আ. লীগের কাছে সাঁওতালদের পক্ষে ১০ দফা প্রস্তাব

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল উচ্ছেদের ঘটনায় জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি সেখানকার সাম্প্রতিক ও সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরিস্থিতি উত্তরণে ১০ দফা প্রস্তাব দিয়েছে আওয়ামী লীগকে।

 

এ দুটি সংগঠনের সাত জন নেতা শুক্রবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যৌথসভায় ১০ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। বিকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন তারা। প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা ধরে বৈঠক চললেও বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

 

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, ‘যেখানে সাঁওতালদের বসতবাড়ি, জমি-ঘর ছিল ঠিক সেই জায়গাটি তারা ফেরত চেয়েছে। সাঁওতালরা বাইরে থাকার কথা ভাবছে না। তাছাড়া গুচ্ছ গ্রামে থাকতেও অভ্যস্ত নয় তারা। যে জমি থেকে সাঁওতালদের উৎখাত করা হয়েছে, সেখানে তাদের পূর্বপুরুষদের সমাধিসৌধ, উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে।’

 

রবীন্দ্রনাথ সরেন আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবি-দাওয়া পেশ করেছি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আমাদের আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে অবশ্যই এর সমাধান করবেন। তবে তার আশ্বাসে তখনই স্বস্তি পাব যখন দেখব গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে, মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে, সরকার আর্থিক সহায়তা করছে। তার আগ পর্যন্ত আদিবাসী ও সাঁওতাল পল্লীর মানুষরা শঙ্কিত। সেখানে ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। দুই দিন আগেও পুলিশ আর সন্ত্রাসী বাহিনী সেই গ্রামে গিয়েছে, ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে।’

 

বৈঠকে রবীন্দ্রনাথ সরেন ছাড়াও সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সহ-সভাপতি ফিলিমন বাস্কে, গণেশ মুর্মু, প্রভাত টুডুসহ সাত জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। সাঁওতালদের পক্ষে দেওয়া দুই সংগঠনের ১০ দফা প্রস্তাব হলো- ১. সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মে ভূমি নিয়ে আক্রান্ত সাঁওতালদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ২. নষ্ট করা খেতের ফসল, পুকুরের মাছের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৩. হামলায় নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ও পুর্নবাসন করতে হবে। ৪. পুড়ে যাওয়া বাসস্থান, স্কুল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অবিলম্বে তৈরি করে দিতে হবে। ৫. ফার্ম এলাকার অধিবাসীদের বসতঘেষা কাঁটাতারের বেড়া তুলে দিতে হবে। এই কাঁটাতারের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচল, গবাদি পশু চরানোসহ নিত্যদিনের সব কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। ৬. হামলার পরিকল্পনাকারী, ইন্ধনদাতা ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণসহ তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ৭. পক্ষপাতদুষ্ট ইউএনও ও ওসিকে প্রত্যাহার এবং তাদের শাস্তি প্রদান করতে হবে। ৮. সাঁওতালদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগকারী পুলিশ ও তাদের নির্দেশ দানকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। ৯. রংপুর চিনিকল অচল হয়ে যাওয়ার পরে সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মের জমি অধিগ্রহণের শর্ত ভঙ্গ করে ইজারা দেওয়ায় মিল কর্তৃপক্ষের অবৈধ কাজ ও দুর্নীতির তদন্ত করতে হবে। ১০. ১৯৬২ সালের চুক্তির ধারা মোতাবেক যে সব পরিবারের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল তাদের নিকট তাদের পূর্বতন ভূমি আইনি অধিকারসহ ফিরিয়ে দিতে হবে।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন