আল্লাহ তাকে ভালো রেখেছে, সে সুস্থ আছে: মুফতি হান্নানের স্ত্রী

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: কাশিমপুর কারাগারে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। সাক্ষাত শেষে মুফতি হান্নানের স্ত্রী জাকিয়া পারভীন রুমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার স্বামী ভালো আছে, সুস্থ আছে। আল্লাহ তাকে ভালো রেখেছে। সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে আমার স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে। আমার স্বামী জঙ্গি সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে জড়িত ছিল না। তার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে।’

এর আগে, বুধবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৭টার দিকে মুফতি হান্নানের সঙ্গে দেখা করতে কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছান পরিবারের চার সদস্য। তারা হলেন মুফতি হান্নানের বড় ভাই আলিমুজ্জামান মুন্সী, স্ত্রী জাকিয়া পারভীন রুমা, বড় মেয়ে নিশি খানম ও ছোট মেয়ে নাজরিন খানম।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বুধবার সকাল ৭টার দিকে মুফতি হান্নানের দুই মেয়ে, স্ত্রী ও বড় ভাই কারাগারে পৌঁছান। কারা কর্তৃপক্ষের ডাকে সাক্ষাতের উদ্দেশে এর আগে তারা কারাগারের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে সকাল পৌনে ৮টার দিকে তাদেরকে সাক্ষাতের জন্য ভেতের পাঠানো হয়। সকাল সোয়া ৮টা থেকে আনুমানিক ৯টা পর্যন্ত তারা কথা বলেছেন।’

সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘মুফতি হান্নানের সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের পরিবারের কেউ সাক্ষাতের জন্য আসেননি।’

মুফতি হান্নানের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে কাশিমপুর কারাগার থেকে পাঠানো চিঠি তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া থানায় পৌঁছায় মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে। খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই কোটালিপাড়া থেকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন মুফতি হান্নানের পরিবারের সদস্যরা।

তবে মুফতি হান্নানের মা রাবেয়া বেগম তার ছেলের সঙ্গে দেখা করতে আসবেন না, এটা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। এর আগে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মুফতি হান্নান সরকারের কাছে অপরাধী হলেও আমার কাছে নয়। সে কি ধরনের কাজ করেছে তা জানি না। তবে আমার সামনে কখনও খারাপ কাজ করেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার তাকে শাস্তি দিলেও তাতে তার আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের নিরপরাধ মানুষগুলোকে যেন হয়রানি করা না হয়।’

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন, নিয়ম অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালেই মুফতি আবদুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলের সঙ্গে স্বজনদের দেখা করতে বলা হয়।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে গ্রেনেড হামলায় আনোয়ার চৌধুরীসহ আরও অনেকে আহত হন। নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন। পরে পুলিশ বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি-বি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সম্পূরক চার্জশিটে আরেক জঙ্গি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালের নাম অন্তর্র্ভুক্ত করা হয়।

২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ও মুফতি মঈনউদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এরপর উচ্চ আদালতে তারা আপিল করলে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এরপর তারা রিভিউ আবেদন করলে সেটাও গত ২২ মার্চ খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।

 

সূত্র: বাংলাট্রিবিউন