উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়েরাও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে

সিল্কিসিটিনিউজ ডেস্ক:

জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে পুলিশ দু’জন নারীকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগ বলছে, এদের মধ্যে একজন নব্য জেএমবির নারী শাখার প্রধান।

পুলিশের দাবী, এই নারী উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য এবং একটি নামী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। গ্রেপ্তার অন্যজন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী।

গুলশানের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর দেখা গিয়েছিল, শিক্ষিত বিত্তবান পরিবারের ছেলেরা জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু পুলিশ বলছে, এই তৎপরতায় এখন উচ্চবিত্ত পরিবারের নারীরাও জড়িয়ে পড়ছে।

জঙ্গি হামলার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ হোমায়রা নাবিলা নামের একজন নারীকে বৃহস্পতিবার গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করেছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, তিনি নব্য জেএমবির নারী শাখার প্রধান এবং গত ১৫ই অগাস্টে ঢাকার পান্থপথে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে জঙ্গি হামলায় অর্থের জোগান দিয়েছিলেন তিনি।

ফেসবুকে ডিএমপির খবর

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান দাবী করেছেন, হোমায়রা ‘ব্যাট ওমেন’ নামে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “ব্যাট-ওমেন নামে সে বিভিন্ন আইডি এবং এনক্রিপ্টেড অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করতো। সংগঠনের সর্বশেষ আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিল যে আকরাম হোসেন নিলয়, তার মাধ্যমে সে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে।”

তিনি বলেন, “সংগঠনে আরো যারা নারী সদস্য আছে, তাদের সে নিজের আইডি থেকে উদ্বুদ্ধ করত।”

মি. খান জানিয়েছেন, হোমায়রার মাধ্যমেই তার স্বামী তানভীর ইয়াসিন করিম জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। এই ব্যক্তি গত নভেম্বরের শুরুতে নিখোঁজ হয়েছিলেন, পরে নভেম্বরের ২০ তারিখে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পুলিশ বলছে, হোমায়রা নিয়মিত জঙ্গি তৎপরতায় অর্থায়ন করতেন। মি. খান আরো জানিয়েছেন, হোমায়রা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরে মালয়েশিয়ায় পড়ালেখা করেছেন। হোমায়রার বাবা একজন ব্যবসায়ী।

অন্যদিকে, নব্য জেএমবির তামিম গ্রুপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী গ্রেপ্তার হয়েছেন উত্তরাঞ্চলীয় জেলা লালমনিরহাট থেকে। লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, অভিযোগ পাবার পর তাকে বেশ কিছুদিন পর্যবেক্ষণে রাখার পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

“কয়েক মাস আগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটা মামলার সূত্রে আমরা তাকে কয়েকমাস নজরে রাখি। এরপর নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে নিজে সম্পৃক্ত এবং অন্যদেরকে ও এই জঙ্গি তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ করতো। দেশের অন্য জায়গাতেও তার কানেকশন আছে।”

বাংলাদেশে ২০১৬ সালের জুলাইতে গুলশানের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর দেখা গিয়েছিল, শিক্ষিত বিত্তবান পরিবারের ছেলেরা জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। এখন কি সেই একই ধারায় নারীরাও যুক্ত হচ্ছেন জঙ্গিবাদে?

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় তৎপর পুলিশ ও বিশেষ বাহিনী র‍্যাব

কাউন্টার টেররিজমের মি. খান বলছেন, জঙ্গি কর্মকাণ্ডে মেয়েদের সম্পৃক্ত হবার হার এখনো কম হলেও, এ সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু আগে যেখানে শুধুমাত্র পরিবারের প্রভাবে জড়িয়ে যেত মেয়েরা, এখন তেমন নয়। অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাই জড়িত হচ্ছে জঙ্গি কাজে।

“গত বছর খানেক আগেও আমরা কয়েকজন নারীকে এই অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছিলাম। দেখা গেছে তারা পরিবারের অর্থাৎ বাবা, স্বামী বা ভাই এমন কারো সূত্রে জঙ্গি তৎপরতার সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে শুধু পরিবারের প্রভাবেই তারা জড়িত হয়ে পড়ছে না। হোমায়রা যুক্ত হয়েছেন, তার বান্ধবীর ভাই নিলয়, তার সংস্পর্শে এসে, নিজে নিজেই।”

কিন্তু বিত্তবান ও শিক্ষিত পরিবারের ছেলেমেয়েদের কেন জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে? রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেছেন, সমাজে এক ধরণের শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যেকারণে ছেলেমেয়েরা সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে বেড়ে উঠছে। আর হতাশা থেকেই ভিন্ন ধরণের কিছু করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে অনেকে জড়িয়ে পড়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে।

তিনি বলেন, “আমাদের সমাজ খণ্ডিত হয়ে গেছে, আমরা সহমর্মিতা হারিয়েছি, একসাথে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না আমরা। সেখান থেকে একাকীত্ব আসে, এর মধ্যে তরুণরা পথ খুঁজে বেরায় যে কিভাবে নিজেদের এই শূণ্যতা দূর করতে পারবে।”

“তাছাড়া, মানুষের মনস্তত্ত্ব খুবই জটিল। কেউ হয়ত বিবিএ পড়তে চায় না, আর্টস পড়তে চায়। কিন্তু পরিবার সেটা চায় না। তখন তাকে জোর করা হয়, এ থেকেও হতাশা আসে মানুষের।”

গ্রেপ্তার দুই নারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে লালমনিরহাটে নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ইতিমধ্যেই রিমান্ড চাওয়া হয়েছে ঐ ছাত্রীর। বিবিসি বাংলা