উন্নয়নের জন্য লিটনকে ভোট দেয়া উচিত মনে করেন অনেকেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজশাহী সিটি করপোরশেনের আগামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে ভোট দেয়া উচিত বলে মনে করেন নগরবাসী। বিশেষত রাজশাহী সিটির উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েই তারা এ মতামত ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণার দিক থেকে সাবেক মেয়র এগিয়ে রয়েছে বলেও মন্তব্য তাদের। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকেও সঠিক মনে করেন তারা। তবে নির্বাচন যেন স্বচ্ছ হয় সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে জোরালো ভূমিকা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

গতকাল বুধবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সাধারণ জনগণের মতামত জানতে চাইলে তারা এসব মন্তব্য করেন। এ প্রতিবেদক গতকাল নগরীর বিভিন্ন স্থানের প্রায় অর্ধ শতাধিক মানুষের সঙ্গে তাদের প্রতিক্রিয়া জানতে কথা বলেন। গত মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার আগামি ৩০ জুলাই রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তফসিল ঘোষণা করেছেন।

নগরবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগামি নির্বাচনে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে তারা প্রতীক নির্বাচনে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করবেন। ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে দলীয় প্রার্থীতার বাইরে স্থানীয়ভাবে যাকে নির্বাচিত করা হলে শহরের উন্নয়ন হবে, নগরবাসীর উন্নয়ন হবে সেই বিষয়কেই প্রাধান্য দিবেন তারা। এক্ষেত্রে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন যোগ্য প্রার্থী বলে মনে করেন তারা।

নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা তারিক সাদমান বলেন, এ বছর রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিশ্চিতভাবেই নগরবাসী তাকেই ভোট দিবে, যাকে ভোট দিলে শহরের উন্নয়ন হবে। এক্ষেত্রে দলীয় প্রার্থিতার বাইরে স্থানীয় উন্নয়নকেই প্রাধান্য দিবে বলে মনে হয়। জনগণ দ্বিতীয়বার আর একই ভুল করবে না বলেও মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, বিগত পাঁচ বছরে নগরীর দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি। এটা নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ আছে।

নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা সাঈদ ইকবালও মনে করেন, কে কোন দল করেন কিংবা সমর্থন দেন, সেটা বড় ফ্যাক্টর না। ফ্যাক্টর হচ্ছে লোকাল ডেভেলপমেন্ট। সত্যিকার অর্থে, সিটি নির্বাচনে যাকে ভোট দিলে শহরের উন্নয়ন হবে জনগণ তাকেই ভোট দিবে। এক্ষেত্রে আমার মনে হয় খায়রুজ্জামান লিটন এগিয়ে। কারণ তার সময়ে যে পরিমাণ নগরীর উন্নতি ঘটেছে অন্য কোনো মেয়রের সময়ে তা হয়নি।

সাধুর মোড় এলাকার বাসিন্দা সারোয়ার জাহান জানান, বিগত পাঁচ বছরে শহরের উন্নয়নটা কী হয়েছে। রাস্তাঘাটের কী বেহাল দশা। স্টেশন থেকে ভদ্রা মোড়ের দিকে যাওয়া যায় না। অন্য রাস্তাগুলোরও করুণ দশা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারও বালাই নাই। আগে নিয়মমাফিক এগারোটার পর থেকে রাস্তা ঝাড়– দেয়া হতো। এখন দেখি সন্ধ্যার পরপরই রাস্তায় পরিচ্ছন্নকর্মীরা ঝাড়– দিতে লাগে। ধুলোয় অন্ধকার হয়ে যায়। কেউ দেখার নেই। একেবারে বিশৃঙ্খল অবস্থা। রাস্তার ওপরেই দেখি ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। বিনোদন পার্কগুলোও করুণ দশা। পদ্মার ধারে লালন শাহ মঞ্চের পাশে তো যাওয়া যায় না।

হেতেম খাঁ এলাকার বাসিন্দা ইদরিস হোসেন বলেন, বর্তমান মেয়র বুলবুল নগরীর উন্নয়নে কাজ তো করেন নাই। তার উপর নগরীর ডিভাইডারে থাকা সব বড় বড় গাছগুলো কেটে ফেলেছেন। এ নিয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে।

তবে কেউ কেউ বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল কাজ করার সুযোগ পাননি বলেও মন্তব্য করেন। নগরীর বহরমপুর এলাকার বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন জানান, বুলবুল মেয়র থাকাকালীন কাজ করার সুযোগ পায়নি। মেয়র থেকে বহিষ্কারও হন। দুই বছরের মতো মামলা নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন। আমার মনে হয় বুলবুলের জন্য সহায়ক ছিল না পরিবেশ।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সমর্থক বলেন, ভাই, আমি বিএনপি করি। আমার চৌদ্দ গুষ্ঠিও বিএনপি করে। কিন্তু সিটি নির্বাচনে আমি বিএনপির প্রার্থীকে ভোট দিব না। কারণ এর আগেরবার বিএনপির প্রার্থীকে ভোট দিয়েছিলাম। তিনি শহরের কোনো উন্নতি করতে পারেন নি। এবছরও তিনি ভোটে নির্বাচিত হলে সে একই অবস্থা বিরাজ করবে। আগে দলকে ক্ষমতায় আনতে হবে তারপর লোকাল নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে ভোট দেব, তার আগে নয়।

প্রচার প্রচারণায়ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এগিয়ে রয়েছে বলে মনে করেন বেশিরভাগ বাসিন্দা। তারা বলছেন, বুলবুল তো নির্বাচনী প্রচারণাই শুরু করেন নি। কিন্তু এ বছরের শুরু থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকেও সঠিক হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা। তবে নির্বাচন যেন স্বচ্ছ হয় সে বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
নগরীর সাগরপাড়া এলাকার বাসিন্দা ফাহাদ আহম্মেদ জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনারকে ধন্যবাদ। তবে নির্বাচন যেন স্বচ্ছ হয় সে বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনাকে জোরালো ভূমিকা পালন করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবছর রাজশাহী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি দলের সবুজ সংকেত পেয়ে গত প্রায় এক বছর ধরে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে বিএনপির প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলই বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী।