ইরান-ইসরায়েল সংঘাত, পরিণতি কী হবে?

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। বিশ্বনেতারা নড়েচড়ে বসেছেন। দুইপক্ষকেই সংযত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন সবাই। এমন অবস্থায় কী হতে পারে পরিণতি, সে বিষয়ে বিশেষ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

রবিবার ভোর রাতে সরাসরি ইসরায়েলের ওপর হামলা শুরু করে ইরান। নজিরবিহীন এ হামলায় ইসরায়েলজুড়ে ব্যাপক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। তিন শতাধিক ড্রোন ও রকেট নিক্ষেপ করেছে ইরান। হামলা হয়েছে ইরাক ও ইয়েমেন থেকেও। জেরুজালেম ও তেলআবিবসহ পুরো ইসরায়েলজুড়ে বেজেছে বিমান হামলার সাইরেন।

বিবিসির নিরাপত্তা সংবাদদাতা ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনারের মতে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের পরিণতি কী হতে পারে তা এখন অনেকটাই নির্ভর করছে ইসরায়েল ঠিক কীভাবে শনিবার রাতে চালানো হামলার জবাব দেয়, তার ওপর।

তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই পরিস্থিতিতে সংযম দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছে। এর মধ্যে এমন অনেক দেশও আছে, যারা ইরানের সরকারকে ঘোরতর অপছন্দ করে। তারাও এখন চাইছে ইসরায়েল যেন নতুন করে এই হামলার জবাব দিতে না যায়।

বিবিসির পার্সিয়ান বিভাগ বলছে, গত রাতের হামলার পরিণতিতে ইরানের কর্তৃপক্ষ তো বটেই, দেশের সাধারণ মানুষও বেশ খুশি। তেহরানের রাস্তায় নেমে তারা উল্লাসও করেছেন। ইসরায়েল যদি নতুন করে আর হামলা না-চালায়, তাহলে ব্যাপারটা এখানেই মিটে যাওয়া ভাল – এমন একটা মানসিকতাও তেহরানে কাজ করছে। তবে ইসরায়েল ইতোমধ্যেই ‘কড়া জবাব’ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।

ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার মনে করেন, ইসরায়েলের ‘ওয়ার ক্যাবিনেট’ বা যুদ্ধ-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা ইরানের এই প্রত্যক্ষ হামলার কোনও জবাব না-দিয়ে হাত গুটিয়ে থাকবে, এই সম্ভাবনা আসলে খুব ক্ষীণ।

প্রথমত, হতে পারে তারা ওই অঞ্চলে তাদের প্রতিবেশীদের কথায় আমল দেবে এবং একটা ‘স্ট্র্যাটেজিক পেশেন্স’ বা ‘কৌশলগত ধৈর্য প্রদর্শনে’র রাস্তায় হাঁটবে। এর অর্থ হল, সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে কোনও পাল্টা হামলা না-চালিয়ে তারা ওই অঞ্চলে ইরানের যে সব ‘প্রক্সি অ্যালাইজ’ বা শরিকরা আছে তাদের ওপর অভিযান চালিয়ে যাবে। এর মধ্যে আছে লেবাননের হিজবুল্লাহর মতো গোষ্ঠী কিংবা সিরিয়াতে ইরানের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ কেন্দ্রগুলো – যার বিরুদ্ধে ইসরায়েল বিগত বহু বছর ধরেই হামলা চালিয়ে আসছে।

দ্বিতীয়ত, ইরান যে ধরনের হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলও দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাল্টা ঠিক সেই ধরনের ‘সাবধানে ও মেপে মেপে’ (‘কেয়ারফুলি ক্যালিব্রেটেড’) হামলা চালাতে পারে – যার নির্দিষ্ট লক্ষ্য হবে ইরানের সেই মিসাইল বেস-গুলো, যেখানে থেকে গত রাতের হামলা চালানো হয়েছিল। তবে ইসরায়েল যদি এই অপশনটা বেছে নেয়, তাহলে ইরান সেটাকেও ‘এসক্যালেশন’ বা যুদ্ধের উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা হিসেবেই দেখবে।

তৃতীয় পথ হতে পারে, ইসরায়েল যুদ্ধের উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টায় আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল – এবং ইরান যেভাবে হামলা চালিয়েছে তার চেয়ে অনেক শক্তিশালী পাল্টা হামলা চালাল।সে ক্ষেত্রে তারা শুধু নির্দিষ্ট মিসাইল বেস-গুলোই নয়, ইরানের অত্যন্ত শক্তিশালী রিভোলিউশনারি গার্ডসের ঘাঁটি, প্রশিক্ষণ শিবির ও কমান্ড-অ্যান্ড-কন্ট্রোল সেন্টারগুলোকেও আক্রমণের নিশানা করবে।

ইসরায়েল যদি এই শেষ দুটো অপশনের কোনওটা বেছে নেয়, তাহলে ইরানকেও অবশ্যই আবারও পাল্টা আঘাত হানার পথে যেতে হবে।

সংঘাতে কি যুক্তরাষ্ট্রে জড়িয়ে পড়তে পারে?

উপসাগরীয় (গালফ) আরব অঞ্চলের ছ’টি দেশেই কিন্তু মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আছে। এছাড়াও তাদের সামরিক ঘাঁটি আছে সিরিয়া, ইরাক ও জর্ডানেও। বহু বছরের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান যে ব্যালিস্টিক ও অন্য নানা ধরনের মিসাইলের বিপুল ভাণ্ডার তৈরি করেছে, মার্কিন এই সামরিক ঘাঁটিগুলো সেই সব ক্ষেপণাস্ত্রের নিশানায় পরিণত হতে পারে।

ইরান দীর্ঘদিন ধরেই আর একটা হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে – তারা যদি আক্রান্ত হয় তাহলে তারা হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেবে।

কৌশলগতভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্রপথটি যদি ইরান মাইন, ড্রোন ও ফাস্ট অ্যাটাক ক্র্যাফট দিয়ে বন্ধ করে দেয়, তাহলে বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম ব্যস্ত রুটটি অচল হয়ে পড়বে এবং বিশ্বব্যাপী তেল সরবরাহের এক-চতুর্থাংশ স্তব্ধ হয়ে যাবে।

অবধারিতভাবে সেটা হবে একটা দু:স্বপ্নের মতো পরিস্থিতি – এবং সে কারণেই বিশ্বের প্রায় সব শক্তিধর দেশ সেই পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।