আত্রাইয়ে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠ

নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই :

শীতের শিশির ভেজা সকালে কুয়াশার চাদরে ঘেরা নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বিস্তীর্ন প্রতিটি মাঠজুড়ে কেবল চোখে পড়ে সরিষার হলুদ ফুলের চাঁদরে ঢেকে গেছে দিগন্ত বিস্তৃত প্রকৃতি। প্রান্তর জুড়ে উঁকি দিচ্ছে শীতের শিশির ভেজা সরিষা ফুলের দোল খাওয়া গাছগুলো। সরিষার সবুজ গাছের হলুদ ফুল শীতের সোনাঝরা রোদে ঝিকিমিকি করছে। এ এক অপরুপ সৌন্দর্য। যেন প্রকৃতি কন্যা সেজেছে ‘গায়ে হলুদ বরণ সাজে’। চারপাশের মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠ।

উপজেলার প্রতিটি মাঠে এখন শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁধানো বর্ণিল সমারোহ। মৌমাছির গুনগুন শব্দে ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহ আর প্রজাপতির এক ফুল থেকে আরেক ফুলে পদার্পন এ অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন মনোমুগ্ধকর এক মূহুর্ত। ভোরের বিন্দু বিন্দু শিশির আর সকালের মিষ্টি রোদ ছুঁয়ে যায় সেই ফুলগুলোকে।

গত ক’বছর ধরে সরিষা চাষে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ায় সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন এ উপজেলার কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এখন শুধু ভালো ফলনের আশায় উপজেলার কৃষকেরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি কর্মকর্তারাও।

এদিকে চলতি রবিশস্য মৌসুমে কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা না দেওয়ায় এবং সরিষা চাষের পরিবেশ অনুকূলে থাকায় সরিষার পাশাপাশি আলু, গম ও ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের কৃষকরা এই সরিষা যথা সময়ে ঘরে তুলতে পাড়লে এবং বিক্রয় মূল্য ভাল পেলে বিগত দিনের লোকসান পুষিয়ে ইরি-বোরো ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করছেন।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ২ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শুরুতেই সরিষা ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের আনাগোনা দেখা দিলেও মাঠ পর্যায়ে সরিষা চাষিদেরকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যথাযথ পরামর্শ ও প্রত্যক্ষ কারিগরী সহযোগিতার কারণে সরিষা ক্ষেত অনেকটা রোগ-বালাই মুক্ত হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।

যথা সময়ে সরকারী পর্যায় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে মান সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে সরিষার বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হলেও মাঠ পর্যায়ে বেশ কিছু জমি চাষের উপযুগী না হওয়ায় কিছু কৃষকরা ঠিক সময়ে সরিষা বপণ করতে পারেনি। ফলে তারা অন্যান্য রবিশস্য চাষের দিকে ঝুকছেন। আগামী ইরি-বোরো ধান উৎপাদনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রান্তিক চাষিরা কিছুটা বাধ্য হয়েই অন্যের জমি বর্গা নিয়ে সরিষা, আলু, গম ও ভোট্টা চাষে অতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। উপজেলার শাহাগোলা, ভোঁপাড়া, মনিয়ারী ও আহসানগঞ্জ ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সরিষা চাষ হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।

এব্যাপারে উপজেলার রসুলপুর গ্রামের কৃষক হাদেশ আলী মাস্টার জানান, চলতি মৌসুমে আমি তিন বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। ফলন ভালো হলে প্রতি একর জমিতে অন্তত ১০মণ হারে সরিষা উৎপাদন হবে।

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কেএম কাউছার হোসেন জানান, এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষ হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে ও কৃষক বাড়তি মুনাফা পাবে বলেও মনে করছি।

স/শা