শুক্রবার , ২৪ মে ২০২৪ | ৩রা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

আন্দোলনের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় বিএনপি

Paris
মে ২৪, ২০২৪ ১:২৩ অপরাহ্ণ

 

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

গত সপ্তাহে যুগপৎ আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বিএনপি বৈঠক করেছে। কিন্তু তাতে কোনো কার্যকর ফল আসেনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটি কার্যত এখনও আন্দোলনসহ সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

কথা ছিল ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি দলের ব্যাপারে একটি মূল্যায়ন দেবে। সম্ভাবনাময় আন্দোলন কেন ব্যর্থ হলো, কোথায় ভুল ছিল, কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল কি-না, আত্মঘাতী কোনো সিদ্ধান্ত ছিল কি-না এসব বিষয় পর্যালোচনার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বিএনপি এখনও তাদের মূল্যায়ন দেয়নি বলে জানান বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা আরও জানতে চায় যে, বিএনপি আগামী এক বছরে সত্যিই কি সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত কোনো আন্দোলন করতে চায়?

সাইফুল হক বলেন, “আমাদের বিবেচনায় কিছু সিদ্ধান্ত ছিল আত্মঘাতী যা আমরা বিএনপিকে বলেছি। অসহযোগ আন্দোলন ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। আবার ডিসেম্বরে এসে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এক প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার উদ্যোগ- এগুলো ছিল হতাশার ফল। অনেকগুলো সিদ্ধান্ত ছিল হঠকারী। যেমন, ঢাকার প্রবেশমুখে ধাম করে প্রোগ্রাম দেওয়া। এটা আত্মঘাতী ছিল, যেটা বড় বিপর্যয় ডেকে এনেছে।”

তার কথা, “আরও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আছে। প্রথমত, যুগপৎ আন্দোলনের মধ্যে সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিকভাবে নেওয়া হচ্ছে না। তাদের (বিএনপি) স্ট্যান্ডিং কমিটি কথা বলে। তারপর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একটি সিদ্ধান্ত দেয়। এরপর তারা দলগুলোকে জানিয়ে দেয়। এটাকে আমরা গণতান্ত্রিক মনে করছি না। আমরা বলেছি, যুগপৎ আন্দোলনের যত সিদ্ধান্ত হবে তা লিয়াজোঁ কমিটিতে চূড়ান্ত হবে। সেটা আর বিএনপি পরিবর্তন করতে পারবে না। এখন বিএনপি কী করে তা দেখার অপেক্ষায় আছি।”

তিনি বলেন, “যদি বিএনপি আগের মতোই করে, তাহলে আমরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি যে, তাদের সব সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ পারব না। আমরা আমাদের মতো করে যেটুকু গ্রহণ করতে পারি, সেটুকু নেব। বাকি আন্দোলন আমরা আমরাদের মতো করে আমাদের সিদ্ধান্তে করব। তখন এই ঐক্যটা অর্গানিক হবে না, আর্টিফিশিয়াল হবে। আর বিএনপি যদি আরও পাঁচ-ছয় মাস তাদের আগের অস্থানেই থাকে, তাহলে যুগপৎ আন্দোলনে অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

জানা গেছে, গত নির্বাচন বর্জন নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে মতবিরোধ আছে। একটি ধারা মনে করে নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়া উচিত ছিল। কারণ, বিএনপি বিপ্লবী দল নয়। আবার তাদের সহায়ক মনে করা হয় এমন একটি রাষ্ট্রও নির্বাচনে যেতে বলেছিল। কিন্তু নির্বাচন বর্জন করা দলটি এখন দৃশ্যত সময় কাটানোর কৌশল নিচ্ছে।

কর্মসূচি প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “আসলে আমরা বৈঠক করেও বিএনপির কাছ থেকে সঠিক কোনো জবাব পাচ্ছি না। তাদের স্বচ্ছতা নেই। আন্দোলনের তো নানা কৗশল থাকে। আমরা চাই সেটা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেব। কিন্তু বিএনপি সেটা পারছে না। আবার অনেক ভুল সিদ্ধান্ত আছে। এখন যদি বিএনপি সঠিক প্রক্রিয়ায় না আসে তাহলে আমরা আমাদের মতো এগিয়ে যাব। আমাদের সেটা করা ছাড়া উপায় নাই।”

তিনি বলেন, “বিএনপি বলে তারা অনেক বড় দল। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে সময় লাগে। অনেক পর্যায়ে কথা বলতে হয়। এভাবে তারা সময় পার করে দিচ্ছে। আসলে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে যারা আছেন, তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, তাদের মধ্যে নানা ধারা। নির্বাচন হয়ে গেছে চার মাসের বেশি, তারা এখন পর্যন্ত কিছুই করেনি। তারপরও দেখি কী হয়।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি মনে করি আমরা এককভাবে কর্মসূচি দিয়ে সেটাকে মিনিংফুল করতে পারব, তাহলে আমরা আলাদাভাবে কর্মসূচি দেব। কিন্তু আমরা তো এখনো অনেক বড় একটা দৈত্যের সামনে তো এককভাবে টিকতে পারি না। এটা তো সত্য যে, বিএনপির সঙ্গে অনেক লোক। তাই ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক তাদের ওপর আমাদের নির্ভর করতে হয়। কিন্তু আমরা লিয়াজোঁ কমিটির সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কর্মসূচিতে আর যাব না।”

‘বিএনপিতে অনেক ধারা’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “বিএনপিতে এখন একাধিক ধারা। খোদ মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ আমাদেরকে ফাঁদে ফেলে নির্বাচনে যেতে দেয়নি’। তাহলে এটা কী প্রমাণ করে? আবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো যোগাযোগ হয়নি’। তাহলে কি অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ হচ্ছে? সেটা বলেন।”

তবে যুগপৎ আন্দোলনের আরেক শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সভাপতি ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, “এখন নতুন করে একটি শক্তিশালী লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করা যায় লিয়াজোঁ কমিটি হলে আন্দোলনের ব্যাপারে কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। আর যুগপৎ আন্দোলনে আরও কিছু দল যোগ দেবে। তার মধ্যে জামায়াতসহ আরও কিছু ইসলামি দল আছে। সবার সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।”

‘আমরা দম নিচ্ছি’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, “৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনকে সামনে রেখে আমাদের ২৭ হাজার নেতা-কর্মী জেলে ছিল। দুই লাখের বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা একটু দম নিচ্ছি। আমাদের সংগঠনও তো তছনছ করে দিয়েছে। আমরা সব পর্যায়ে কথা বলছি। যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে কথা বলছি। সবার সঙ্গে কথা বলেই আমরা নতুন কর্মসূচিতে যাব। আমাদের এক দফা দাবি তো অব্যাহত আছে।”

২৮ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার ঢাকার আমিনবাজারে বিএনপির সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীদের একাংশ/ঢাকা ট্রিবিউন
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা যুগপৎ আন্দোলনের সবাইকেই সম্মান করি। আমরা সবার মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করি।”

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, “আন্দোলন নিয়ে আমাদের দলীয় মূল্যায়ন তো আমরা বলেছি। সেটা হলো- অপশক্তির সঙ্গে আমরা পারিনি। আর আমাদেরও দলে কোনো আলাদা ধারা নাই। আমরা সবাই এই সরকারের পতন চাই।”

তিনি বলেন, “আর এখন আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করছি। কিছু আছে আমাদের দলীয় কর্মসূচি। তবে আমি মনে করি, যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে আমাদের কো-অর্ডিনেশন এবং যোগাযোগ আরও বাড়ানো উচিত। আমাদের আরও একাট্টা হয়ে কাজ করা উচিত।”

আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, “যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো দূরত্ব তৈরি হয়নি। নির্বাচনের পরে আমাদের নেতা-কর্মীদের দাঁড়াতে একটু সময় লাগছে। আর আগে ছিল নির্বাচন বর্জনের আন্দোলন। এখন তো নানা ইস্যুর ওপর আন্দোলন হবে।”

তার কথা, “শরিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই কর্মসূচি দেওয়া হয়। তারা যে প্রস্তাব দেয় সেগুলো আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করি। তারপর কর্মসূচি দেওয়া হয়। নির্বাচনের পরেও তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।”

প্রসঙ্গত, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ ৩৯টি রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনের আগে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে।

 

সর্বশেষ - রাজনীতি