আত্রাইয়ে ডাকাত আতঙ্ক, গ্রামবাসীর রাত জেগে পাহারা

আত্রাই প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এখন সর্বত্র ডাকাতের আতঙ্ক কেড়ে নিয়েছে প্রবাসী পরিবার, ব্যবসায়ী ও গ্রামবাসীর ঘুম। বড় বড় ব্যবসায়ী ও প্রবাসী পরিবারের লোকজনের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। রাতের আঁধার ঘনালেই গ্রামবাসী সচেতন হয়ে ওঠেন মসজিদের মাইক কাজ করছে কি না,  স্বেচ্ছা পাহারায় অংশ নেওয়া যুবকেরা প্রস্তুত আছে কি না ইত্যাদি নিয়ে।

রাত জেগে পাহারাকে ঘিরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের লোকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, সংঘবদ্ধ ডাকাতদের প্রতিরোধ করতেই তাদের এসব প্রস্তুতি। কারণ কিছু দিন পর পর উপজেলার কোন না কোন গ্রামে সশস্ত্র ডাকাতদল হানা দিচ্ছে। শুধু ডাকাতি করেই ক্ষান্ত নয় দুবৃত্তরা, কয়েকটি ডাকাতির ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে ডাকাতিকালে নারীদের লাঞ্চিত ও বাড়ির লোকজনদের মারপিট করার কথাও। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে তারা সেসব চেপে যাচ্ছেন। আর ডাকাতদের ভয়ে থানায় মামলাও করছেন না সাধারণ মানুষ। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন গ্রামের নিরীহ মানুষ।

স্থানীয়রা বলছেন, গত এক মাসের উপজেলায় গত ৭ জানুয়ারী দিবাগত রাতে উপজেলার বহলা গ্রামে ও গত ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে উপজেলার তিলাবদুরী গ্রামের তোতা মল্লিকের বাড়িতে ও গত ২২ জানুয়ারী দিবাগত রাতে একই কায়দায় শ্রীরামপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ প্রাং এর বাড়িতে ডাকাতি সংঘটিত হয়েছিলো। তবে ডাকাতি নিয়ন্ত্রণে গ্রাম পুলিশও আত্রাই থানা পুলিশ ব্যস্ত বলে জানা গেছে। উপজেলার ঝনঝনিয়া, কাশিমপুর, বড়ডাঙ্গা, মাগুড়াপাড়া, হাতিয়াপাড়া, মির্জাপুর, ভবানীপুর, পূর্বমিরাপুর, ফুলবাড়ি, রসুলপুর, শ্রীরামপুর, বহলাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের লোকজন স্বেচ্ছায় নিজ উদ্যোগে ডাকাত আতঙ্কে পাহারা দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে ভবানীপুর বণিক সমিতির নাইটগার্ড মোঃ রইচ উদ্দিন জানান, হরহামেশাই দরজা ভেঙে চলছে ডাকাতি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও যেন অনেকটা নিরুপায় এবং ডাকাতদের কাছে অসহায়। এদিকে বেশ কিছু এলাকায় লোকজন রাতের বেলায় পালা করে পাহারা দিচ্ছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।

উপজেলার কয়সা গ্রামের আব্দুস ছালাম জানান, সন্ধ্যা নামলেই গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে ভর করে ডাকাত আতঙ্ক। কারণ দরজা বন্ধ ঘরের মধ্যেও আমরা নিরাপদ না। গত ২২ জানুয়ারী দিবাগত রাতে মুখোধারী ১৫/২০ জনের এক ডাকাত দল আমার বাড়িতেও হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিলো। আমরা টের পেয়ে চিৎকার শুরু করলে গ্রামবাসীর সহযোগীতায় ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা পায় এবং ডাকাত দল পালিয়ে যায়।

ডাকাতি প্রতিরোধে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছেন জানালেন উপজেলার ১নং শাহাগোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুল ইসলাম বাবু। তিনি বলেন, ডাকাতি প্রতিরোধে স্থানীয় উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবং আমার ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ নিয়োমিত রাত জেগে বিভিন্ন এলাকা পাহারা দিচ্ছে।

আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বদোরুদ্দজা জানান, আমরা ডাকাতি প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতিমধ্যে সন্দেহমূলক ভাবে বেশকিছু ডাকাতদলের সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিদিন ৭ টি পেট্রোল টীম গোটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যা রাত থেকে সকালে সূর্য্য উদয়ের আগে পর্যন্ত টহল দিয়ে থাকে। এবং গ্রামের সড়কগুলোতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

 

স/আ