ইউনেস্কোর ‘আইসিটি ইন এডুকেশন’ পুরষ্কারে ভূষিত হল জাগো ফাউন্ডেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শিক্ষা খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি ) সফল ব্যবহারের জন্য ইউনেস্কোর হেড কোয়ার্টার- প্যারিস, ফ্রান্সে জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা  করভি রাকশান্দ  ‘ইউনেস্কো কিং হামাদ বিন ইসা আল-খলিফা’ পুরস্কার গ্রহন করেছেন।

২০০৫ সাল থেকে ইউনেস্কো ইনোভেটিভ শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিয়ে আসছে। ইউনেস্কোর মহা পরিচালক ইরিনা বকোভা, একটি ৫ সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ড এবং আইসিটি খাতে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় জাগো ফাউন্ডেশন এবং আর কিছু সংস্থাকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করেন।

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের মধ্যে আইসিটির (ভিডিও কনফারেন্স)  মাধ্যমে গুণগত মানের শিক্ষা প্রদান করাই হচ্ছে অনলাইন স্কুলের মূল উদ্দেশ্য। এই পুরস্কারটি ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক জুরির চেয়ারম্যান ড্যানিয়েল বারগশ এবং ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বকোভা।

বাহারাইনের উপ-প্রধানমন্ত্রী শায়খ মুহাম্মদ বিন মুবারক আল খলিফা  এবং শিক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী ডঃ মাজেদ বিন আলী আল- নয়ামি’র উপস্থিতিতে ইউনেস্কোর হেড কোয়ার্টারে জাগোর প্রতিষ্ঠাতা জনাব করভি রাকসান্দের হাতে এ পুরস্কার হস্তান্তর করেন।

গ্রামীণফোন লিঃ আর অগ্নি সিস্টেমস লিঃ এর সহায়তায় জাগো ফাউন্ডেশন বর্তমানে ১০টি অনলাইন স্কুল পরিচালনা করছে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এর পাশাপাশি জাগো-র প্রচলিত ধারার তিনটি স্কুলও রয়েছে যেখানে দেশের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর শিশুরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গুণগত মানসম্মত আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সুশিক্ষিত ও দায়িত্বশীল সুনাগরিকে পরিণত হচ্ছে।

করভি রাকসান্দ নিজের বক্তব্যে জাগো ফাউন্ডেশনের গত ১০ বছরের প্রচেষ্টাকে সন্মানীত করার জন্য ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানান। একইসাথে তিনি গ্রামীনফোন লিঃ আর অগ্নি সিস্টেমস লিঃ- কে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান কেননা তাদের সহযোগিতা ছাড়া জাগোর এই ১০ বছরের পথচলা হয়ত এতটা সহজ হত না। তিনি বলেন, এই পুরস্কার শুধুমাত্র জাগো ফাউন্ডেশনের আস্থাকেই জোরদার করবে না বরং গুনগত শিক্ষাকে ছড়িয়ে নিয়ে যাবে বিশ্বের দুরদুরান্তে। ২১শে ফেব্রুয়ারিতে এই পুরষ্কারটি তুলে দেয়ার জন্য তিনি ইউনেস্কোকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান কেননা বাঙালি জাতির জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। ২০১০ সালে বাঙ্গালীর ভাষা আন্দোলনের এই দিনটি ইউনেস্কো থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি  পেয়েছে । তিনি সকল ভাষা শহীদদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং পরবর্তিতে বাংলা ভাষায় সকলকে ধন্যবাদ দিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন।

সে সময় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি স্কুল সরাসরি সংযুক্ত হয় ফ্রান্সের প্যারিস শহরের ইউনেস্কোর হেড কোয়ার্টারের সাথে যেখানে জাগোর একজন শিক্ষার্থী কথা বলে অনুষ্ঠানে থাকা অতিথিদের সঙ্গে এবং বাংলাদেশ নিয়ে ছোট একটি প্রেজেন্টেশন পরিবেশন করে। এভাবে জাগোর বাচ্চাদের সাথে সুদূর প্যারিস থেকে সরাসরি কথা বলতে পেরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা অনলাইন স্কুল প্রোগ্রামের প্রশংসা করেন।

 

জাগো ফাউন্ডেশন:

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে ২০০৭ সালে জাগো ফাউন্ডেশন একটি স্বপ্নময় যাত্রা শুরু করে। ঢাকার রায়েরবাজারের বস্তির মধ্যে একটি ছোট রুম, একটি সাদা বোর্ড ও ১৭ জন  সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে এই  স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যায় কিছু তরুন। ঢাকায় ২টি  স্কুল স্থাপনের পর জনাব করভি  উপলব্ধি  করেন  যে যদি গ্রামাঞ্চল অগ্রসর না হয় তাহলে বাংলাদেশ অগ্রসর হবে না । দেশের দূরবর্তী অংশে গুনগত মানের  শিক্ষকের  ভীষণ অভাব, যা সেই পথ চলার সবচাইতে বড় বাধা ছিল। ঠিক সেই সময়ে জাগো পরিবার তাদের সমস্যার সমাধান হিসেবে বেছে নিয়েছিল প্রযুক্তিকে । প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের ভিতরে থাকা শিশুদেরকে  শিক্ষা পৌঁছে দেয়া সম্ভব- এই ধারণা থেকে শুরু হয় “অনলাইন স্কুল” নামের নতুন একটি সম্ভাবনা। ঠিক সেই সময়ে, বেশীরভাগ মানুষের কাছ হাস্যরসের বিষয়বস্তুতে পরিণত হওয়া  তাদের এই ধারনাটি বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে গ্রামীণফোন  এবং অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেড।

গ্রামীণফোন ব্যান্ডউইডথ  এবং অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেড আইটি সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোগত সহায়ক হিসেবে পাশে দাড়ায়। সেই সময় জাগো ফাউন্ডেশন পাঠ্যক্রম এবং কারিকুলাম গঠনে এগিয়ে যায়, পাশাপাশি স্পন্সর এ চাইল্ড প্রোগ্রামের মাধ্যমে  সাধারণ বাংলাদেশীরা  এগিয়ে  আসেন আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে। একটি অনলাইন স্কুল দিয়ে শুরু হওয়া এই প্রজেক্টটি আজ রূপ নিয়েছে ১০টি অনলাইন স্কুলে  যেখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ১৫০০ সুবিধাবঞ্চিত শিশু বিনামূল্যে গুণগত মানের শিক্ষা অর্জন করছে।

 

অনলাইন  স্কুলের মাধ্যমে ঢাকার দূরবর্তী একটি গ্রামের ক্লাস রুমে বসে থাকা শিশুরা  ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকায়  বসে থাকা  মানসম্মত শিক্ষকদের  সাথে সংযুক্ত হয়। অন্যদিকে সেই গ্রামের স্কুলে আরও  দুইজন সহকারী শিক্ষক শ্রেণীকক্ষের বিভিন্ন কাজ পরিচালনা করেন।

 

এই অনলাইন স্কুল মডেলটি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের পাশাপাশি ই-৯ অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতেও গুণগত মানের শিক্ষা প্রদান করা সম্ভব । ভবিষ্যতে এই অনলাইন  স্কুলের মডেলটি  শুধু বাংলাদেশেই নয় পুরো বিশ্বে শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্র্য  বিমোচনে আদর্শ মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে- এটাই পুরো জাগো পরিবারের বিশ্বাস।

 

পুরস্কার সম্পর্কে:

২০০৫ সাল থেকেই ‘ইউনেস্কো কিং  হামাদ বিন ইসা আল-খলিফা পুরস্কার’-টি শিক্ষাখাতে প্রযুক্তির সফল ব্যবহারকে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। এই পুরস্কারের মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষা খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি ) ব্যবহারের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের মধ্যে গুণগত মানের শিক্ষা প্রদান করা। ইউনেস্কো কিং  হামাদ বিন ইসা আল-খলিফা পুরস্কার ২০১৬ এর বিষয়বস্তু  ছিল আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়া।

স/শ