আদালতের বাইরে যা বললেন অ্যাসাঞ্জের বাগ্‌দত্তা

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্কঃ

যুক্তরাজ্যের আদালত উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে বিচারের তৎপরতা বন্ধ করে দেওয়ায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাঁর বাগ্‌দত্তা স্টেলা মরিস। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার স্টেলা বলেন, ‘অ্যাসাঞ্জের মামলায় সুবিচারের এটি প্রথম ধাপ।’

অ্যাসাঞ্জকে নিয়ে বিচারের প্রক্রিয়া শুরুর তৎপরতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হতাশা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর মেক্সিকো অ্যাসাঞ্জকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে।

এএফপির খবরে জানা যায়, স্টেলা আদালতের এই আদেশকে ‘বিজয়’ বলে চিহ্নিত করেন। তবে অ্যাসাঞ্জ মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত কোনো উৎসব করবেন না বলে জানান।
লন্ডনের ওল্ড বেইলি আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে অ্যাসাঞ্জের বাগ্‌দত্তা স্টেলা আরও বলেন, ‘এখনই এর শেষ হোক। কারাগারের দেয়াল ভেঙে ফেলুন, যাতে আমাদের ছোট ছেলেরা তাদের বাবাকে পায়।’ সবার ভালোর জন্য তিনি অ্যাসাঞ্জের মুক্তি দাবি করেন।
ব্রিটিশ আদালতের সিদ্ধান্তে স্টেলা ও স্নোডেন যতটা উচ্ছ্বসিত, ততটাই হতাশ যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ। গতকাল বিচার বিভাগ বলেছে, ‘অ্যাসাঞ্জকে নিয়ে ব্রিটিশ আদালতের সিদ্ধান্তে আমরা খুবই হতাশ।’

অ্যাসাঞ্জ দাবি করেন, বাক্স্বাধীনতা রক্ষার জন্যই তিনি উইকিলিকসে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন ডিস্ট্রিক্ট জাজ। ডিস্ট্রিক্ট জজ ভ্যানেসা ব্যারাইটসার বলেন, ‘অ্যাসাঞ্জকে যদি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়, তবে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন। তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিলে তিনি মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। এতে তিনি অত্যাচারিত হবেন।’ এসব কারণ বিবেচনা করে অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া, তা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন বিচারক।

বিচারকের এমন বক্তব্য ও অ্যাসাঞ্জের দাবি প্রত্যাখ্যান করার দিকে ইঙ্গিত করে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ বলেছে, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট।

যুক্তরাজ্যের আদালতের সিদ্ধান্তের পর আনন্দ প্রকাশ করে অ্যাসাঞ্জকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে চায় বলে জানিয়েছে মেক্সিকো। দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘অ্যাসাঞ্জকে মুক্ত করতে যুক্তরাজ্য সরকারকে অনুরোধ জানানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলব। এরপর মেক্সিকো অ্যাসাঞ্জকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব জানাবে।’

যুক্তরাজ্যের আদালতের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন বামপন্থী এই নেতা। তিনি এটিকে ‘ন্যায়ের জয়’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘অ্যাসাঞ্জ একজন সাংবাদিক। আরেকটি সুযোগ পাওয়ার অধিকার তাঁর রয়েছে।’ মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘মেক্সিকো নিশ্চিত করতে চায়, কেউ সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নিলে অন্য দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে না।’

মেক্সিকো বেশ কয়েক বছর ধরেই অনেককে রাজনৈতিক আশ্রয় দিচ্ছে। সম্প্রতি বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরেলেসকেও রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে দেশটি।
অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার তৎপরতা বন্ধে ব্রিটিশ আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সাবেক কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেন। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার স্নোডেন বলেন, তিনি আশা করেন, উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আনা গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগের শেষ হবে। টুইটে স্লোডেন বলেন, ‘সবকিছু শেষ হোক।’

মার্কিন গোপন নজরদারির তথ্য ফাঁস করে হইচই ফেলে স্নোডেন ২০১৩ সাল থেকে রাশিয়ায় রয়েছেন। গত বছর স্নোডেন মার্কিন-রুশ দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে অ্যাসাঞ্জের বিচার চলছে। তিনি ও তাঁর আইনজীবী দল দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, এ মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অবশেষে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত এল গতকাল। যদিও আদালত যে আদেশ দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে আপিল হতে পারে।

ইরাক ও আফগান যুদ্ধের সামরিক নথি প্রকাশ করেছিলেন অ্যাসাঞ্জ। ২০১০ সালে এসব নথি প্রকাশের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির ১৮টি অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্র। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১৭৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

তবে অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ২০১৬ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে উইকিলিকসে ফাঁস করা অনেক তথ্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ

অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যেসব অভিযোগ এনেছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো তিনি দেশটির কম্পিউটার ব্যবস্থায় প্রবেশ করেছিলেন। এ অভিযোগ আনার বেশ আগেই কম্পিউটার হ্যাক করেছিলেন অ্যাসাঞ্জ। এ জন্য তাঁকে জরিমানাও গুনতে হয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়ার টাউনসভিলে ১৯৭১ সালে অ্যাসাঞ্জের জন্ম। কিশোর বয়সেই কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৫ সালে কম্পিউটার হ্যাকিংয়ের দায়ে তাঁর জরিমানাও হয়েছিল। তবে সেই সময় অ্যাসাঞ্জকে কারাগারে যেতে হয়নি। ওই সময় তাঁকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তিনি আর কখনো কম্পিউটার হ্যাক করবেন না।
এরপর ২০০৬ সালে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাসাঞ্জ। ইন্টারনেটনির্ভর এ প্ল্যাটফর্ম ছিল মূলত তথ্য ফাঁসকারীদের জন্য। সেখান থেকেই ওই সব তথ্য ফাঁস করেন তিনি।

সুত্রঃপ্রথম আলো।