আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা নয়, ‘হত্যাকাণ্ড’ সন্দেহ অমিতের স্বজনদের

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হলের আবাসিক ছাত্র অমিত কুমার বিশ্বাসের মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রথমে দুর্ঘটনা ও পরে আত্মহত্যার প্রসঙ্গ এলেও তা মানতে নারাজ তার স্বজনরা। তারা বলছেন, অমিত ছোটবেলা থেকে শান্ত, ভদ্র ও সৃজনশীল প্রকৃতির। তাকে কখনও চরম হতাশা বা বিষণ্নতায় ভুগতে দেখেননি ঘনিষ্ঠজনেরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের শিকার বা হলের কোনো পূর্ব ঘটনার জের ধরে সুপরিকল্পিতভাবে অমিত ‘হত্যাকাণ্ডের শিকার’ হয়ে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করছেন নৌবাহিনীতে কর্মরত তার বাবা অজয় কুমার বিশ্বাস।

নিহত অমিত বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের (২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার (১০ মে) দুপুর ২টার দিকে শহীদ রফিক-জাব্বার হলের পাঁচ তলার ছাদ থেকে পড়ে যান অমিত কুমার বিশ্বাস। পরে বিকেলে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এদিন রাত ৯টার দিকে অমিতের বিছানার নিচে তার রুমমেটরা একটি চিরকুট পান। সেখান থেকেই তার আত্মহত্যার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

চিরকুটে লেখা আছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। আমার মস্তিষ্কই মৃত্যুর জন্য দায়ী।’

চিরকুটের লেখার সঙ্গে অমিতের হাতের লেখার মিল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ।

অমিতের বাড়ি যশোরের মণিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাঠি ইউনিয়নের পাঁচকাঠিয়া গ্রামের বিশ্বাস পাড়ায়। বাবা অজয় কুমার বিশ্বাস খুলনা নৌবাহিনীতে কর্মরত। আর মা সীমা রাণী বিশ্বাস গৃহিণী। অজয় আর সীমা দম্পতির ঘরে ছেলে অমিত ছাড়াও টিনা বিশ্বাস (২০) নামে এক মেয়েও রয়েছে। বাবার চাকরির সুবাদে তারা স্বপরিবারে খুলনার বোয়ালখালী খালিশপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বসাবস করে আসছেন।

ছেলের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা থেকে মেরদেহবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে করে যশোরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে মুঠোফোনে অমিতের বাবা অজয় কুমার বিশ্বাস বলেন, অমিত ছোট বেলা থেকে শান্ত। কারও সঙ্গে কোনো ঝগড়া বা মারামারি করতে শুনিনি। অবসর সময়ে ভালো ছবি আঁকতো সে। এ বছরই অমিতের অর্নাস শেষ হওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে বছরখানিক দেরি হয়ে গেল। ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে গত ৭ মে অমিত খুলনা থেকে তার ভার্সিটির হলে যায়। হলের খাবার না খেয়ে বেশিরভাগ সময় বাইরের খাবার খেত অমিত। ঘটনার দিন দুপুরেও তার এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে দুপুরে বাইরের খাবার খেয়ে এসেছে। বিকেলে তার এক বন্ধু ফোন দিয়ে বলে, আঙ্কেল অমিত দুর্ঘটনায় পড়েছে। আপনারা দ্রুত ঢাকাতে চলে আসেন। রাত ১০টার দিকে ঢাকায় পৌঁছে শুনি অমিত আর নেই।

jagonews24

কান্নাজড়িত কণ্ঠে অজয় কুমার বিশ্বাস আরো বলেন, পরিবারের একমাত্র ছেলে হিসেবে খুব আদরের ছিল অমিত। আমি চাকরিতে থাকি বলে অমিতের যা দরকার তার মায়ের কাছে সে চাইতো। যা বলার দরকার সে তার মাকেই বলতো। ঈদের ছুটিতে বাসায় এসে আমাকে বলল, ‘বাবা এবার তো আমার পড়াশুনা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এবার বিসিএস প্রস্তুতি নেবো। হলে গিয়েই কিছু বই কিনবো।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অমিতের আত্মহত্যা করারতো কোনো কারণ দেখছি না। এবার ঈদে বাড়িতে গিয়েও খুব হাসি-খুশি ছিল। তার মধ্যে কখনো হতাশা বা বিষণ্নতা দেখিনি। কী কারণে এটা হল বুঝতেছি না। তবে অমিত প্রথম বর্ষের দিকে হলে ওঠার সময় বড় ভাইদের র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিল। তাই হলে বা ভার্সিটিতে কোনো র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে সে আত্মহত্যা করতে পারে। আবার হল বা ভার্সিটিতে কারোও সঙ্গে কোনো শত্রুতা থাকলে তার জের ধরে ছাদে নিয়ে তাকে ধাক্কা মারতে পারে। জোর করেও তার হাত দিয়ে এই চিরকুট লেখাতে পারে বলে ধারণা করছি।

তিনি বলেন, আমরা ভার্সিটি ও পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি অধিকতর তদন্ত করে বিষয়টি পরিষ্কার করার। যদি এটা হত্যাকাণ্ড হয় তাহলে এর সঠিক বিচারের দাবি জানান তিনি।

এদিকে অমিতের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার গ্রামের বাড়ি যশোরের মণিরামপুর উপজেলার হরিদাসকাঠি ইউনিয়নের পাঁচকাঠিয়া গ্রামের বিশ্বাসপাড়ায়।

বুধবার দুপুরে অমিতের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠে পাকা বোরো ধান কাটা বন্ধ রেখে তার স্বজনেরা বাড়ির প্রধান ফটকে জটলা বেঁধে অপেক্ষা করছে অমিতের মরদেহ আসার জন্য। একে অন্যের সঙ্গে অমিতের গুণাবলী নিয়ে প্রশংসা করছে।

পঞ্চাশোর্ধ্ব শিলা বিশ্বাস নামে অমিতের এক কাকী বলেন, অমিত ছোটবেলা থেকে ভদ্র আর শান্ত। এলাকায় আসলে সবার সঙ্গে দেখা করে। ও আত্মহত্যা করতে পারে না।

পলাশ কান্তি বিশ্বাস নামে অমিতের এক কাকাতো ভাই বলেন, অমিত ছোটবেলা থেকে মেধাবী। জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এরপর খুলনা নৌবাহিনী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়। সে সৃজনশীল মানুষ। সময় পেলে ভালো ছবি আঁকে। অমিতের এই ঘটনা দুর্ঘটনা কিংবা আত্মহত্যা নাকি হত্যাকাণ্ড সেটা তদন্তসাপেক্ষ ব্যাপার। আশা করি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আসল ঘটনাটি বের হয়ে আসবে।

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ