উৎকণ্ঠা কাটছে না, ৩০০ পরিবারকে সরানোর প্রস্তুতি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

মিয়ানমার সীমান্তের পরিস্থিতির কারণে উৎকণ্ঠা কিছুতেই কাটছে না। গতকাল সোমবারও সীমান্ত এলাকায় ভারী গোলাবর্ষণের শব্দ শোনা গেছে। এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম থেকে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র সরানোর পর ৩০০ পরিবারকে সরানোর প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের নির্দেশে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ও পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম গতকাল সোমবার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তাঁরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বাসিন্দা এবং প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার তুমব্রু সীমান্ত এলাকা ত্যাগ করার পরপরই শুরু হয় গোলাগুলি। ঘুমধুম ইউনিয়নের কোনারপাড়া শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পূর্ব পাশের পাহাড়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) চৌকি। সেই চৌকির পাশে পাহাড়ের নিচে ওই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর শক্ত অবস্থান। সেখান থেকেই মুহুর্মুহু গোলাগুলি ও ভারী অস্ত্রের গোলার শব্দ আসছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত গোলাগুলি চলেছিল। এর আগে সকাল থেকে সীমান্তের দুটি পয়েন্ট থেকে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ আসে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘সীমান্তের কাছাকাছি থাকা পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দারা ঝুঁকির মধ্যে আছে। তাই প্রথম পর্যায়ে ৩০০ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার সব প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি। প্রয়োজন হলে পর্যায়ক্রমে অন্য পরিবারগুলোকেও সরিয়ে নেওয়া হবে। ’

পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষায় বিজিবি সদস্যদের সক্ষমতা রয়েছে। এর পরও জনগণের জান-মাল রক্ষায় এ এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ’

সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রবিবার রাতে সামরিক বিমান এবং ফাইটার হেলিকপ্টার আকাশে উড়ে নিচের দিকে গোলা ছুড়েছে। এতে পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ কারণে তুমব্রু বাজার তেমন জমেনি। সব দোকানপাটও খোলেনি। বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেছেন, টানা এক মাসেরও বেশি সীমান্তে নাজুক পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল হক জানান, তাঁর বাড়ি কোনারপাড়া থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে হলেও গোলাবর্ষণের বিকট আওয়াজ তিনি শুনতে পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড বোমাবর্ষণের আওয়াজে সারা রাত আমরা উৎকণ্ঠায় কাটিয়েছি। আজ (গতকাল) সকাল ৯টা পর্যন্ত সে দেশের সরকারি বাহিনী ও সরকারবিরোধী গেরিলাদের মধ্যে হামলা-পাল্টাহামলা অব্যাহত ছিল। ’

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশ পেয়ে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। এরই মধ্যে হেডম্যানপাড়ার ১২০টি তঞ্চঙ্গ্যা পরিবার এবং আশপাশের চারটি গ্রামের ১৮০টি বাঙালি পরিবারকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে এখনই কাউকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না। যখন প্রয়োজন হবে, তখন দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হবে। সব প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। ’

২০১৮ সালের মার্চের প্রথম দিকে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছিল। সে সময় বিজিবির কড়া প্রতিবাদ এবং সীমান্তের আউটপোস্টে বাড়তি বিজিবি জোয়ান মোতায়েন করায় সেনা সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

১০০ পরিবার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায়

ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ১০০ পরিবারকে সরকারের চলমান খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় নিতে জেলা প্রশাসক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের বৈঠকে নিদের্শনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সীমান্তের প্রান্তিক লোকজন যারা ক্ষেত-খামার করে জীবিকা নির্বাহ করে, তাদের এই কর্মসূচির আওতায় নিতে হবে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ সন্ধ্যায় বলেন, এখানকার বাসিন্দারা দীর্ঘকাল ধরেই সীমান্তের এ রকম সমস্যার মুখোমুখি হয়ে জীবন ধারণ করে আসছে। তাই তাদের জন্য এ রকম পরিস্থিতি নতুন কিছু নয়। এ কারণে এই মুহূর্তে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া যাবে না। তবে মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রুর দুটি ও ঢেঁকিবুনিয়ার একটি চৌকি বাংলাদেশের সীমানাঘেঁষা স্থানে অবস্থিত হওয়ায় এই তিনটি পয়েন্টের বাসিন্দাদের নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সজাগ রয়েছেন।

তিনি জানান, চৌকির পাশের এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হলেই লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হবে।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ