আলুর ভলো ফলনে হাসি নেই কৃষকের মুখে

শাহিনুল ইসলাম আশিক:

মাঠে মাঠে আলু উঠতে শুরু করেছে। রাজশাহী জেলায় এবছর আলুর ভালো ফলন হয়েছে। ভালো ফলন হলেও দামে হতাশ কৃষকরা। উৎপাদন খরচ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তারা বলছে, দাম কম থাকার সুবাদে প্রান্তিক চাষিদের থেকে আলু কিনছেন ব্যবসায়ীরা। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, এবছর জেলায় আলুর আশানুরূপ ফলন হয়েছে। এবছর আলুচাষ হয়েছে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে। আর গত বছরের চাষ হয়েছে ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের তুলনায় তিন হাজার হেক্টর কম জমিতে চাষ হয়েছে।

সরজমিন পবার বাগধানী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা আলু উঠাতে ব্যস্ত সময় পার করছে। খেতমজুর আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এবছর আলু বস্তা ছোট করে ৫০ কেজি করা হয়েছে। তবে প্রতিটি বস্তা ৫৫ কেজি করে আলু থাকছে। এক বস্তা আলু ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, আলুর ফলন ভালো হলেও দাম কম। উৎপাদন খরচ তুলতে হিমসিম খাচ্ছে কৃষক। গত বছর ৯৫ কেজির এক বস্তার দাম ছিলো ৯’শ টাকা। কিন্তু এবছর দুই বস্তা আলু বিক্রি করে ৯’শ টাকা পাওয়ংা যাচ্ছে না। এক বিঘা জমিতে ৯০ বস্তা আলু উঠছে। প্রতিটিতে ৫০ থেকে ৫৫ কেজি ধরছে। বিগত বছর ৪৫ বস্তা আলু হতো। প্রতিটি বস্তা ৯৫ কেজি আলু ধরতো।
আলুচাষি সফিকুল ইসলাম বলেন, এক মজুরের দৈনিক মজুরি ৩’শ থেকে সাড়ে ৩’শ টাকা। তারা সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে একটা পর্যন্ত। এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে এক বস্তা টিএসপি, দুই বস্তা ইউরিয়া, তিন বস্তা পটাস, জিংক দুই কেজি, দানাদার বিষ দুই কেজি। এছাড়া লিজ নিয়ে এক বিঘা জমি নিতে হচ্ছে আট হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায়।

তিনি আরো বলেন, এক বিঘায় সবমিলে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এছাড়া এক বস্তা হিমাগারে পৌঁছাতে ১৫ থেকে ২০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। এতো গেলা মাঠ থেকে পৌঁছানোর খরচ। হিমাগারে একটি বস্তা আলু কত টাকা ধরা হবে নিদ্ধারণ করা হয়নি। আর গতবছর হিমাগারে ৯৫ কেজির এক বস্তা আলু রাখতে খরচ হয়েছিলো ৩৬৬ টাকা। ৫০ কেজির এক বস্তা আলু এবার শুনছি প্রায় ২০০ টাকা ধরা হবে। তবে হিমাগার মালিকরা কিছু জানায়নী।

তেঘর এলাকার আলুচাষি সোহেল রানা বলেন, সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। হিমাগারের চাহিদা অনুযায়ী ৫০ কেজির বস্তা করতে হবে। কিন্তু ব্যবসায়ী এসে ৫৫-৬০ কেজি করে বস্তায় আলু নিচ্ছে। তারা আলু দাম দিচ্ছে প্রতি বস্তা ৪’শ থেকে ৪২০ টাকা।

তিনি আরো বলেন, আলুর ভালো ফলন হয়েছে। তবে আলু দাম অনেক কম। গত বছর আলু উঠার সময় ১৫ থেকে ১৭ টাকা ছিলো। এবছর ১০ থেকে ১২ টাকা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ৫৫-৬০ কেজির বস্তা যে দাম ধরা হচ্ছে তাতে আট থেকে নয় টাকা পড়ছে বাজার মূল্য।

হিমালয় কোল্ডস্টোরের ম্যানেজার হারুন-অর-রশিদ বলেন, আলু মোটামুটি আসতে শুরু করেছে। আরো ১৫ দিনের মধ্যে আলু পুরোদমে হিমাগারে চলে আসবে। গতবছর ৩৬৫ টাকা করে নেয়া হয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ কেজির বস্তা। বস্তা ছোট ও খরচের কারণে ব্যবসায়ীদের লোকসান হতে পরে।

তিনি বলেন, রাজশাহীতে ২৭/২৮টি হিমাগার রয়েছে। হিমাগারগুলোতে ৩০ লাখ বড় বস্তা এবং ৫০ লাখ ছোট বস্তা আলু রাখা যাবে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালি বলেন, গত বছরের চেয়ে তিন হাজার হেক্টর জমি কমে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। হেক্টরে ২৪ থেকে ২৫ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। এবছর আলুর আশানুরূপ ভাল ফল হয়েছে।

 

 

স/আ