আরএমবি’র অনুমোদনের আগেই তিন নার্সিং কলেজে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (আরএমবি) থেকে অনুমোদনের আগেই তিনটি নার্সিং কলেজে অতিরিক্ত ৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে ভর্তি হওয়া এসব শিক্ষার্থীদের ভবিশ্যত নিয়ে দেখা দিয়েছে টানা-পোড়েন। বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে এসব শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ভর্তির পরে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ওইসব শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশনের জন্য অনুমোদন চাওয়া হয়। তবে এতে বাধ সাধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা তিন নার্সিং কলেজকে পুনরাই মন্ত্রণালয় থেকে অনুমনোদ নিতে চিঠি দেয়।

সূত্র মতে, মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিষ্ঠান অধিভূক্ত, আসন বৃদ্ধি, আসন সংখ্যা অনুমোদন ও অধিভূক্তের নবায়নের জন্য অনুমতি নিতে হয়। সেই ক্ষেত্রে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমদোদিত সংখ্যার বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে বা অন্য কোথাও থেকে অনুমোদন নিয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারে না। কিন্তু এই নিয়ম লঙ্ঘন করে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক নার্সিং কলেজ অতিরিক্ত ১০ জন, বগুড়া টিএমএসএস নার্সিং কলেজ অতিরিক্ত ১৫ জন এবং রংপুর কমিউনিটি নার্সিং কলেজ অতিরিক্ত ১৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে।

সূত্র মতে, রংপুর কমিউনিনিট নার্সিং কলেজ কর্তৃপক্ষ গত বছরের ২৭ জুন স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় থেকে বেসিক কোর্সে ৪০ জনের স্থলে অতিরিক্ত ১০ জন এবং পোস্ট বেসি কোর্সে ৩৫ জনের স্থলে ৪০ জন ভর্তির অনুমোদন নেয়। নিয়ম অনুযায়ী রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত এ প্রতিষ্ঠানটিকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন চাইতে হবে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন যৌক্তি মনে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দিবে।

এরপর সেই অনুমোদন পরবর্তিতে মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন করে নিতে হবে। কিন্তু সেই নিয়ম লঙ্ঘন করে রংপুর কমিউনিনিট নার্সিং কলেজ কর্তৃপক্ষ আগেই মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়েই শিক্ষার্থী ভর্তি করে। এরপর গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর আরএমবিতে অনুমদোনের জন্য চিঠি দেয়।

তবে রংপুর কমিউনিনিট নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ খাদিজা বেগম বলেন, ‘ভুল হয়েছে এভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করা ঠিক হয়নি। তবে পরে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদন চেয়ে চিঠি দিয়েছি। এরপর আরএমবির রেজিস্ট্রার স্যার এসে কলেজ পরিদর্শন করে গেছেন। তবে পরবর্তিতে আর এমন কখনো হবে না।’

একই অবস্থা বগুড়া টিএমএসএস নার্সিং কলেজের ক্ষেত্রেও হয়েছে। তারাও মন্ত্রাণলয় থেকে আগে অনুমোদন নিয়ে অতিরিক্ত ১৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে। এর মধ্যে পোস্ট বেসিক কোর্সে ৪০ জনের স্থলে ৫০ জন এবং বেসিক কোর্সে ভর্তি করে ৩৫ জনের স্থলে ৪০ জন।

গত বছরের ২৪ অক্টোবর মন্ত্রণালয় থেকে অনুমদোন নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে ওই বছরই। এরপর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আরএমবি কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমদোনের জন্য চিঠি দেয়।

জানতে চাইলে এই কলেজের অধ্যক্ষ রেবেকা সুলতানা অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির কথা স্বীকার করলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের এমডি সাহেব আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু তিনিও আর কোনো কথা বলেননি।

রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক নার্সিং কলেজ কর্তৃপক্ষও অতিরিক্ত ১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ছাড়ায়। এরপর তারা অতিরিক্ত ১০ শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশনের জন্য অনুমোদন চেয়ে চিঠি দিয়েছে।

এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ডাক্তার মেজর ডালিম বেগম বলেন, ‘আমরা অনুমোদনের বাইরে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করিনি। অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করাও ঠিক নয়। কাজেই আমরা কেন সেটি করবো।’

এদিকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, অতিরিক্ত এসব শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ উদ্দেশ্যেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ছাড়ায় শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। ভর্তি করতে কয়েক লাখ টাকা আদায় করেছে অবৈধভাবে।

জানতে চাইলে রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক হুরাইরা বলেন, ‘তিনটি নার্সিং কলেজ কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করেছেন অনুমোদনের আগেই। এ নিয়ে তাদের পুনরায় চিঠি দিয়েছি। চিঠি দিয়েছি। তবে বিষয়টি এখন কোন পর্যায়ে যাবে বলা মুশকিল।’

স/আর