আশঙ্কাজনকভাবে ধুমপানে আশক্ত হচ্ছে রাজশাহীর স্কুল শিক্ষার্থীরা

ইউসুফ আলী:

সিগারেট বা অন্য যে কোন তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের ৩০ শতাংশ জায়গা জুড়ে বড় করে লিখা থাকে ‘ধুমপান মৃতু ঘটায়’, ‘ধুমপান ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ’, ‘ধুমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর’ এসব স্বাস্থ্য সতকবার্তা। কিন্তু এসব সতর্কবাতা উপেক্ষা করে দেশের অনেক মানুষ আজ ধুমপানের প্রতি আসক্ত।

 

রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত পাড়া-মহল্লা কোথায় নেই ধুমপানকারীদের আনাগেনা। চোখ মেললেই চারিদিকে যেন নজর পড়ে ধুমপায়ীদের ছাড়া সিগারেটের কালো ধোয়া। আবার কখনো কখনো ধুমপায়ীদের ছাড়া ধোয়ায় নাক দিয়ে নি:শ্বাস নেওয়াও দায় পড়ে অধুমপায়ীদের কাছে।

cigarette-1419254709

 

শিশু, কিশোর, যুবক মধ্যবয়স্ক বৃদ্ধ সব শ্রেণির মাঝেই ধুমপায়ীরা বিচরণ করে চলেছেন অনায়াসে। প্রকাশ্যে ধুমপান করার জন্য সরকার ১০০ টাকা করে জরিমানার বিধানও করেছেন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। বরং প্রকাশ্যে ধুমপানই যেন এখন মানুষের বিলাশিতায় রুপ নিয়েছে।

 

তবে সবচেয়ে বেশি আশঙ্কার বিষয় হলো রাজশাহীতে উদ্বেজনক হারে বাড়ছে স্কুল শিক্ষার্থীদের মত কমল শিশু কিশোরদের ধুমপানের প্রতি আসক্ত হওয়ার পরিমাণ। ফলে অল্প বয়সে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে এ সব শিক্ষার্থীরা ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১০ম ও ৯ম শ্রেণির ছাত্ররা বেশী ধুমপানের সাথে জড়িয়ে পড়লেও এদের সাথে সঙ্গ দিচ্ছে ৮ম শ্রেণি, ৭ম শ্রেনী থেকে শুরু করে তার নিচের ক্লাসের শিক্ষার্থীরা। বন্ধুদের সাথে তাল মিলিয়ে স্কুলের টয়লেটে বা স্কুলের পাশে, কখনো কখনো প্রকাশ্যেই বা অলি-গলিতে ধুমপানে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে।

images
মফস্বল এলাকার স্কুল থেকে শুরু করে শহর এলাকার স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধুমপানে আশক্ত হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এমনকি এর আসক্তি থেকে বাদ পড়েনি মাদরাসার ছাত্ররাও।
পবা উপজেলার এমআরকে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: লুৎফর রহমান তার স্কুলে গুটি কয়েক শিক্ষার্থী ধুমপানে আসক্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে সিল্কসিটি নিউজকেবলেন, এতোটুকু এতোটুকু ছেলেরা ধুমপানে আশক্ত হয়ে পড়ছে। এদের নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গড়ে তোলার দরকার।

 

  • একই স্কুলের একজন শিক্ষার্থী বলে, স্কুলের প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে অন্তত ৫০ জন ধুমপানে আসক্ত। তিনি আরো বলেন বন্ধুদের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতেই আমি ধুমপানের প্রতি আশক্ত হয়ে পড়ি। আস্তে আস্তে এখন এটা আমার কাছে অনেকটা নেশার মত হয়ে গেছে ।

শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: মনোয়রুজ্জামান সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, এটা অনেকটা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়ে গেছে। ফলে স্কুল শিক্ষার্থীদের অনেকেই এর প্রতি আশক্ত হচ্ছে। তার স্কুলে ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী  ধুমপানে আশক্ত বলে জানান তিনি।

45
অগ্রনী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, মাদকের ব্যাপারে আমরা অনেক সচেতন। তারপরও কেউ এর সাথে জড়িয়ে পড়লে তাকে ট্রান্সফার সাটিফিকেট দিয়ে দেওয়া হয়। স্কুলের বেশ কয়েকজন ছাত্র ধুমপানের সাথে জড়িত বলে প্রতিবেদককে জানান এই স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থী।
তিনি আরো বলেন, ধুমপানের প্রতি স্কুল শিক্ষার্থী আশক্ত হওয়ার প্রবনতা আগের চেয়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

 

  • অন্য একজন মাদ্রাসা শিক্ষক বলেন, আগে মাদরাসার ছাত্রদের মধ্যে ধুমপানের অভ্যাস না থাকলেও এখন কেউ কেউ এতে আশক্ত হচ্ছে। এটি খুবই খারাপ দিক।

এদিকে নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি স্কুলে একটি মাদক বিরোধী কমিটি গঠন করতে হয়। তাই সকল স্কুলে এ কমিটির অস্তিত্ব খাতায় থাকলেও কার্যক্রম নেই অনেক স্কুলে ।

 

  • এ প্রসঙ্গে একজন শিক্ষক সিল্কসিটি নিউজকে বলেন,  মাদক বিরোধী কমিটি গঠন করা বাধ্যতামূলক হলেও এ কমিটি কিভাবে কাজ করবে তার কোন নির্দেশনা নেই আবার কাজের কোন তদারকি নেই। তাই শিক্ষার্থীরা ধুমপানের প্রতি ব্যাপক ভাবে আসক্ত হলেও এটি প্রতিরোধে সচেতনতামুলক কোন কর্মসূচী নেই মাদক বিরোধী এই কমিটির

এদিকে রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার উপ-পরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী জানান- প্রতিটি স্কুলে মাদক বিরোধী কমিটি গঠন করা হয় । তাই এ বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ করে থাকেন। তাছাড়া স্কুলের শিক্ষার্থীরা ধুমপানের প্রতি আসক্ত হচ্ছে এমন কোন তথ্য প্রমাণ এখন পযর্ন্ত তাদের কাছে নাই। তবে প্রমাণ সাপেক্ষে এ ব্যাপারে তথ্য পেলে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

স/আর