কবিগুরু লিখেছেন, ‘ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে।
বসন্ত-বন্দনায় কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, ‘হয়তো ফোটেনি ফুল রবীন্দ্রসঙ্গীতে যতো আছে/হয়তো গাহেনি পাখি, অন্তর উদাস করা সুরে/…তবুও ফুটেছে জবা, দুরন্ত শিমুল গাছে গাছে/তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্ত পথিক।

বসন্ত প্রাণের ঋতু, প্রেমের ঋতু। মাতাল করা নানা ফুলের সৌরভে মানব হৃদয়ে পূর্ণতা পায় প্রেমের অনুভূতিতে। আর পূবালী হাওয়ার দাপট বাড়তে থাকা মানেইতো শীতের বিদায়, বসন্তের আগমন। ফুলের ঘ্রাণ, সবুজ পাতা দেখে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে মনো-প্রাণ।

মহামারি করোনার কারণে গত তিন তেমন অনুষ্ঠানমালা না হলেও এবার গ্রামের বটতলায় বসছে মেলা, বিনোদন কেন্দ্রে উঠকে মুখর হয়ে, জারিসারি, ভাটিয়ালি গানের আসর বসবে। এবার প্রাণের বসন্তকে জমকালো আয়োজনে পালন করা হবে। বসন্ত বরণ হবে ফুল আর হলুদ শাড়ি দিয়ে। যার কারণে বসন্ত এলে, একটি গান যেনো প্রাণের স্পন্দন হিসাবে সবাই গেয়ে উঠে, হলুদিয়া পাখি সোনারো বরণ, পাখিটি ছাড়িল কে..।

সময় ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। ফুলের দাম উঠে যায় আকাস ছোঁয়া তারপরও তরুণীরা খোঁপায় গাঁদা-পলাশ ফুলের মালা গুঁজে বাসন্তী রঙ শাড়ি পরে, তরুণরা পাঞ্জাবি-পাজামা কিংবা ফতুয়ায় খুঁজে নেয় শাশ্বত বাঙ্গালিয়ানা।