আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৭০ সে.মিটার উপরে

নিজস্ব প্রতিবেদক ও আত্রাই প্রতিনিধি:

নওগাঁর মান্দায় আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত সোমবার সন্ধ্যায় এ নদীর পানি বিপদসীমায় অবস্থান করলেও ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বেড়েছে ৭০ সেন্টিমিটার। ইতোমধ্যে নদী সংলগ্ন বেড়িবাঁধ ভেঙে সহ¯্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে আত্রাই ও ফকিরনি নদীর উভয় তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৩০টি পয়েন্ট।

গত কয়েকদিনের একটানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হু-হু করে বাড়ছে আত্রাই নদীর পানি। নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আগামি ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। অবহাওয়া পরিষ্কার হলে আগামি বৃহস্পতিবার থেকে পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, নদীর পানি বৃদ্ধিতে সোমবার গভীর রাতে শহরবাড়ি ভাঙ্গিপাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত পানির চাপে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে চকরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিমধার, কয়লাবাড়ি ও বটতলা এলাকায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। এ স্থানগুলো টিকিয়ে রাখতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করছে স্থানীয়রা। এ অবস্থায় প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ইব্রাহীম হোসেন জানান, ২০১৭ সালের বন্যায় চকরামপুর ও কয়লাবাড়ি বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এরপর সেগুলো আর মেরামত করা হয়নি। এতে করে ভাঙনস্থান দিয়ে অনায়াসে বেড়িবাঁধের ভেতরে পানি প্রবেশ করেছে। এতে দুই গ্রামে অন্তত ৭শ পরিবার পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে। তলিয়ে গেছে বেড়িবাঁধের ভেতরের ফসল। পান্দিবন্দি মানুষ গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগি নিয়ে উঁচু স্থান ও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।

ভালাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইব্রাহীম আলী বাবু জানান, নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় মদনচক, উত্তর লক্ষ্মীরামপুর ও বানডুবি পয়েন্ট চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, খরা মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব স্থান পরিদর্শন করেন। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি। সঠিক সময়ে সংস্কার কাজ করা হলে এসময় এলাকার মানুষকে ঝুঁকির মুখে পড়তে হতো না।

এদিকে সোমবার রাত থেকে নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় মদনচক, উত্তর লক্ষ্মীরামপুর, বানডুবি, কালিকাপুর, কামারকুড়ি, ছোটবেলালদহ, খুদিয়াডাঙ্গা, বুড়িদহ, পশ্চিম নুরুল্লাবাদ, বাগাতিপাড়া, জোতবাজার, গোয়ালমান্দা, পারনুরুল্লাবাদ, নিখিরাপাড়া, করাতিপাড়া, জোকাহাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধ, চকরামপুর, কয়লাবাড়ি, বটতলা বাজার, দ্বারিয়াপুর বেড়িবাঁধ, খুদিয়াডাঙ্গা পূর্বপার, বাইবুল্যাসহ অন্তত ৩০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব বাঁধে পাহারা বসিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে দিনরাত করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো নির্মাণের পর থেকে আজ পর্যন্ত আর সংস্কার করা হয়নি। এ কারণে দুইধারের মাটি কেটে গিয়ে বাঁধগুলো সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এসব পুরাতন বাঁধে রয়েছে ইঁদুরের অসংখ্য গর্ত। বন্যার পানি বাঁধে চাপ দিলে এসব গর্ত দিয়ে পানি বাঁধের অপর পারে চলে যায়। শুষ্ক মৌসুমে এসব স্থানে সংস্কার করা হলে বর্ষা মৌসুমে অনেকটাই নিরাপদে থাকতেন নদীপাড়ের মানুষ।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জানান, নদীর পানি জোতবাজার পয়েন্টে ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামি ২৪ ঘণ্টা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়া পরিষ্কার হলে বৃহস্পতিবারের দিকে পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে তদারকি করছেন পাউবোর লোকজন। বাঁধ টিকিয়ে রাখতে সকল প্রকার প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানান তিনি।

মান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার জসিম উদ্দিন জানান, নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো আমি পরিদর্শন করছি। সেখানে যেভাবে সহায়তার প্রয়োজন তা করা হচ্ছে। বন্যা মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মুশফিকুর রহমান জানান, আমি নিজেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিচ্ছি। ইতোমধ্যে অনেক এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোর চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সার্বক্ষণিক তদারকির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

স/আ