প্রথম সমাবর্তন কাল, অংশ নিচ্ছে ১৫’শ গ্রাজুয়েট

আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলে শিক্ষার জ্যোতি ছড়াচ্ছে ‘বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত ভবন

আমজাদ হোসেন শিমুল:

বায়ুদুষণমুক্ত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন আর ছিমছাম শান্তির সবুজ শহর রাজশাহী। বরেন্দ্রের বুকচিঁড়ে বয়ে যাওয়া প্রমত্তা পদ্মা নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা ছোট্ট এই শহরটি নানা নান্দনিকতায় ভরপুর। অতিপ্রাচীন এই  শহর পরিচিতি পেয়েছে শিক্ষানগরী হিসেবে। তবে নির্মল বায়ুর এই শহরে যুগের সঙ্গে তালমিলিয়ে অত্যাধুনিক ও মানসম্মত শিক্ষার ছিল বড়ই অভাব। আর এই অভাব পূরণে যুগপোযোগী ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের মধ্যবিত্ত শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্যোতি ছড়িয়ে দিতে ২০১২ সালের ১৪ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় এতদঅঞ্চলের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়’।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে- ১০ পেরিয়ে ১১ বছরে পা রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। দীর্ঘ এই সময়ে হাজারো ছাত্র-ছাত্রী আধুনিক শিক্ষার্জন শেষে বিভিন্ন সেক্টরে দেশের উন্নয়নে কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২ জুন) এটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে (নগরীর খড়খড়ি এলাকা) আয়োজন করেছে প্রথম সমাবর্তনের। সমাবর্তনে আচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধান অতিথি থাকবেন- শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম, ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। এছাড়া সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন- বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সমাবর্তনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন- বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমান খান। পরে উপস্থিত অতিথিবৃন্দকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. ওসমান গনি তালুকদার।

সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন- (বামে উপর থেকে) ডা. দীপু মনি, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, আসাদুজ্জামান নূর, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ড. দিল আফরোজা বেগম, ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, ড. এম. সাইদুর রহমান খান, মো. হাফিজুর রহমান খান, ড. এম. ওসমান গনি তালুকদার

সমাবর্তনে আচার্য এবং উপাচার্য স্বর্ণপদক প্রদান করা হবে। ১ হাজার ৫২৬ জন গ্রাজুয়েট সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন। সমাবর্তনে অংশ নেয়া বিবিএ অনুষদের গ্রাজুয়েট এস.এম. জলি বলেন, ‘সমাবর্তন ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিপূর্ণতা পায় না। আর কাক্সিক্ষত সেই সমাবর্তন আগামীকাল। মনে হচ্ছে, সেই মাহেন্দ্রক্ষণ কখন আসবে তার অপেক্ষায় সময়ক্ষণ গুনছি। কখন সেই কাক্সিক্ষত সময় আসবে সেই সময়ের জন্য যেন তর সইছে না।’

অত্যাধুনিক সেমিনার কক্ষে এভাবেই পড়ালেখায় ব্যস্ত বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২৩ সালের শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম ১৩ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত স্থায়ী ক্যাম্পাস খড়খড়িতে শুরু হবে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সালে এই স্থায়ী ক্যাম্পাসের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতোমধ্যেই নান্দনিকভাবে গড়ে উঠছে স্থায়ী সেই ক্যাম্পাস। সেখানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ক্লাস রুম, বিষয়ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি, আন্তর্জাতিকমানের বিশাল খেলার মাঠ, জিমনেশিয়াম, সুইমিংপুল, শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা ও নিজস্ব পরিবহন সুবিধাসহ সকল আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।

নগরীর খড়খড়ি এলাকায় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে ভবন নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়টি বছরে ৩টি সেমিস্টারে আন্ডার গ্রাজুয়েট ও গ্রাজুয়েট ডিগ্রি প্রদান করে। অর্থাৎ জানুয়ারি-এপ্রিল (স্পিরিং), মে-আগস্ট (সামার) এবং সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর (ফল)। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে ১২৫ জন পূর্ণকালীন অভিজ্ঞ শিক্ষক। এছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সনামধন্য শিক্ষকবৃন্দ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে পাঠদান করেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৭টি অনুষদভুক্ত ১২টি বিভাগে (বিবিএ, অর্থনীতি, ইংরেজি, আইন ও মানবাধিকার, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জার্নালিজম কমুউনিকেশন এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ, ফার্মেসী, পাবলিক হেল্থ, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং ইসলামের ইতিহাস বিভাগ) ৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় তুলনামূলক কম খরচে কোর্স পরিচালনা করে এবং ৩ হাজার ৮৬ জন শিক্ষার্থীকে নানান অঙ্কে বৃত্তি প্রদান করে। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শ্রেণিকক্ষে প্রযুক্তিনির্ভর মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে শিক্ষাদের পাঠদান করা হয়। সার্বিক নিরাপত্তার বিধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে প্রতিটি ভবনে রয়েছে সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ছাড়াও রয়েছে বিষয়ভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন লাইব্রেরী।

নগরীর খড়খড়ি এলাকায় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে ভবন নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে

পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনভিত্তিক পাঠ্যপুস্তকের ব্যবস্থা রয়েছে। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী দ্বারা পরিচালিত বিশ্বমানের ল্যাবরেটরি। রয়েছে কম্পিউটার ল্যাব; ফার্মাসী ল্যাব; ট্রিপল-ই ল্যাব; জার্নালিজম, কমিউনিকেশন এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ ইনফোস্মিথ ল্যাব। প্রতিটি বিভাগের নিজস্ব ক্লাব বিশ্ববিদ্যালয়টিকে করেছে সমৃদ্ধ। ক্লাবগুলোতে শিক্ষার্থীরা বিষয়ভিত্তিক বিতর্ক, আলোচনা, সেমিনার ও গ্রুপ স্টাডিতে ব্যস্ত থাকে। সামাজিক নানান কর্মকাণ্ডে রয়েছে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও এড়িয়ে উত্তরাঞ্চলের সনামধন্য এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বর্তমানে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া প্রতিবছর আয়োজন করা হচ্ছে বার্ষিক বনভোজন, শিক্ষা সফর এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিজিটের মত বিভিন্ন কার্যকরী উদ্যোগ। রাজশাহী বিভাগের আমেরিকান সেন্টারের অবস্থানও এই বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিকাশে সহায়ক।

পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন খেলাধুলায় মেতে উঠে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

অর্জনেও এগিয়ে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় । ২০১৬ সালে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত রোবট কম্পিটিশনে প্রথম স্থান অধিকার করে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় রোবটিং সোসাইটি। ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও টিআইবির যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত মুটকোর্ট প্রতিযোগিতায় প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীরা।

২০১৬ সালে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত রোবট কম্পিটিশনে প্রথম স্থান অধিকার করে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় রোবটিং সোসাইটি

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘অর্থনৈতিকভাবে উত্তরাঞ্চল অন্যান্য অঞ্চল থেকে অনেক বেশি পিছিয়ে আছে। শিক্ষার উন্নয়নের ছাড়া উত্তরবঙ্গের এই উন্নয়ন সম্ভব হবে না। আমি বিশ্বাস করি, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আগামীতে দেশের উন্নয়নে, সমাজের উন্নয়নে এবং বরেন্দ্র অঞ্চলের উন্নয়নে অনেক বড় অবদান রাখবে।’

বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও এগিয়ে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. এম. সাইদুর রহমান খান বলেন, ‘একটি বিশেষ লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু করা হয়েছিল। উত্তরবঙ্গের এই পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠির মধ্যে মানসম্পন্ন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্ট এখানে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করে।’

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এভাবেই শিক্ষাজীবনের শেষ দিন র‌্যাগ উৎসব পালন করেন

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্র্য অধ্যাপক ড. এম. ওসমান গনি তালুকদার বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় সরকার কর্তৃক অনুমোদিত প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় । প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি বিশ্ববিদ্যালয়টি যথাযথ ভূমিকা পালন করছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের দরিদ্র মানুষদের সন্তানদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এক অনন্য ভূমিকা পালন করছে। উন্নত, আদর্শ, আধুনিক ও যুগপোযোগী শিক্ষা বিস্তারের আকাক্সক্ষা নিয়েই মূলত বিশ^বিদ্যালটির যাত্রা শুরু। উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মেধাবীরা স্বল্পব্যয়ে এখান থেকে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে দেশ গড়ার কাজে অংশ নিচ্ছে।’

এএইচ/এস