ইউক্রেন যুদ্ধ কি ৯ মে শেষ হচ্ছে?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

‘যদি তুমি তোমার নিজেকে এবং শত্রু সম্পর্কে ভালো জানো। তবে, শত যুদ্ধ হলেও তার ফল নিয়ে তোমার দুশ্চিন্তার কিছু নেই। যদি তুমি শুধু তোমার নিজেকে চেনো, তাহলে বিজয়ের পরও হেরে যাবে। আর নিজ এবং শত্রু দুটিই তোমার অজানা থাকলে, যে কোনো যুদ্ধেই মারা পড়বে।‘

চীনের প্রাচীন বিখ্যাত সমরবিদ সান জু’র আর্ট অভ ওয়ার বইয়ে ‘হামলার কৌশল’ নামে তৃতীয় অধ্যায়ের ১৮ নম্বর অনুচ্ছেদে এ কথা বলা হয়েছে। ইউক্রেনে গেল ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ার যে আগ্রাসন চলছে; তাতে পুতিন তার নিজের ও শত্রু সম্পর্কে কতটা জানেন, তা বিচারের সময় এখনও আসেনি। তবে, শত্রু সম্পর্কে পুতিন যে খুব বেশি জানতেন না, সেটি প্রথমদিকে তার সেনাবাহিনীর মার খাওয়ার পরিস্থিতিই বলে দেয়। প্রাথমিক সেই ধাক্কা কাটিয়ে এখন অনেকটাই সবল রুশ বাহিনী। কিন্তু, পশ্চিমাদের অস্ত্র-শস্ত্রে বলিয়ান ইউক্রেনের সেনারাও মাতৃভূমি রক্ষায় প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছেন।

 ধারণা করা হচ্ছে, যুদ্ধ বন্ধের কোনো প্রস্তাব নিয়েই হয়তো দেশদুটি সফর করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। যাতে থাকতে পারে পশ্চিমাদের দাবিগুলো। তবে, ৯ মে পুতিন এই যুদ্ধ সমাপ্তির ঘোষণা দিলেও, ইউক্রেনের হৃদয়ে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, আগামীদিনে তাতে বিস্ফোরণ হতে পারে।

যুদ্ধে দুপক্ষের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছুই জানা যাচ্ছে না। পশ্চিমা গণমাধ্যম ও সমরবিদরা নানা তথ্য ও ধারণার ওপর ভিত্তি করে কিছু পরিসংখ্যান দিযেছেন। ব্রিটেন বলছে, ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত অর্থাৎ প্রথম দুই মাসে রাশিয়ার অন্তত ১৫ হাজার সেনা নিহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, প্রথম দুই সপ্তাহে ইউক্রেনের হাজার চারেক সেনা নিহত হযেছে। যদিও ইউক্রেন সরকার বলছে, ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত তাদের হাজার তিনেক সেনা নিহত হয়েছে।

সংখ্যা যাই হোক, যুদ্ধের প্রথম দুই মাসে দুপক্ষেরই ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যার বড় শিকার সাধারণ মানুষ। ইউক্রেন থেকে আধা কোটির বেশি মানুষ, আশপাশের দেশে চলে গেছেন। আর দেশটির ভেতরে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৬৫ লাখের বেশি।

ন্যাটোসহ বিভিন্ন পশ্চিমা সংস্থা ও রাষ্ট্রপ্রধানদের শঙ্কা, এই যুদ্ধ বছরের পর বছর চলতে পারে। তবে, ভিন্নমতও আছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৯ মে বড় কোনো ঘোষণা দিতে পারেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দিনটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর আত্মসমর্পণের। যা রাশিয়ায বেশ ঘটা করে পালন করা হয়।

রুশদের এমন জাতীয় উৎসবে হয়তো ইউক্রেন যুদ্ধে বিজয়ের ঘোষণা দিতে পারেন পুতিন। কারণ, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের নাম দেয়া হয়েছে, নিরস্ত্রীকরণে বিশেষ অভিযান। ক্রেমলিনের দাবি, ইউক্রেনে রুশপন্থীদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন-নিপীড়ন চলে। নিপীড়িত সেই মানুষগুলোকে বাঁচাতে বিশেষ এই অভিযান চালাচ্ছেন পুতিন।

গোটা ইউক্রেন দখলে ব্যর্থ হয়ে দেশটির পূবদিকের খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চল দোনবাসে মনোযোগ দিয়েছে রাশিয়া। একে তারা যুদ্ধের দ্বিতীয় ধাপ বলছে। তবে, মাঝে-মধ্যেই ইউক্রেনের বিভিন্ন অংশে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আতঙ্কের আবহ ধরে রাখছে রুশ বাহিনী। দোনবাসের দুটি অংশ লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক।

২০১৪ সালে রাশিয়া যখন ক্রিমিয়া দখল করে, তখন লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় রুশপন্থীরা। এবারের আগ্রাসন শুরুর আগেই ওই অঞ্চল দুটিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। মস্কোর দাবি, এরইমধ্যে লুহানস্কের ৯৩ শতাংশ ও দোনেৎস্কের ৫৪ শতাংশের দখল নিয়েছে তারা।

এই অঞ্চল থেকে ক্রিমিয়া পর্যন্ত সরল রেখা টানলে খেরসন, মেলিতোপোল ও মারিওপোল পড়ে। যুদ্ধের প্রথম দিকেই খেরসন ও মেলিতোপোল দখলের দাবি করেছে রুশ বাহিনী। আর প্রায় দখলের পথে রয়েছে মারিওপোল। অর্থাৎ অ্যাযভ সাগর তীরে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে রাশিয়া। আগামী দিনে ভূরাজনীতিতে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের রাশিয়া ও ইউক্রেন সফরের পর আবারও শান্তি আলোচনার দাবি জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যদিও জাতিসংঘ মহাসচিবের কিয়েভে সফরকালে, শহরের পাশে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রুশ বাহিনী। যাতে নারী সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন প্রাণ হারান। কিন্তু রাশিয়ার বদলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সমালোচনায় মুখর হন গুতেরেস।

এখনও যুদ্ধ বন্ধ করতে না পারায় কাঠগড়ায় দাঁড় করান নিরাপত্তা পরিষদকে। ধারণা করা হচ্ছে, যুদ্ধ বন্ধের কোনো প্রস্তাব নিয়েই হয়তো দেশদুটি সফর করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। যাতে থাকতে পারে পশ্চিমাদের দাবিগুলো। তবে, ৯ মে পুতিন এই যুদ্ধ সমাপ্তির ঘোষণা দিলেও, ইউক্রেনের হৃদয়ে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, আগামীদিনে তাতে বিস্ফোরণ হতে পারে।

লেখক: বার্তা সম্পাদক, চ্যানেল 24।

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ