ইভ্যালি চালাতে পর্ষদে ঢুকতে চান রাসেলের শ্বশুর-শাশুড়ি

বিতর্কিত ইকমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালির দায়িত্বে থাকতে আদালতের গঠন করে দেওয়া পরিচালনা পর্ষদে ঢুকতে চান কম্পানিটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের শ্বশুর-শাশুড়ি ও ইভ্যালির সাবেক একজন নির্বাহী পরিচালক। তারা মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী ইভ্যালির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের নামে থাকা ইভ্যালির শেয়ার কিনে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত হতে চান।

শামীমা নাসরিনের মা ফরিদা তালুকদার, বাবা রফিকুল আলম তালুকদার ও ইভ্যালির সাবেক নির্বাহী পরিচালক এহসান সরওয়ার চৌধুরী বুধবার আদালতে তাদের এ পরিকল্পনা বা ইচ্ছার কথা তুলে ধরেন। পরে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের পরিকল্পনা আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি হলফনামা করে উপস্থাপন করতে বলেছেন।

আদালতে পরিচালনা পর্ষদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোরশেদ আহমেদ খান। রিটকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন।

গ্রাহক ঠকানোর অভিযোগে আলোচিত ই-কমার্স কম্পানি ইভ্যালির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন, তাদের মেয়ে, মা-বাবা ভাই-বোনদের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না গত ৭ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে তা জানতে চান হাইকোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের এ প্রশ্নের জবাব দিতে বলা হয়েছিল।

সেই সঙ্গে ইভ্যালির সাতটি গাড়ি বিক্রির জন্য আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি নিলামে তোলার ব্যবস্থা করতে সুপ্রিম কোর্টের একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রারসহ দুজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন আদালত। নিলামের দিন তাদের নিরাপত্তা ও নিলাম কার্যাক্রমে সহযোগিতা দিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার ও র‍্যাব মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া ইভ্যালির লিগ্যাল টিমের কো-অর্ডিনেটর দাবি করে ইউটিউবে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও প্রচারকারী নিঝুম মজুমদারকে দুই সপ্তাহের মধ্যে হাজির হতে বলা হয়। নইলে তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন আদালত।

ইভ্যালির ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নিতে আদালতের গঠন করে পরিচালনা পর্ষদের এক আবেদনে এ আদেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। এ আদেশের পরদিনই নিঝুম মজুমদার আদালতে হাজির হন। বুধবার তার বাবা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গোলাম সারওয়ার মজুমদার হলফরনামা দাকিল করলে আদালত নিঝুম মজুমদারকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন।

ইভ্যালির অবসায়ন চেয়ে এক গ্রাহকের করা আবেদনে গত বছর ২২ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির সম্পদ বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। আদেশে বলা হয়, বিক্রি, হস্তান্তর বা অন্য কোনো উপায়ে ইভ্যালির সম্পদে কেউ হাত দিতে পারবে না। সম্পদ হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ইভ্যালিকে কেন অবসায়ন করা হবে না, সেই কারণ দর্শাতেও বলা হয়। ওই মাসের ৩০ সেপ্টেম্বর পরবর্তী আদেশের তারিখ রেখে ওই সময়ের মধ্যে ইভ্যালি লিমিটেড, যৌথমূলধনী কম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রার, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নগদ, বিকাশ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য সচিবকে জবাব দিতে বলা হয়।

পরে ৩০ সেপ্টেম্বর রিট আবেদনকারী পক্ষ ফের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের আরজি জানালে ইভ্যালির যাবতীয় নথি তলব করেন হাইকোর্ট। সে অনুযায়ী রেজিস্ট্রার ফর জয়েন্ট স্টক কম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস নথি দাখিলকরলে আদালত গত বছর ১৮ অক্টোবর হাইকোর্ট ইভ্যালির ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নিতে পাঁচ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেন।

এ পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয় আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে। পর্ষদে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. রেজাউল আহসান, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। এ পর্ষদে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন আছেন ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে।

এ পর্ষদে ঢুকতেই রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমার নামে থাকা ইভ্যালির শেয়ার কেনার পরিকল্পনা নিয়েছেন রাসেলের শ্বশুর-শাশুড়ি ও একজন সাবেক নির্বাহী পরিচালক।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ