ইংরেজির ‘ফেরি বোট’ বাংলায় কীভাবে ‘লঞ্চ’ হল?

নদীমাতৃক বাংলাদেশে ‘লঞ্চ’ শব্দটি বহুল ব্যবহৃত এবং পরিচিত একটি শব্দ, বিশেষত দক্ষিণাঞ্চল এবং বন্দর এলাকার মানুষের কাছে। নদীপথে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন উভয় কাজে ব্যবহৃত এই নৌযান নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী ভ্রমণের জন্য জনপ্রিয়ও।

কিন্তু এই নৌযানটিকে বাংলা ভাষায় লঞ্চ কেন বলা হয় তা এক ধাঁধাঁ বটে।

কারণ এ অঞ্চলে লঞ্চ বলতে যে আকৃতির নৌযানকে বোঝানো হয়, ইংরেজি ভাষায় কিংবা ইউরোপের দেশগুলোতে এ যানকে ‘ফেরি বোট’ বলে পরিচিত।

ভাষাতত্ত্ববিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ শাহরিয়ার রহমান বলেছেন, এ শব্দটি এসেছে মূলত পর্তুগিজ ‘লাঞ্চা’ শব্দ থেকে।

তিনি আরও বলেন, “লাঞ্চা থেকে লাঞ্চ বা ক্যারিয়ার শব্দটি এসেছে। পর্তুগিজ থেকে ইংরেজি ভাষায় গেছে এ শব্দ। লাঞ্চা থেকে লঞ্চার শব্দ এসেছে।

এ শব্দের মানে কোনকিছুকে বহন করে একদিকে ধাবিত করানো। এখন জাহাজের ছোট সংস্করণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে- সেটাও ব্রিটিশদের হাত ধরেই এসেছে এখানে।”

লাঞ্চা ব্যবহার করা হত মূলত সাগরে রণতরীতে বহন করা বড় নৌযান হিসেবে।

একইভাবে ইউরোপে ১৮শ’ শতকে কোনও জাহাজকে নোঙ্গর করার কাজে লঞ্চ নামে মাঝারি আকৃতির নৌযান ব্যবহার করা হত।

ওই সময়ের লঞ্চগুলো এখনকার মত বড় ছিল না, ছোট আকৃতির হত।

এছাড়া ইউরোপে প্রতিযোগিতামূলক নৌকাবাইচে লঞ্চ নামে একটি নৌযান ব্যবহার করা হত, এ শব্দ দিয়ে এক ধরনের হুড খোলা স্বল্প ক্ষমতার মোটরচালিত নৌকাকে বোঝানো হত।

ইংল্যান্ড এবং ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশে মোটরচালিত প্রমোদতরীকে লঞ্চ বলা হত।

পরবর্তীতে আঠার শতকের শেষের দিকে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের হাত ধরে এ অঞ্চলে যখন স্টিমার বা জাহাজ চালু হয়, তারও নোঙর করার কাজে ছোট আকৃতির নৌযান আনা হয়।

এরপর এ অঞ্চলে উনিশ শতকের শুরুতে যখন নৌযানের সঙ্গে মোটরচালিত ইঞ্জিনজুড়ে দেওয়া হয়, তখন সেসব নৌযানের নাম দেওয়া হয় লঞ্চ।

এ অঞ্চলে শুরুতে চালু হয়েছিল প্যাডেল স্টিমার, তারপর কয়লাচালিত স্টিমার।

এক সময় দেশের নদীপথে অনেক জায়গাতেই নাব্যতা সংকটের কারণে সেগুলো চলায় সমস্যা দেখা দেয়।

লঞ্চ কম গভীর পানিতে চলতে পারে বলে এই সময়েই ব্যাপকভাবে লঞ্চ জনপ্রিয় হয়, কারণ এর নির্মাণশৈলী স্টিমারের চেয়ে একটু আলাদা।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে দূর-যাত্রায় এক সময় প্রধান বাহন ছিল এই লঞ্চ। এখনও লঞ্চ দক্ষিণাঞ্চলের জন্য অন্যতম প্রধান বাহন।

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন