আবাসন সংকটে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সোহরাওয়ার্দী সাগর ও নিজস্ব প্রতিবেদক:

তীব্র আবাসিক সংকটে রয়েছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) নারী শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই পর্যন্ত ছাত্রীদের জন্য রয়েছে একটিমাত্র হল। ছাত্রীদের ৭৪ শতাংশের নেই কোনো আবাসিকতা। এতে করে মেসে কিংবা ভাড়া বাসায় থাকতে তাদেরকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। ভোগেন নিরাপত্তা শঙ্কায়। এছাড়া রুয়েটের হলগুলোতে মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে শতকরা ৩৩ ভাগের আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে।

রুয়েটের রেজিস্ট্রার দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৯২৮ জন। এরমধ্যে ছাত্রদের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৯৪ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ১ হাজার ৩৩৪ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট হল রয়েছে ৭ টি। ছাত্রদের জন্য ৬টি এবং ছাত্রীদের জন্য ১ টি হল রয়েছে। রুয়েটের মোট ৭টি হলে সিট রয়েছে ২ হাজার ২টি। এতে ছাত্রদের ৬টি হলের মধ্যে শহীদ লেফটেন্যান্ট সেলিম হলে সিট রয়েছে ৩৫৪ টি, শহীদ শহিদুল ইসলাম হলে সিট রয়েছে ২২৮টি, টিনশেড হলে ১০০টি, শহীদ আব্দুল হামিদ হলে সিট রয়েছে ২৪০টি, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হলের সিট সংখ্যা ৪৮০টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে সিট রয়েছে ২৫০ টি। ছেলেদের হলগুলোর মোট সিট সংখ্যা ১ হাজার ৬৫২টি। এছাড়া ছাত্রীদের একমাত্র আবাসিক হল ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা’তে সিট রয়েছে ৩৫০টি।

রুয়েটের বর্তমান অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৩ হাজার ৯২৬ জন। এসব শিক্ষার্থী রুয়েটের প¦ার্শবর্তী বিভিন্ন মেস কিংবা ভাড়া বাড়িতে থাকেন। বাইরে থাকার ভোগান্তির বিষয়ে তাদের একাংশ জানান, অতিরিক্ত ভাড়া, নিরাপত্তাহীনতা তাদের ভোগান্তির প্রধান কারণ।

ভোগান্তির বিষয়ে রুয়েটের অনাবাসিক শিক্ষার্থী আফসানা বলেন, আমাদের বিশ^বিদ্যালয়ে একটিমাত্র হল থাকার কারণে হলে সিট পাওয়া কষ্টকর। তৃতীয় বর্ষে আছি তবুও এখনো হলে সিট পাইনি। মেসে মাসিক ১৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে থাকি। রাতে বিশ^বিদ্যালয়ের বাইরে থেকে চলাচলে নিরাপদ বোধ করি না। হলে না থাকায় বাড়িতে পরিবারের লোকজন সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকে। এছাড়াও মেসে থাকার কারণে প্রতি মাসে অনেক বাড়তি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে।

রুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের এক অনাবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, হলে ওঠা শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক কষ্টকর। হলে ছাত্রলীগের যারা রাজনীতি করেন, সেই বড়ভাইদের ধরে সাধারণত হলে উঠতে হয়। এছাড়া হলে ওঠা অসম্ভব প্রায়। এ বিষয়ে রুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান চৌধুরী তপু বলেন, আমরা রুয়েটে কোনো সিট নিয়ন্ত্রণ করিনি। মাঝেমধ্যে আমাদের দলীয় কোনো শিক্ষার্থীর আবাসিকতার ক্ষেত্রে প্রাধ্যক্ষের কাছে সুপারিশ করি মাত্র।

হলের সমস্যা নিয়ে রুয়েটের আবাসিক শিক্ষার্থীদের একাংশ জানান, মানসম্মত খাবার এবং দুর্বল ওয়াইফাই তাদের হলগুলোর প্রধান সমস্যা। বিশেষ করে বিশ^বিদ্যালয়ের শহীদ আব্দুল হামিদ হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শহীদ শহিদুল ইসলাম হলে মানসম্মত খাবারের সমস্যা বেশি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান হলে খাবারের মান মোটামুটি। এছাড়া প্রতিটি হলে ওয়াইফাই সমস্যা আছে বলে তারা জানান।

শহীদ শহিদুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রাকিব জানান, হলের ডাইনিংয়ে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা হয় না। এছাড়াও হলের ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক অনেক দুর্বল। এতে করে তার অনলাইনে কাজ করতে অসুবিধায় পড়তে হয়। এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আলী হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

রুয়েটের ছাত্রদের জন্য টিনশেডের একটি হল রয়েছে। হলটিতে ১০০টি সিট রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘গত কিছুদিনের বৃষ্টিতে আমাদের হলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গরমকালে হলে থাকা কষ্টকর হয়ে যায়। এছাড়া হালকা ঝড় হলে ভয়ে থাকি কখন আবার গাছপালা ভেঙ্গে টিনের উপর না পড়ে!’’ এ বিষয়ে হলের সহকারী প্রাধ্যক্ষ এস.এম মেহেদি হাসান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘বাবা দিনমজুর। অনেক কষ্টে রুয়েটে ভর্তি হয়েছে। প্রাধ্যক্ষ স্যারকে বলে অনেক কষ্টে গণরুমে একটি সিট ম্যানেজ করেছি। কিন্তু একরুমে অনেক শিক্ষার্থী থাকায় পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ি। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাবারের দাম ২৫ থেকে ৩০টাকা করা হয়েছে। তবে খাবারের মান ভালো।’’ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. শামিম আনোয়ার বলেন, আমাদের গণরুমে ২১ টি সিট রয়েছে, সেখানে ১৮ জন মতো শিক্ষার্থী থাকেন। এছাড়া খাবারের মান বাড়াতে দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীরাই নিয়েছেন।

সার্বিক বিষয়ে রুয়েট উপাচার্য (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বর্তমানে রুয়েটে ছাত্রীদের জন্য দুইটি এবং ছাত্রদের জন্য দুইটি হল আবাসিক হল নির্মাণাধীন। এছাড়াও ছাত্রদের একটি হল দু’তলা থেকে চারতলায় উন্নীত করা হচ্ছে। এ হল নির্মাণ শেষ হলে ছাত্রীদের শতভাগ আবাসিকতা নিশ্চিত হবে। আর সরকার বরাদ্দ দিলে ভবিষ্যতে ছাত্রদেরও শতভাগ আবাসিকতা নিশ্চিত করা হবে।

খাবার ও ওয়াইফাই সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার ভর্তুকি দিলে আমরা অবশ্যই মান উন্নয়ন করবো। এখানে সরকারি ভর্তুকি ছাড়া আমাদের অর্থ দিয়ে মান উন্নয়ন সম্ভব না।

জি/আর