ইবি ছাত্রলীগ: ‘৪০ লাখে নেতা হয়েছি, ছয় মাসে দ্বিগুণ হবে’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হতে ৪০ লাখের বেশি টাকা ব্যয় করেছেন রাকিবুল ইসলাম রাকিব। তিনি নিজেই এমন তথ্য উল্লেখ করে একই সঙ্গে বলেছেন, ব্যয় হওয়া টাকাটা ছয় মাসের মধ্যেই দ্বিগুণ হয়ে ফিরে আসবে।

সম্প্রতি এক ব্যক্তির সঙ্গে টেলিফোনে কথোপকথনে ইবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাকিব আরো অনেক বিষয়েই কথা বলেছেন। এ সম্পর্কিত সাত মিনিট ২৭ সেকেন্ডের একটি অডিও ক্লিপ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। গত ঈদুল আজহার আগে এই কথোপকথন হয় বলে জানা যায়। তবে ফোনের অন্য প্রান্তের ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

অডিও ক্লিপ থেকে জানা যায়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাহমুদুল হাসান নামের এক ছাত্রলীগকর্মীকে নেতা বানিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা হয়। তাঁর বাড়ি টাঙ্গাইলে। টেলিফোনের অন্য প্রান্ত থেকে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ও ভিসির সঙ্গে মাহমুদুলের ভালো সম্পর্ক। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গেও তাঁর ভালো সম্পর্ক রয়েছে। মন্ত্রীও মাহমুদুলের জন্য সুপারিশ করবেন।

এ প্রান্ত থেকে রাকিব জানান, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর মাধ্যমে তিনি মাহমুদুলকে নেতা বানাতে পারবেন। রাব্বানী তাঁকে আঞ্চলিক দায়িত্ব দিয়েছেন। ফোনালাপে রাকিব বলেন, ‘ঢাকা যায়ে খাটতে হয়। ঢাকা যেয়ে খাটতে বলতে কি, বহুত কাঠখড়ি আছে। তবে এখন আমার যে হিসাব-নিকাশ, রাব্বানী ভাইয়ের সাথে আমার যে সম্পর্ক, এই আঞ্চলিক…এ বিষয়টা আমি যদি ভাইরে বলি ভাই আমার কথা শুনবে। ভাই অলরেডি আমাকে বলেছেও আঞ্চলিক বিষয়গুলো দেখার জন্য।’

কথোপকথনের একপর্যায়ে মাহমুদুলকে নেতা বানাতে খরচ কেমন হতে পারে এমন বিষয় উঠে আসে। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি : তোমার (রাকিব) ইয়ে সম্পর্কে তুমি যেভাবে বলছিলে আর কি, বিভিন্নভাবে কমিটি ভাঙা, গড়া, প্রিন্ট-ইলেকট্রনিক মিডিয়ার খরচটরচ দিয়ে তোমার তো একটা বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয়ে গেছে।

রাকিব : হুমম, হিউজ, হিউজ…।

অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি : সেই ফিগার তো আমি জানি, তা প্রায় মনে হয় চল্লিশের কাছে হবে!

রাকিব : হুমম। না ভাই, শোনেন, কোনো ছেলেরে ইয়ে করতে গেলে…এখন আমার যা খরচ হইছে এটা কোনো ব্যাপার না। ওইটা ছয় মাস গেলে সব ডাবল হয়ে যাবে, সমস্যা নাই। ওরে ফোন দিতে কন, আমি গিয়ে দেখা করে আসবোনি।

অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি : শোভন বা রাব্বানী দুইটা লাইনই তো তুমি কনফার্ম করতে পারবা?

রাকিব: হ্যাঁ, হ্যাঁ, কনফার্ম করতে হবে।

অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি : না, সেটা না, বলছি যে শোভন বা রাব্বানী দুইটা লাইনই তো তুমি কনফার্ম করতে পারবা?

রাকিব : হ্যাঁ, হ্যাঁ, পারব; দুইটাই পারব।

অডিও ক্লিপ থেকে আরো জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আগের কমিটি ভাঙতেও কাজ করেন রাকিব। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করার জন্যই কমিটি ভাঙা হয়। কেন্দ্রীয় সভাপতি শোভনের মাধ্যমে কমিটি ভাঙা হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সাত মিনিট ২৭ সেকেন্ড কথোপকথনের মধ্যে চার মিনিটের একটি অডিও ক্লিপ গত মঙ্গলবার রাতে বিভিন্ন আইডি থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এর আগে গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ড্রাইভার নিয়োগ বাণিজ্য নিয়েও রাকিবের সঙ্গে ওই ব্যক্তির আলাপের একটি ক্লিপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ওই ব্যক্তিকে প্রার্থী জোগাড় করতে বলেন রাকিব। এক মিনিটের ওই ক্লিপ ফাঁস হওয়ার পর ওই দিনই একটি ফেসবুক আইডির বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন রাকিব।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘অডিওটি আমিও শুনেছি। এই কথোপকথন সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। রাকিবকে এর জন্য দলীয়ভাবে কারণ দর্শাতে নোটিশ করা হবে।’