উত্তরের ১৬ জেলায় পণ্যবাহী যানবহন ধর্মঘট: লোকসানে মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা

মাহাবুব হোসেন নাটোর:
উত্তরবঙ্গ ট্রাক ট্যাংকলরী, কভার্ডভ্যান ও পিক-আপ মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ডাকা ধর্মঘটে লোকসানে পড়েছে মৌসুমী ফল ব্যবসায়ীরা। পন্যবাহী ট্রাক রাস্তায় চলাচল না করায় মৌসুমী ফল লিচু এবং আম ক্রয় করে বিপাকে পড়েছেন অনেক  ব্যবসায়ী। রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌসুমি ফল নিয়ে যেতে পারছেনা তারা। এতে পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে ব্যবসায়ীরা। এছাড়া পেট্রোল পাম্পগুলোতে দিন দিন ফুরিয়ে আসছে তেলের মজুদ।

 
এদিকে, আসন্ন রমজান মাসের আগে পন্যবাহী পরিবহনগুলোর এমন ধর্মঘটে কাচা বাজার সহ অণ্যান্যে মালামালের দাম অস্থির হয়ে উঠার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এটিকে অনেকে ষড়যন্ত্র হিসেবেও দেখছেন কোন কোন ব্যবসায়ী।

 
নাটোরের সবচেয়ে লিচুর পাইকারী বাজার গুরুদাসপুর উপজেলার বেড়গঙ্গারামপুর। সেখানে গিয়ে দেখা যায় শুনশান অবস্থা। যেখানে ব্যবসায়ী এবং বাগানমালিকদের পদচারনায় মুখরিত ছিল, সেখানে কমে গেছে লোকজনের আনাগোনা। অথচ এই বাজার থেকে প্রতিদিন অন্তত ৪ থেকে ৫কোটি টাকার লিচু যায় দেশের বিভিন্ন বাজারে। কিন্তু গত দুই দিনে ব্যবসায়ীরা লিচু ক্রয় করে বসে রয়েছেন। ট্রাক ভাড়া না পাওয়ার কারনে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন বাজারে মৌসুমী ফল লিচু পাঠাতে পারছে না তারা। এতে পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটছে এখানকার ব্যবসায়ীদের। একই অবস্থা নাটোর শহরের স্টেশন বাজার, বাগাতিপাড়ার মালঞ্চি বাজার, লালপুরের গোপালপুর বাজারের।

 
এদিকে,লিচুর দাম কম পাওয়ার আশঙ্কায় বাগান থেকে লিচু পাড়া বন্ধ করে দিয়েছে অনেক বাগান মালিক। কমদামে লিচু বিক্রি করে লোকসানে পড়ার আশঙ্কায় তাদের এই সিদ্ধান্ত।

 
নারায়নগঞ্জের সোনারগাও থেকে আসা ব্যবসায়ী আব্দুল করিম এ প্রতিবেদককে বলেন,গত দিনে প্রায় দুই লাখ টাকার লিচু ক্রয় করেছি। কিন্তু রাজধানী সহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য কোন ট্রাক ভাড়া পাচ্ছিনা। এখন লিচু গুলো পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। পুরোট লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছি। অবিলম্বে ধর্মঘট প্রত্যাহারের দাবী জানাচ্ছি।

 


আরেক ব্যবসায়ী সোহানুর রহমান বলেন, তিনি ঢাকার গাজীপুর থেকে এসে প্রতিদিন লিচু কিনে সেখানকার আড়তে বিক্রি করেন। কিন্তু হঠাৎ ধর্মঘটের কারনে ব্যবসায় বড় ধরনের লোকসান হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

 
গুরুদাসপুর বেড়গঙ্গারামপুর লিচু আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, হঠাৎ পণ্যবাহী ট্রাক ধর্মঘটের কারনে লিচু ক্রয়-বিক্রয়ে ভাটা পড়েছে। ক্রেতারা আসলেও ট্রাক ভাড়া না পাওয়ার কারনে লিচু ক্রয় করতে অনিহা তাদের। প্রতিদিন এই বাজারে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক লিচু রাজধানীর সহ বিভিন্ন বাজারে যায়। কিন্তু ধর্মঘটের কারনে ক্রয়-বিক্রয় কম হওয়ার কারনে মাত্র ১০ থেকে ১৫ট্রাক লিচু বেচা-কেনা হচ্ছে।

 
তিনি আরো বলেন, অনেক ব্যবসায়ী লিচু ক্রয় করে বিপাকে পড়েছেন। ট্রাক ভাড়া না পাওয়ার কারনে লিচু ক্রয় করতে যাচ্ছে না। এতে বাগান মালিকও লিচুর দাম কম পাচ্ছে।

 
গুরুদাসপুরের গাওপাড়া বিন্নাবাড়ী ফল আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন,ধর্মঘটের আগে প্রতিদিন এই বাজার থেকে ১০ থেকে ১২ট্রাক লিচু বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছিল। কিন্তু ধর্মঘটের পর এখন মাত্র ২ থেকে ৩ ট্রাক লিচু যাচ্ছে।

 
তিনি আরো বলেন,ধর্মঘটের কারনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসতে পারছে না। যার কারনে বেচা-কেনা একেবারেই কমে গেছে। চাহিদা না থাকায় বাগানেই অনেক লিচু পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে লোকসানে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বাগান মালিকরা।

 
এদিকে, আসন্ন রমজান মাসের আগে পন্যবাহী পরিবহনগুলোর এমন ধর্মঘটে কাচা বাজার সহ অণ্যান্যে মালামালের দাম অস্থির হয়ে উঠার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এটিকে অনেকে ষড়যন্ত্র হিসেবেও দেখছেন কোন কোন ব্যবসায়ী। এছাড়া বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পগুলো তে আটকে পড়েছে কাচা পণ্যবাহী ট্রাক। ধর্মঘটের কারনে কাচা পণ্য নস্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন ট্রাক চালকরা।

 
অপরদিকে,পেট্রোল পাম্পগুলোতে জ্বালানী তেলের সরবরাহ কমে যাওয়ায় ফুরিয়ে আসছে তেলের মজুদ। এই অবস্থায় অবিলম্বে ধর্মঘটের প্রত্যাহারের জোর দাবী জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 
তবে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির কথা স্বীকার নাটোর জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরি, কার্ভাড ভ্যান মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তারুল সিল্কসিটি নিউজকে আলম বলেন, মহাসড়কে পুলিশের চাদাবাজী,হয়রানি সহ সাত দফা দাবীতে তাদের ধর্মঘট চলছে। মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর দেওয়া পিঠ ঠেকে গেছে। যার কারনে ধর্মঘট থেকে পিছু হটার সুযোগ নেই। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই ধরনের ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে।

 
উল্লেখ্য, পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী গত ২১ মে থেকে তিনদিনের ধর্মঘট শুরু হয়েছে উত্তরের ১৬জেলায়।
স/শ