ঈদে চাঙ্গা ছিল অনলাইন কেনাকাটা ও লেনদেন

করোনার বিস্তার রোধে ৪০ দিন ধরে মানুষের যাতায়াত এবং অফিস-আদালত ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সরকারের বিধিনিষেধ চলছে। মানুষ অনেকটা ঘরবন্দি সময় পার করছেন। যাকে বলা হচ্ছে লকডাউন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হলো। করোনার মধ্যে ঈদের কেনাকাটা ও লেনদেনে অনলাইন ব্যবস্থাই মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে। অনেকেই ঘরে বসে কেনাকাটা ও প্রয়োজনীয় লেনদেন সেরেছেন। ঈদ শেষে কয়েকটি ই-কমার্স ও পোশাক-পরিচ্ছদের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, একদিকে লকডাউন, অন্যদিকে ঈদকেন্দ্রিক অতিরিক্ত চাহিদা অনলাইন কেনাকাটা ও লেনদেনকে নিয়ে গেছে নতুন উচ্চতায়। অনলাইনে রেকর্ড পরিমাণ কেনাকাটা ও পরিশোধ হয়েছে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, তাদের সদস্যদের কাছে আসা অর্ডারের গড়মূল্য গত বছরের ঈদের তুলনায় বেড়েছে ৩৩ শতাংশ।

বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, চলমান লকডাউনে পোশাক কেনাকাটা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এর পরই ছিল ইলেকট্রনিক্স পণ্যের চাহিদা। অনলাইনে অর্ডারের বড় অংশের মূল্য পরিশোধও হয়েছে ডিজিটাল মাধ্যমে। ডিজিটাল ব্যবস্থায় পরিশোধ বলতে তারা ব্যাংকের ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এবং ই-ওয়ালেট ব্যবহার করে যেসব লেনদেন হয়েছে সেগুলোকে বুঝিয়েছেন। এসব ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবার বিল পরিশোধও বেড়েছে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম সমকালকে বলেন, ঈদের আগের এক মাসে ই-কমার্সে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ ভাগই ছিল ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা। এই বিপুল কেনাকাটার মূল্যের বড় অংশই পরিশোধ হয়েছে ডিজিটাল ব্যবস্থায়। তিনি বলেন, এ বছর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্যের অনলাইনে অর্ডার বেড়েছে। এতে অর্ডারের গড়মূল্যও বেড়েছে ৫০০ টাকা। গত বছর অর্ডারের গড়মূল্য ছিল দেড় হাজার টাকা, যা এ বছর বেড়ে দুই হাজার টাকা হয়েছে।

অনলাইনে ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানে অর্ডার যে বেড়েছে, তা পোশাক-পরিচ্ছদের ব্র্যান্ড আড়ংয়ের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা আশরাফুল আলমের কথায়ও স্পষ্ট। তিনি সমকালকে বলেন, ২০১৯ সালের সঙ্গে তুলনা করলে এ বছর ঈদের সময় অনলাইনে চার গুণ বেশি বেচাকেনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া থেকেও অর্ডার এসেছে। তবে টাকার অঙ্কে বা মোট কতগুলো অর্ডার ডেলিভারি হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জানাতে পারেননি। আশরাফুল আলম বলেন, অনলাইনে অর্ডারগুলোর বেশিভাগের মূল্যও অনলাইনে পরিশোধ হয়েছে।

এদিকে ব্যাংক ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, চলমান লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন অনেক বেড়েছে। অনলাইন ব্যাংকিংও আগের তুলনায় বেড়েছে। আর এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কেনাকাটাসহ অন্যান্য লেনদেনও বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী সমকালকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে স্বাভাবিকভাবেই অনলাইন পেমেন্ট ও কার্ডের ব্যবহার বেড়ে আসছে। করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর অনেকে বাধ্য হয়ে যুক্ত হয়েছেন অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থায়। এর বাইরে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে। করোনার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান সময় মতো বেতন পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মী ক্রেডিট কার্ড থেকে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে বেতন হলে পরিশোধ করছেন। ফলে সামগ্রিকভাবে অনলাইনে পেমেন্ট আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ঈদের আগে কার্ড ও অনলাইন ব্যাংকিং থেকে লেনদেন ব্যাপকভাবে বেড়েছিল।

ব্যাংক ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো আগে থেকেই অনলাইনে লেনদেন উৎসাহিত করে আসছে। করোনার কারণে গ্রাহকরা স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করে অনলাইনে ঝুঁকেছেন। আর ঈদের বাজারের অতিরিক্ত চাহিদা তাতে যোগ করেছে বিশেষ মাত্রা। গত বছর টানা ৬৬ দিনের লকডাউনে অনেকেই নতুন করে যুক্ত হন অনলাইন কেনাকাটা ও বিল পরিশোধে। চলমান লকডাউনে এই প্রবণতা আরও বেড়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠাগুলোও গ্রাহকদের কথা চিন্তা করে অনলাইনে সেবা বাড়িয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের ই-কমার্স ব্যবস্থাকে উন্নত করেছে। আড়ংয়ের সিওও আশরাফুল আলম বলেন, অনলাইনে ক্রেতাদের সেবা দিতে তাদের প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট নতুন করে সাজানো হয়েছে। মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। ই-কমার্স টিম বড় করা হয়েছে।

একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জানান, অনলাইনে অর্ডার ও মূল্য পরিশোধ ধারণার চেয়েও বেশি হারে বাড়ছে। ক্রেতার চাপ সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এক বছর আগের তুলনায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডশপের অনলাইন বিক্রি ৫ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে।

 

সুত্রঃ সমকাল