আরডিএ’র প্লট বাণিজ্য: সাবেক চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আবাসিক এলাকার প্লট কেলেংকারি ঘটনায় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অন্তত ৭ কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। এছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সাবেক চেয়ারম্যান বজলুর রহমানকেও। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এরই মধ্যে তাঁকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত ১৬ অক্টোবর তাকে দুদক রাজশাহী কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছিল। তবে অসুস্থাতার কারণে তিনি সেদিন উপস্থিত না হয়ে চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সূত্র মতে, এর আগে গত বছরের ২৪ জুন রাজশাহী সমন্বিত দুদক অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (এডি) ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা আল আমিন আরডিএ কর্তৃপক্ষকে প্লট কেলেঙ্কারীর ঘটনা তদন্তের জন্য চিঠি দিয়েছিলেন। আরডিএর বনলতা বাণিজ্যিক ও আবাসিক প্লটের যাবতীয় নথিপত্র ওই বছরের ১ জুলাইয়ের মধ্যে সরবরাহের জন্য সংস্থার চেয়ারম্যান বজলুর রহমানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগে ৩১ প্লট দুর্নীতির অভিযোগে বঞ্চিতরা দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পর দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে রাজশাহীর উপ-পরিচালককে প্রাথমিক অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্লটের সকল নথি চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। সেই ধারাবাহিকতায় ওই প্লট বরাদ্দ প্রদানের সঙ্গে যুক্ত কমিটির সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে দুদক।

প্রসঙ্গগ, বনলতা আবাসিক প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালে অবশিষ্ট ৩১ প্লটের জন্য আবেদন নিয়ে একই প্লট ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কোটা রাখার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তাদের বাদ দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করলেও তাদের আবেদন করারই সুযোগ দেওয়া হয়নি।

বঞ্চিতদের অভিযোগ, ২০১৭ সালের ৩১ মে আরডিএ’র চেয়ারম্যান বজলুর রহমান, তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কমলা রঞ্জন দাস ও এষ্টেট অফিসার বদরুজ্জামান চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে নিজেদের মধ্যে প্লট ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। সরকারি কোটা অনুয়ায়ী শতকরা ৫ ভাগ হিসাবে ৩১ প্লটের মধ্যে আরডিএর কর্মকর্তা কর্মচারিদের ভাগে পড়ে সর্বোচ্চ ২ টি প্লট। কিন্তু এই ৩১ প্লটের মধ্যে চেয়ারম্যান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, এষ্টেট অফিসারসহ মোট ১০টি প্লট বরাদ্দ নেন।

বনলতার প্লটের বরাদ্দ তালিকা অনুযায়ী চেয়ারম্যান বজলুর রহমান নেন সবচেয়ে বড় আয়তনের ৭ কাঠার একটি প্লট। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ৫ কাঠা ও এষ্টেট অফিসার বদরুজ্জামান নেন ৬ কাঠার প্লট। এছাড়া চেয়ারম্যানের পিয়ন ইউনুস আলী ২ টি, অথরাইজড অফিসারের পিয়ন রেজাউল করিম দুটি, আরডিএর নিম্নমান সহকারি শামসুন্নাহার নুন্নী দুটি, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ীচালক শরিফুল ইসলাম ১টিসহ মোট ১০টি প্লট বরাদ্দ নেন।

এদিকে কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি স্বীকার আরডিএর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এরই মধ্যে আরডিএর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ এস্টেট কর্মকর্তা, সহকারী এস্টেট কর্মকর্তা এবং বরাদ্দ কমিটির সদস্যসহ ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। তবে সাবেক চেয়ারম্যান বজলুর রহমান এখনো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজির হননি। তিনি সময় নিয়েছেন। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই তিনি হাজির হবেন বলেও দুদককে জানিয়েছেন।’

এদিকে জিজ্ঞাসাবাদের চিঠি পাওয়ার পরে সাবেক চেয়ারম্যান অসুস্থতার কথা বলে সময় নিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে দুদকের একটি সূত্র।