আমলাদের উপর ক্ষোভ বাড়ছে আওয়ামী লীগে

সিল্কসিটি ডেস্ক :

করোনা সঙ্কটের শুরু থেকেই সরকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের দায়িত্ব দেওয়ার বদলে আমলাদের দিয়ে সঙ্কট মোকাবেলার কৌশল গ্রহণ করেছিল। এই দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে আমলারা একের পর এক সমন্বয়হীন এবং লেজেগোবরে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং যার সর্বশেষ নজির হলো জোন বিভ্রান্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে যে, রেড জোন এলাকায় সাধারণ ছুটি থাকবে। এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে গত ১৫ই জুন, কিন্তু আজকে (১৭ জুন) পর্যন্ত কোন কোন এলাকা রেড জোন তা অজানা। বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরণের বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক অফিস-আদালত, এমনকি ব্যাংকও তাঁদের এলাকা রেড জোন হবে ভেবে বন্ধ করে দিয়েছে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই সমন্বয়হীনতা এটাই নতুন নয়, শুরু থেকেই নানারকম বিভ্রান্তি এবং দায়িত্বহীন সিদ্ধান্ত আসছে। এই কারণেই করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। আর এই ব্যাপারে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতৃবৃন্দ প্রকাশ্যেই তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করছ। তাঁরা মনে করছেন যে, আমলারা পরিস্থিতি মোকাবেলাতে শুধু ব্যর্থই হননি, বরং তাঁদের কারণ পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে এবং ভয়াবহ হয়েছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, তাঁরা আমলাদের ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এবং এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলবেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা, যিনি একজন মন্ত্রীও বটে, তাঁর মন্ত্রণালয়ের সচিবের করোনা মোকাবেলায় যতটুকু দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল তা করতে পারেননি বলে নিজেই স্বীকার করেছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত সচিবের উপর নির্ভর না করে সঙ্কট মোকাবেলার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এরকম অনেকগুলো মন্ত্রণালয়ে দেখা যাচ্ছে যে, আমলা এবং সচিবদের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্য হচ্ছে এবং আমলারা মন্ত্রীদের উপেক্ষা করে অনেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যে সিদ্ধান্তগুলো বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য উপযুক্ত নয়। তবুও এই ধরণের সিদ্ধান্ত কেন নিচ্ছে এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, করোনা মোকাবেলার সময় আমলারা যেভাবে একের পর এক সমন্বয়হীন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেটা আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতিকর হচ্ছে। কারণ আওয়ামী লীগের অনেক নেতৃবৃন্দ মনে করছেন যে, স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসকরা প্রান্তিক মানুষের কথা বিবেচনা করছেন না। যেভাবে ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই আলোকে ত্রাণ তৎপরতা চালাতে বাঁধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে প্রতি জেলার জন্য একজন করে সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলার খবর সচিবরা রাখছেন না, বলা হচ্ছে যে, তাঁরা মন্ত্রণালয়ের কাজে এত বেশি ব্যস্ত যে তাঁরা এলাকায় যেতে পারছে না।

কিন্তু আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন যে, করোনার কারণে তাঁরা এলাকায় যেতে ভয় পান বা জানাশোনা কম থাকায় তাঁরা এলাকায় যাচ্ছেন না। তাছাড়া আমলারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনা করছেন না। ফলে ক্ষমতাসীন দলের অপবাদ হচ্ছে বলেও মনে করছেন, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন যে, আমলারা সরকারকে স্রেফ ডোবাচ্ছে। কারণ তাঁরা যে পদক্ষেপগুলো নিচ্ছেন, সেগুলোর সঙ্গে জনগণের কোন সম্পৃক্ততা নেই। সিদ্ধান্তগুলোতে জনবিড়ম্বনা সৃষ্টি হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে বলা হলো যে, রেড জোনের যে ঘোষণা দেওয়া হবে, শুধুমাত্র সেই রেড জোনে ছুটি। তাহলে এই রেড জোন ঘোষণা করবে কে? এখনো এই রেড জোন ঘোষণা করা হয়নি। অথচ বলা হচ্ছে যে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই রেড জোনের লকডাউন বাস্তবায়িত করবেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এই নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ইতিমধ্যে এই রেড জোন নিয়ে তাঁদের অসন্তোষ এবং অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন।

একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলছেন যে, জোনগুলোকে ঠিক করে যদি প্রজ্ঞাপনটা জারি করা হতো তাহলে ভালো হতো, কিন্তু আমলারা সমন্বয় না করেই এই কাজগুলো করছেন। যেভাবে রাজাবাজারকে লকডাউন করা হয়েছে সেটা নিয়েও রাজনীতিবিদদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করেন যে, শুধু করোনা মোকাবেলা নয়, যেকোন সঙ্কট মোকাবেলায় রাজনৈতিক উদ্যোগই সবথেকে জরুরী এবং কার্যকর। কিন্তু রাজনৈতিক উদ্যোগের বদলে আমলাতান্ত্রিক উদ্যোগ পরিস্থিতিকে ক্রমশ জটিল করে তুলছে। এই কারণে আমলাদের উপরে ক্ষোভ এখন প্রকাশ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগেই।

স/রা