আত্রাইয়ে বোরো ধানের বাম্পার ফলন: স্বপ্ন নিয়ে দিন গুনছেন চাষীরা

নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই:

নওগাঁ জেলার খাদ্যশস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত আত্রাইয়ের উপজেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আত্রাই এলাকা বন্যাদুর্গত এলাকা হিসাবে এ অঞ্চলের কৃষকেরা এবার বোরো চাষ কে সৌভাগ্য হিসাবে মনে করছেন। উপজেলার ৮ ইউনিয়নের প্রতিটি মাঠের বুকে এখন সবুজের সমারহ। দিগন্তজুড়ে যে দিকে তাকায় শুধু সবুজ আর সবুজ। সবুজের সমারোহে চোখ জুড়িয়ে যায়। ইরি বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকের মুখে এখন যেন হাসির ঝিলিক।

বর্তমানে উপজেলার প্রতিটি মাঠ কৃষকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিলে মাথায় হাত ছাড়া কোন উপায় থাকবে না বলে আলাপ চারিতায় চাষীরা প্রতিবেদক কে জানায়। চাষীরা বর্তমানে দু-নয়ন ভরা স্বপ্ন নিয়ে দিন গুনছেন সুষ্ঠভাবে যেন মাঠের ফসল ঘরে তুলতে পারেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবারে ইরি বোরো মৌসুমে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ১৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এবারের বোরোর জাত গুলো হচ্ছে- হাইব্রিড: ধানি গোল্ড, তেজগোল্ড, হিরা-২ ও উফশী: ব্রিধান-২৮,২৯,৫০,৫৮, ৫৯,৬১,৬৩, বিনা ধান-১৪, সম্পা কাটারি এবং জিরাশাইল। গভীর নলকূপের আওয়তায় সেচের পানি ব্যবহার করে চাষীরা সঠিক ও নিয়ম অনুসারে সেচ সুফল পাচ্ছেন। এছাড়া চলতি মৌসুমে বিদ্যুৎ বিভ্রাট (লোডশেডিং) এর কোন অভিযোগ নেই। গতবারে শ্রমিক সংকটের কারণে এবারও ইরি বোরো চাষ নিয়ে অনেকেই দ্বিধাগ্রস্তের শিকার হন। এদিকে উপজেলার ডিলারদের নিকট পর্যাপ্ত পরিমান তেল ও সার পাওয়ায় কৃষকরা অনেকটা আশ্বস্ত হয়েছে।

উপজেলার পাইকড়া বড় বাড়ির কৃষক মো: শাহাদৎ হোসেন জানান, অন্যান্য বারের তুলনায় এবারে আমরা অধিকহারে বোরো ধান চাষ করেছি। আশা করছি এবার বোরো ধানে বাম্পার ফলন হবে। এবার বড় ধরণের ঝর বা শিলা বৃষ্টি না হলে বরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে আমরা অনেক উপকৃত হবো এবং বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবো বলে মনে করছি।

উপজেলা কালিকাপুর ইউনিয়নের পাইকড়া ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো: হিরো প্রাং জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ (কালবৈশাখি ঝড়) না হলে, এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। উচ্চ ফলনের প্রাপ্তির বিষয়ে চাষীদের নানা ভাবে কৃষি তথ্য ও পরামর্শ প্রদান করে আসছি আমরা। আগাম ধানের চারা রোপন এলাকায় এ সপ্তাহের মধ্যে ধান কর্তন আরম্ভ হবে। তবে অর্ধ মাসের মধ্যে উপজেলায় পুরোদমে ধান কর্তনের ধূম পড়ে যাবে।

এ ব্যাপারে উপজেলার সাহেবগঞ্জ ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো: কেরামত আলী বলেন, আমরা বিশেষ করে অধিক ফলেন জন্য পরিমিত সার ব্যবহার, পানি সাশ্রয় এবং সার্বিক পরিচর্যায় কৃষকদের সচেষ্ট হতে আমরা সব সময়ই পরামর্শ দিয়ে আসছি। এবার আত্রাই এলাকার কোথাও মাঝড়া পোকার আক্রমণ নেই। ফলে আমরা আশা করছি এবার রেকর্ড পরিমান জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হবে।

আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম কাউছার হোসেন বলেন, ইরি-বোরো ধান চাষে কৃষকেরা যাতে- লাভবান হতে পারে এবং কৃষকরা যেন বোরো চাষে কোন প্রকার সমস্যায় না পড়েন এ জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। যেখানেই সমস্য সেখানেই আমাদের উপস্থিতি এবং সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

স/অ