ইয়ামিনের কপালে নাজিবের দশা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সঙ্গে মালদ্বীপের আবদুল্লাহ ইয়ামিনের হুবহু মিল পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচনে জিততে নানা পথ ধরেছিলেন ইয়ামিন। কিন্তু কারচুপির নির্বাচন জিততেও ন্যূনতম জনপ্রিয়তা দরকার। সেটার অভাবেই শেষ পর্যন্ত হালে পানি পায়নি ‘ইয়ামিন ফন্দি’।

ক্ষমতার অপব্যবহার, লাগামহীন দুর্নীতি, বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন এসব কারণে তার জনপ্রিয়তায় ধস নামে। সেনা-পুলিশ লেলিয়েও ধোপে টেকেননি, পরাজিত হয়েছেন। মালয়েশিয়ায় নাজিবও ছিলেন একই রকম। তার বিরুদ্ধেও ছিল বড় দুর্নীতির অভিযোগ।

গত মে মাসে বহুল আলোচিত নির্বাচনের আগে একইভাবে বিরোধীদের ভয়ভীতি দেখিয়েছেন তিনি। নির্বাচনে ভোট কিনেছেন। তা সত্ত্বেও শোচনীয়ভাবে হেরেছেন। ওয়ানএমডিবি দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত নাজিব এখন কারাগারে। সেই একই দশা জুটতে যাচ্ছে ইয়ামিনের কপালেও।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, দলের এই বিস্ময়কর ও অপ্রত্যাশিত জয়ের পর নির্বাসিত নেতা নাশিদের মুক্তি এখন সময়ের ব্যাপার। ‘১৭ নভেম্বর নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলিহ শপথ নেয়ার পর থেকেই শুরু হবে ‘ইয়ামিন দৌড়’। ঠিক যেভাবে এতদিন বিরোধী নেতাদের শান্তির ঘুম হারাম করে দিয়েছিলেন তিনি। আকাশছোঁয়া দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে যেমনটি ঘটেছে নাজিবের বেলায়। মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতায় বসার পর দিন থেকেই ‘দৌড়’ শুরু হয় নাজিবের।’

মালদ্বীপে ইয়ামিনেরও এমন পরিণতিরই পূর্বাভাস দিচ্ছেন কূটনীতিকরা। ইতিমধ্যেই প্রতিবেশী শ্রীলংকা থেকে আশ্রয়ের আমন্ত্রণ পেয়েছেন ইয়ামিন। সোমবার ইয়ামিনকে ফোন করে তাকে এই আগাম আশ্রয়ের হাতছানি যেন শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের।

ইয়ামিনকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘শ্রীলংকায় আপনি সবসময় স্বাগতম। যে কোনো সময় আসতে পারেন।’ শ্রীলংকার এ ইঙ্গিতের পরই বিশ্লেষকদের মন্তব্য, মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট নাশিদের হাল হবে এবার ইয়ামিনের। নাশিদ ফিরবেন আর ইয়ামিন দেশছাড়া হবেন। ইতিমধ্যে একজন বন্দিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। নাশিদসহ আরও কয়েকজন নেতার মুক্তির ব্যাপারে আদালতে শুনানি হয়েছে। যেকোনো সময় তাদেরকে মুক্তি দেয়া হতে পারে।

সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে ২০১৫ সালে তাকে জেলে ভরে ইয়ামিন সরকার। পরে চিকিৎসার ছুতো করে ব্রিটেনে পাড়ি জমান নাশিদ। সেখান থেকে শ্রীলংকায়। বর্তমানে তিনি কলম্বোতেই আছেন। এদিকে ইয়ামিনের পরাজয়ে মালদ্বীপে কৌশলগত খেলায় ভারতের জয় হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বহু আগে থেকেই ভারত মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপ দেশটির ওপর নয়াদিল্লির প্রভাব স্পষ্ট। বলা যায়, রাজধানী মালের সব সিদ্ধান্তই আসত নয়াদিল্লি থেকে। ভারতের সমর্থনেই প্রায় ৩০ বছর ধরে দেশ শাসন করে সাবেক স্বৈরশাসক মামুন আবদুল গাইয়ুম। তাদের হাত ধরেই উঠে আসে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ।

২০১৩ সালে দেশটির রাজনীতিতে হাওয়া বদলতাতে থাকে। ওই বছরের নির্বাচনে নাশিদকে হারিয়ে দেন ইয়ামিন। ভারতের ‘দাদাগিরি’ পাশে সরিয়ে চীনের দিকে ঝুঁকতে থাকেন তিনি। এরপর গত পাঁচ বছরে বেইজিংয়ের পরামর্শেই দেশ শাসন করেছেন তিনি। কিন্তু এবার সেই সুরে ছেদ পড়ল। নির্বাচনে নাশিদের দলের নেতা ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ জয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার আগেই তাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছে নয়াদিল্লি। প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণার পরই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা তৃতীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সফল সমাপ্তিকে স্বাগত জানাই।