সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
হাইকোর্টে হাজির হয়ে পুলিশের পক্ষে সাফাই গাইলেন যশোরে সদর থানায় নির্যাতনের শিকার যুবক আবু সাঈদ।
বুধবার আদালতে দাখিল করা তার এফিডেভিটে এ সত্যতা পেয়েছেন বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
এদিকে ওই ঘটনার বিষয়ে যশোরের পুলিশ সুপারের প্রতিবেদন যথাযথভাবে দাখিল না করায় পুনরায় ৫ ফেব্রুয়ারি তাকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে এসআই নাজমুল ও এএসআই হাদিবুরকে আপাতত ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
আদালত বলেছেন, ‘প্রয়োজন হলে যেকোনো সময় আমরা তাদের তলব করব।’
বুধবার সকালে তলবাদেশে আদালতে হাজির হন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও ভিকটিম আবু সাঈদ। তবে ভিকটিম আবু সাঈদ দাবি করেন, পত্রিকায় যার নির্যাতনের ছবি ছাপা হয়েছে, তিনি সেই ব্যক্তি নন।
এদিকে, আদালতের পর্যবেক্ষণ হলো, পুলিশকে যেকোনো কারণে বাঁচাতে এমন দাবি করছেন ভিকটিম আবু সাঈদ।
বুধবার শুরুতেই পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিটি দেখিয়ে আবু সাঈদের কাছে আদালত জানতে চান, ‘এটা কি আপনার ছবি?’
জবাবে সাঈদ বলেন, ‘এই ছবি আমার নয় এবং ছবির স্থানটি কোথায় তাও বলতে পারব না।’
আদালতের প্রশ্নের জবাবে পুলিশের দুই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই ছবি থানার ভেতরের নয়।’
তখন আদালত বলেন, ‘পত্রিকায় প্রকাশিত ছবির বিরুদ্ধে আপনারা কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন? প্রতিবাদ পাঠিয়েছেন?’
এ পর্যায়ে দুই পুলিশ সদস্য বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। তবে সেটি আমরা করিনি।’
এ পর্যায়ে এসপির পক্ষে আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ‘পুলিশ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে।’
আদালত বলেন, ‘পুলিশের প্রতিবেদন সম্পর্কে আমাদের জানা আছে। চৌগাছার ঘটনায় এরকম প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল।’
আদালত জানতে চান, ‘তদন্ত প্রতিবেদন কোথায়?’
মতিন খসরু বলেন, ‘আমরা যে জবাব দাখিল করেছি সেখানে তদন্ত প্রতিবেদন টাইপ করে দেওয়া হয়েছে।’
আদালত বলেন, ‘এই ফর্মেটে কি কখনো তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল হয়?’
আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু বলেন, ‘যারা রক্ষক তারাই যদি ভক্ষক হয় তাহলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’ তিনি আদালতের উদ্দেশে বলেন, ‘পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি ও ভিকটিম সাঈদের মধ্যে কি কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়? আদালতে উপস্থিত সাঈদ তো হালকা-পাতলা গড়নের।’
এ পর্যায়ে আদালত মতিন খসরুকে বলেন, ‘তাহলে আপনি স্বীকার করে নিচ্ছেন সেখানে কিছু একটা ঘটেছে।’
এ পর্যায়ে আদালত ভিকটিম সাঈদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র কোথায়?’ কিন্তু সাঈদ তার পরিচয়পত্র দেখাতে পারেননি। তখন আবু সাঈদের পক্ষে একজন আইনজীবী এফিডেভিট দাখিল করেন।
তখন আদালত ভিকটিম সাঈদকে বলেন, ‘আপনি উকিলকে কত টাকা ফি দিয়েছেন? তার সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করেছেন? পুলিশকে বাঁচানোর জন্যই এই এফিডেভিট দেওয়া হয়েছে। আমরা তো শুধু ভিকটিমকে হাজির হতে বলেছিলাম। আইনজীবী নিয়োগ দিতে বলিনি।’ শুনানি শেষে হাইকোর্ট উপরি উক্ত আদেশ দেন।
এর আগে গত ৮ জানুয়ারি যশোরের সদর থানায় উল্টো করে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় ওই থানার এসআই নাজমুল ও এএসআই হাদিবুর রহমানকে তলব করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ছবিতে নির্যাতনের শিকার যে যুবককে দেখা যাচ্ছে, সেই আবু সাঈদকেও আদালতে থাকতে বলা হয়।
‘ঘুষ না পেয়ে থানায় যুবককে ঝুলিয়ে পেটাল পুলিশ’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে এলে এ রুল জারি করা হয়। এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়।
দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), খুলনা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), যশোরের পুলিশ সুপার (এসপি), কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) সংশ্লিষ্টদের জবাব দিতে বলা হয়।
সূত্র:রাইজিংবিডি