উত্তরাগণভবন: বিকেলেই বঙ্গবন্ধুর পাশ থেকে সরছে মোনায়েম খানের নাম ফলক

নাটোর প্রতিনিধি:
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আজ রোববার বিকেলেই বঙ্গবন্ধুর পাশ থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধি কুখ্যাত মোনায়েম খানের নাম ফলক। আজ রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় গণপূর্ত বিভাগ এবং জেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিক ভাবে নামফলকটি সরিয়ে ফেলবেন। নাম ফলকটি সরিয়ে ফেলার মাধ্যমে কলঙ্ক মুক্ত হবে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাঞ্চল বাসভবন নাটোরের উত্তরাগণভবন।

এর আগে গনভবনের মুল প্যালেসে স্থাপিত স্বাধীনতা বিরোধি কুখ্যাত রাজাকার মোনায়েম খানের নাম ফলক অপসারন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশে গৃহয়ান ও গণপূর্ত নাটোরের গণপূর্ত বিভাগকে মোনায়েম খানের নাম ফলক সরিয়ে ফেলার জন্য এক পত্রের মাধ্যমে নির্দেশ দেন।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর দিঘাপতিয়া রাজবাড়ীর শেষ রাজা প্রতিভা নাথ রায় দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। ১৯৫০ সালে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার পর দিঘাপতিয়ার রাজ প্রাসাদটির রক্ষণা-বেক্ষণে বেশ সমস্যা দেখা দেয়। এসময় থেকে দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী পরিত্যাক্ত অবস্থায় থাকে। পরে ১৯৬৫ সালে তৎকালীন পাকিস্থান সরকার রাজবাড়ীটি অধিগ্রহন করেন। এরপর ১৯৬৭ সালের ২৪ জুলাই তৎকালীন পাকিস্থানের গর্ভনর মোনায়েম খান এটিকে গর্ভনর হাউস হিসেবে উদ্ধোধন করেন।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২সালের ৯ ফেব্রুয়ারী গর্ভনর হাউসকে উত্তরাগণভবন হিসেবে উদ্ধোধন করেন। এরপর থেকেই এটি উত্তরা গভবন হিসেবে পরিচিত। এছাড়া এই ভবনের মূল প্রাসাদের ভিতর মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে ভবনটি ‘উত্তরা গণভবনের’ প্রকৃত মর্যাদা লাভ করে। এরপর থেকেই স্বাধীনতা বিরোধি মোনায়েম খান এবং স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ফলক গণভবনের মূল প্যালেসের প্রবেশ দ্বারে পাশাপাশি রয়েছে। অনেক সময় দর্শনাথীরা এসে স্বাধীনতা বিরোধির নাম ফলক দেখে বিরুপ প্রতিক্রয়া ব্যাক্ত করেন। তাছাড়া দর্শনার্থীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক ধারনা তৈরী হচ্ছে।

সূত্র জানায়, উত্তরা গণভবন থেকে কুখ্যাত মোনায়েম খানের নাম ফলক অপসারনের জন্য গত ২৯ জুন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে এক চিঠি প্রেরণ করে। ওই চিঠির আলোকেই গত ৪জুলাই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সুরাইয়া বেগম স্বাক্ষরিত এক চিঠি গত ৫জুলাই নাটোরের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমানের কাছে এসে পৌছায়। চিঠিতে বলা হয়, নাটোর জেলার উত্তরা গণভবন হতে স্বাধীনতা বিরোধি কুখ্যাত রাজাকার মোনায়েম খান এর নামফলক নাটোর জেলা প্রশাসনের সহায়তায় অপসারন করে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহতি করার জন্য গণপূর্তর নির্বাহী প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেয়া হয়।

এরপর থেকেই নড়েচড়ে বসে নাটোরের গণপূর্ত বিভাগ। গণভবন থেকে কুখ্যাত মোনায়েম খানের নাম ফলক অপসারনের জন্য এরই মধ্যে সকল প্রস্তুতি নেয় হয়েছে। আজ রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় জেলা প্রশাসন এবং গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নাম ফলক অপসারন করবেন। এসময় নাটোরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. আজাদুর রহান, গণপূর্তর নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক আব্দুস সবুর খান সহ অন্যান্যেরা উপস্থিত থাকবেন।

নাটোরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. আজাদুর রহমান বলেন, উত্তরাগভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর পাশ থেকে কুখ্যাত মোনায়েম খানের নাম ফলক সরিয়ে ফেলার জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় না ফলকটি সরিয়ে ফেলা হবে। নাম ফলকটি সরিয়ে ফেলার মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হবে নাটোর বাসী এবং উত্তরা গণভবন।


উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর সারাদেশে মহামান্য হাইকোর্ট বাংলাদেশের সকল প্রতিষ্ঠান-স্থাপনা থেকে স্বাধীনতা বিরোধিদের নাম অপসারনের আদেশ দেন। সেই আদেশের প্রেক্ষিতে গত ১৫ ডিসেম্বর মুসলিম লীগ নেতা স্বাধীনতা পরবর্তী প্রকাশিত কলাবরেটর তালিকার ১০ নম্বর অভিযুক্ত রাজাকার আব্দুস সাত্তার খান চৌধুরী মধু মিয়ার নামে নামকরণ করা শহরের ট্রাফিক মোড় হতে হাসপাতাল রোডের এবং কলাবরেটর তালিকার ১৭ নম্বর অভিযুক্ত রাজাকার কছের উদ্দিনের নামে শহরের বড় হরিশপুর এলাকার চেয়ারম্যান সড়কের নামের ফলক ভেঙ্গে ফেলেন জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন এবং নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি। পরে দুইজন মুক্তিযোদ্ধার নামে ওই দুটি সড়কের নামকরন করা হয়।

কিন্তু গণভবনের মুল প্যালেসে স্থাপিত মোনায়েম খানের নাম ফলক থাকলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি না থাকায় ফলকটি অপসারন করা যাচ্ছিল না। পরে বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে গণভবন থেকে মোনায়েম খানের নাম ফলক সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

 

স/আ