আত্মসম্মানী অভাবীদের প্রতি সমাজের দায়িত্ব

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

অসহায় ও অভাবীদের প্রতি দানের হাত বাড়িয়ে দিতে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বহুবার বহুভাবে মানবজাতিকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। জাকাতের বিধানের মাধ্যমে দান মুসলিম উম্মাহর ওপর আবশ্যক করা হয়েছে। এ ছাড়া দানের বহুবিদ কল্যাণের কথা মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের ঐশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে উদাসীন না করে। যারা উদাসীন হবে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আমি তোমাদের যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করবে মৃত্যু আসার আগে। অন্যথায় সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরো কিছুকাল অবকাশ দিলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ (সুরা : মুনাফিকুন, আয়াত : ৯-১০)

আদি ইবনে হাতিম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাকো একটি খেজুরের বিনিময়ে হলেও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪১৭)

দান-সদকা গরিব অসহায় অভাবী লোকদের প্রাপ্য এ কথা সর্বজনীন। তবে দান করার ক্ষেত্রে দানগ্রহীতার উপযুক্ততা এবং কে দানের বেশি হকদার তা খতিয়ে দেখা দানকারীর কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘খাবারের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দিদের খাবার দান করে এবং বলে, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের খাবার দান করি। আমরা তোমাদের কাছ থেকে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয়।’ (সুরা : দাহর, আয়াত : ৮-৯)

 

আত্মসম্মানী অভাবী মানুষের খেয়াল রাখার তাগিদ

সমাজে যারা গরিব অসহায় অভাবী হিসেবে চেনাজানা থাকে—যাদের দেখলে অভাবী মনে হয়, সাধারণত দান প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তারাই এগিয়ে থাকে। কিন্তু সমাজে এমন একটি শ্রেণি রয়েছে যাদের বেশ-ভূষা, চালচলন আর দশজন অভাবী মানুষের মতো না। আত্মসম্মানবোধের কারণে যারা নিজেদের গুটিয়ে রাখে। মানুষের কাছে হাত পাতে না। পবিত্র কোরআনে এই শ্রেণির আত্মসম্মানী অভাবী মানুষের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘এটা (দান) প্রাপ্য অভাবগ্রস্তদের; যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে দেশময় ঘোরাফেরা করতে পারে না;  না চাওয়ার কারণে অবিবেচক লোকেরা তাদের অভাবমুক্ত মনে করে;  তুমি তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে। তারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে কিছু চায় না। তোমরা যা কিছু দান করো, আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৩)

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ দান ও অনুদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদানের কয়েকটি দিক তুলে ধরেছেন। যেমন—

১. আল্লাহর পথে ব্যাপৃত থাকার ফলে যারা স্বাভাবিকভাবে জীবিকার সন্ধান করতে পারে না।

২. তাদের না চাওয়ার ফলে অবিবেচকরা তাদের অভাবমুক্ত মনে করে।

৩. লক্ষণ দেখে তাদের চেনা যায়।

৪. তারা মানুষের কাছে ব্যাকুল হয়ে চায় না।

 

হাদিসের বর্ণনায় প্রকৃত অভাবী যারা

বর্তমান সময়ে এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা কম নয়। যারা দ্বিনের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক নিজেদের নিয়োজিত রাখে, চক্ষুলজ্জায় বা আত্মসম্মানবোধের কারণে চাইতে পারে না। আপাতদৃষ্টিতে যাদের সচ্ছল ও স্বাভাবিক মনে হয়। তবে লক্ষ করলে তাদের অভাব বোঝা যায়। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ওই ব্যক্তি অভাবী নয় যে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ায় কোথাও হয়তো একটি খেজুর পেল, কোথাও হয়তো দুয়েক গ্রাস খাবার পেল আবার কোনো জায়গায় হয়তো দু-এক দিনের খাবার পেল; বরং অভাবী ওই ব্যক্তি যার কাছে এই পরিমাণ খাদ্য নেই, যার দ্বারা সে অমুখাপেক্ষী হতে পারে। আবার সে তার অবস্থাও এমনভাবে প্রকাশ করেনি, যার ফলে মানুষ তার অভাব অনুভব করে তার প্রতি কিছু অনুগ্রহ করবে—মানুষের কাছে চাওয়ার অভ্যাসও তার নেই। (ফাতহুল বারি ৩/৩৯৯; মুসনাদে আহমাদ ১/৩৮৪)

 

 ধরনের ব্যক্তিদের দান করার পুরস্কার

আত্মসম্মানী অভাবীদের পরিচয় দেওয়ার পর আল্লাহ বলেন, ‘যারা দিনে ও রাতে, গোপনে ও প্রকাশ্যে নিজের সম্পদ থেকে দান করে, আল্লাহর কাছে তাদের পুরস্কার রয়েছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তার জন্য দুঃখিত হবে না। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৭৪)

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার আনুগত্য ও সন্তুষ্টি লাভ করার উদ্দেশ্যে যারা রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে নিজেদের ধনসম্পদ থেকে ব্যয় করে তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রতিপালকের কাছে বিশেষ পুরস্কার। যেদিন সবাই ভীতসন্ত্রস্ত ও চিন্তিত থাকবে, সেদিন তাদের কোনো ভয় ও চিন্তা থাকবে না।

যদিও আলোচ্য আয়াতে বিশেষ শ্রেণিকে দান করার বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলা হয়নি, তবে আলোচনার ধারাবাহিকতা থেকে আত্মসম্মানী অভাবীদের দান করার বিষয়টিও এই পুরস্কারের অন্তর্ভুক্ত—তা সহজে বোঝা যায়। তাই আসুন! করোনাভাইরাসের কারণে সমাজে যে কর্মহীনতা ও অভাব দেখা দিয়েছে, তার প্রভাব থেকে আত্মসম্মানী অভাবী পরিবারগুলোকে রক্ষায় এগিয়ে যাই। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক :  সুপারিনটেনডেন্ট, হাবিব লাইলী মাদরাসা, পশ্চিম টুটপাড়া, খুলনা

 

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ