উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই গ্রুপের গোলাগুলি ও সংঘর্ষে নিহত ৭

আর্মড পুলিশ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প সূত্র জানায়, সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের। কী কারণে তাঁদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। তবে রোহিঙ্গারা বলছেন, মাদক বিক্রির টাকা ভাগাভাগি ও ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের মধ্য এ সংঘর্ষ হয়েছে।

নিহত রোহিঙ্গারা হলেন উখিয়ার বালুখালী ২ নম্বর ক্যাম্পের মোহাম্মদ ইদ্রিস (৩২), বালুখালী ১ নম্বর ক্যাম্পের ইব্রাহীম হোসেন (২২), বালুখালী ১৮ নম্বর ক্যাম্পের এইচ ব্লকের আজিজুল হক (২৬) ও মোহাম্মদ আমিন (৩২), রোহিঙ্গা শিবিরের ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়া’ মাদ্রাসার শিক্ষক ও ক্যাম্প-১৮, ব্লক-এফ-২২–এর নুর আলম ওরফে হালিম (৪৫), মাদ্রাসাশিক্ষক ও ক্যাম্প-২৪–এর হামিদুল্লাহ (৫৫) ও মাদ্রাসাছাত্র ও ক্যাম্প-১৮, ব্লক- এইচ- ৫২-এর নুর কায়সার(১৫)। এর মধ্যে শেষের তিনজন হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই তিন রোহিঙ্গার মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ( এপিবিএন) উপ-অধিনায়ক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন। তিনি বলেন, নিহত তিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে থাকা একটি মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্র। ভোরে গোলাগুলির ঘটনায় প্রথমে ৪ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছিলেন। আহতদের মধ্যে শুক্রবার সকালে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। এ নিয়ে মোট সাত রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার খাঁন বলেন, সন্ত্রাসীদের গুলিতে সাত রোহিঙ্গা নিহত হন। ময়নাতদন্তের জন্য তাঁদের লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর চেষ্টা চলছে।

পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার খাঁন আরও বলেন, আজ শুক্রবার ভোর চারটার দিকে উখিয়া বালুখালী ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও গোলাগুলি হয়। এত সাত রোহিঙ্গা নিহত ও আহত হয়েছেন অন্তত সাতজন। ঘটনার পর অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। এ পর্যন্ত মুজিবুর রহমান নামের একজনকে অস্ত্রসহ আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লাম্বাশিয়া শিবিরের ডি ব্লকের ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের কার্যালয়ে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন মুহিবুল্লাহ (৪৮)। তিনি ওই সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন। হামলার জন্য মিয়ানমারের সশস্ত্র গ্রুপ ‘আরাকান স্যালভেশন আর্মি’ আরসা (আল-ইয়াকিন নামেও পরিচিত) দায়ী করা হয়েছিল। এ সময় আরসার কয়েকজন অস্ত্রধারীর নাম প্রচার করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন মুহিবুল্লাহর ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন।

মুহিবুল্লাহকে খুনের ঘটনায় পুলিশ পাঁচ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। দুই দফায় ওই পাঁচ রোহিঙ্গাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে উখিয়া থানার পুলিশ। তাঁদের একজন মোহাম্মদ ইলিয়াছ কক্সবাজার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। কিন্তু মুহিবুল্লাহ হত্যার মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন আট লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।

প্রথম আলো