আড়ানী পৌর মেয়র মুক্তারের মারপিটে পঙ্গু যুবলীগ নেতা আজিবর

বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি:
গ্রেফতারকৃত রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর মেয়র মুক্তার আলীর মারপিটে ৬ মাস থেকে পঙ্গু অবস্থায় বাড়িতে পড়ে আছেন যুবলীগ নেতা আজিবর রহমান। আজিবর রহমান আড়ানী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি।

জানা যায়, আজিবর রহমান চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারী নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করেন। নৌকার পক্ষে কাজ করার অপরাধে নির্বাচনের এক সপ্তাহ পর তাকে হাতুড়ি ও লোহার রড় দিয়ে পিটিয়ে এক পা ভেঙ্গে দেন মেয়র মুক্তার আলী ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। এই ঘটনায় মুক্তার আলীকে প্রধান আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। তারপর থেকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য মেয়র মুক্তার আলী বারবার হুমকি প্রদান করেন। এমনকি মামলা তুলে না নিয়ে এক পা যেভাবে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে, প্রয়োজনে আরেক পা ভেঙ্গে প্রানে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেয়া হয় বলে আজিবর রহমান এ প্রতিবেদককে শুক্রবার (৯ জুলাই) জানান।

বর্তমানে আজিবর রহমান রুস্তমপুরের নিজ বাড়িতে রয়েছে। পঙ্গু হবার কারনে একটি বেসরকারি ওষধ কম্পানিতে কাজ করতে না পেরে চাকরিটাও হারিয়েছে। বর্তমানে ৪ সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে মহাবেকায়দায় রয়েছেন। আজিবর রহমান কাঁদকে কাঁদতে জানান, ঘরে খাবার নেই, টাকাও নেই। কি করে সংসার চালাবো। বর্তমানে ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি। মেয়র মুক্তার গ্রেফতারের আগে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে আড়ানী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামলীগের সভাপতি ও রুস্তমপুর গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন বলেন, মেয়র মুক্তার আলী একজন বেপরোয়া মানুষ ছিলেন। তার অত্যাচারে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমরাও অতিষ্ট ছিলাম। তার কাছে কেউ কোন কাজ নিয়ে গেলে কাজ করে দেয়ার পরিবর্তে লাঞ্চিত হতে হয় বেশি মানুষকে। প্রয়োজন হলেও তার কাছে থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করতাম।

মেয়র মুক্তার আলীর বিষয়ে আড়ানী নুরনগর এলাকার একটি মসজিদ কমিটির সভাপতি জানান, আমাদের মসজিদে ছাদ ঢালায়ের কাজ চলছিল। মেয়র হওয়া পরে তার কাছে গিয়ে বিয়য়টি জানাতেই আমাদের কয়েকজনের উপর মারমুখি হয়ে উঠলেন। নিরুপায় হয়ে তার কাছে থেকে চলে আসতে হয়।

এদিকে স্থানীয় এক ব্যক্তির মেয়ের বিয়েতে মুক্তারকে দাওয়াত দিতে গেলে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্চিত করে তাড়িয়ে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

মুক্তার আলীর বাহিনীরা মাস চারের আগে এক রাজ মিস্ত্রিকে আড়ানী পৌর বাজার থেকে কৌশলে তার আস্তায় জোরপূর্বক দখলে রাখা পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে তার মোটরসাইকেল নিয়ে নেন বলে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নেয়। পরে স্থানীয় এক আ.লীগের নেতার তদবিরে তার বাহিনীদের টাকা দিয়ে সমাধান করে নেয়া হয়।

মুক্তার আলীর শুধু এই ঘটনায় না তার বিরুদ্ধে পৌরসভার কার্যালয়ে নাইট গার্ড লিটন আলীকে মারপিট করে মুখের তিনটি দাঁত ভেঙ্গে দেয়া হয়। কিন্তু মুক্তার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে কেউ কোন অভিযোগ দেয়ার সাহস পায়নি। মুক্তার আলীর পরিবারটাই অত্যাচারী। তার পিতা নইম ডাকাত হিসেবে এলাকায় পরিচিত। পুরো নাম নউম উদ্দিন প্রামানিক। তার পিতাকে মানুষ অতিষ্ট হয়ে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এছাড়া তার ভাই কালু প্রামানিককে এলাকার মানুষ প্রকাশ্যে ধারালো হাসুয়া দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (৯ জুলাই) দিবাগত রাতে পাবনার ঈশ্বর্দী উপজেলার ফুরফুরা মাজার শরীফের পেছন এলাকায় তার আতœীয় ভাইরা ভাই এর বাড়ি থেকে মুক্তার আলীকে গ্রেফতার করেন পুলিশ। পরে। আড়ানী পৌরসভার পিয়াদাপাড়া মহল্লায় তার উপস্থিতিতে নগদ ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা, ১০ গ্রাম গাজা, ৪ বোতল ফেন্সিডিল, ১৬ ইঞ্চি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া মঙ্গলবার (৬ জুলাই) দিবাগত রাতে নগদ ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, চারটি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে একটি পিস্তল, তাজাগুলি ৪৩টি, ব্যবহৃত গুলি ৪টি, ২০ পিচ ইয়াবা, ১০ গ্রাম গাজা, ০.৭ গ্রাম হেরোইন, একটি সাড়ে ১৬ লাখ ও আরেকটি দেড় লাখ টাকার চেক উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় তার স্ত্রী জেসমিন, ভাতিজা সোহাগ ও শান্তকে গ্রেফতার করে।

মেয়ের মুক্তার আলী আড়ানী পৌর আওয়ামীলীগে বহস্কিৃত সাংগঠনকি সম্পাদক, তিনি চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারী পৌর নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে মেয়র নির্বাচিত হন।

বর্তমনে মেয়র মুক্তার আলী রাজশাহী কারাগারে রয়েছে। তার সাথে আরো আটক রয়েছে তার স্ত্রী জেসমিন বেগম, শ্যালক রজন আহম্মেদ ভাতিজা শান্ত ও সোহাগ। মুক্তারের নামে থানায় আটটি মামলা চলমান রয়েছে বলে ওসি নজরুল ইসলাম জানান।

স/জে