ইরান চুক্তি বাতিল ঘোষণা ট্রাম্পের, ক্ষুব্ধ মিত্ররা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: 

মিত্রদের কোনো আহ্বান-অনুরোধকে পাত্তা না দিয়েই ইরানের সঙ্গে পরমাণু বিষয়ক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে ইরানের ওপর সর্বোচ্চ অবরোধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তবে ট্রাম্পের এ ঘোষণার সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়ে ইরানকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি।

মঙ্গলবার (৮ মে) স্থানীয় সময় দুপুরে হোয়াইট হাউসের ডিপ্লোম্যাটিক রুমে সংবাদ সম্মেলন করে ট্রাম্প এ চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেন। এর পরপরই ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি প্রতিক্রিয়া জানান। বিবৃতি দেয় যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও।

বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত চুক্তিটিকে ‘ক্ষতিকর এবং ক্ষয়িষ্ণু’ আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প বলেন, একজন নাগরিক হিসেবে এ চুক্তিটি আমার কাছে ‘বিব্রতকর’।

তিনি চুক্তিটিকে ‘ভয়াবহ একপাক্ষিক’ এবং এটা ‘কখনও হওয়া উচিত হয়নি’ মন্তব্য করে বলেন, চুক্তিতে ইরানের ব্যালাস্টিক মিসাইল কর্মসূচি, ২০২৫ সালের পর (চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে যখন) তাদের পরমাণু কর্মসূচি বা ইয়েমেন ও সিরিয়া যুদ্ধ নিয়ে তেহরানের ভূমিকার মতো বিষয়গুলো সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।

চুক্তি সইয়ের পর ইরানের ওপর থেকে যেসব মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়েছিল তা ফের আরোপের ঘোষণা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইরানের সঙ্গে নতুন চুক্তির জন্য সমঝোতায় আমি আগ্রহী নই।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরমাণু কর্মসূচি চালানোর কথা বলে তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে বলে অভিযোগ ছিল পশ্চিমাদের। এ কারণে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ওই বলয়ের।

তবে বারাক ওবামা প্রশাসনের নেতৃত্বে পশ্চিমা জোট ২০১৫ সালে এই চুক্তির মাধ্যমে তেহরানকে সেই ‘সন্দেহজনক’ কর্মসূচি থেকে ফিরিয়ে আনে। ইরানের সঙ্গে ‘ঐতিহাসিক’ চুক্তিটিতে সই করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া এবং জার্মানি (পাওয়ার সিক্স)।

চুক্তির আওতায় পরমাণু কর্মসূচি ‘সীমিত’ করার বিনিময়ে পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অবরোধ থেকে মুক্তি পায় ইরান। যদিও ইসরায়েল অভিযোগ করে আসছে, ইরান চুক্তি পুরোপুরি মানছে না।

সেই চুক্তিটিই বাতিল করে ট্রাম্পের সংবাদ সম্মেলনের পর ইরানি প্রেসিডেন্ট রুহানি বলেন, এভাবে চুক্তি থেকে সরে যাওয়া

আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি অবমাননা এবং অগ্রহণযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্র আসলে দেখালো তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রাখে না।

তিনি ‘প্রয়োজনে’ কোনো ‘সীমা ছাড়াই’ পুনরায় পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে নিতে দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থা এইওআইকে নির্দেশ দেন। তবে তার আগে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্যরা কী বলে তা দেখতে অপেক্ষা করবেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে চুক্তিটিতে থাকতে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও ট্রাম্পের এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো। সম্প্রতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার ওয়াশিংটন সফরে ট্রাম্পকে চুক্তিটির ওপর মনোভাব পরিবর্তনের ব্যাপারে ‘বুঝিয়ে’ এলেও ফলশূন্যতায় হতাশ তারা।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ও জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল এক যৌথ বিবৃতিতে ইরানকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় আমরা ইরানকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছি। এ চুক্তির আওতায় ইরানের দিক থেকে যেসব বাধ্যবাধকতা আছে, সেগুলো তারা যেনো অবশ্যই মেনে চলে। চুক্তিটির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক ফেডেরিকা মগেরিনি বলেছেন, ‘আমরা এই চুক্তি ধরে রাখতে অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং তা বাস্তবায়নে তেহরানকে সর্বোত সহযোগিতা করা হবে।’

আর রাশিয়া ট্রাম্পের এই ঘোষণাকে ‘একেবারে হতাশাজনক’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

যার আমলে এই চুক্তি সই করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, সেই প্রেসিডেন্ট ওবামা তার ফেসবুক পেজে এক বার্তায় বলেছেন, ‘ট্রাম্পের ঘোষণা পথভ্রষ্ট। এই চুক্তিটি কাজ করছিল এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রেরই স্বার্থ ছিল’।

তবে এই ঘোষণায় ট্রাম্পকে সাধুবাদ জানিয়েছে ইসরায়েল ও সৌদি আরব। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষ্যে, একটি ‘বিপর্যয়কর’ চুক্তি থেকে ‘দৃঢ়ভাবে’ সরে আসার এই সিদ্ধান্ত ‘পুরোপুরি সমর্থনযোগ্য’।

বাংলানিউজ