সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংকে সাত হাজারের বেশি অফিসার পদে নিয়োগের জন্য গত ১২ জানুয়ারি যে সমন্বিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করেছে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির জরুরি বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পাবলিকেশনস বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “আজকের মিটিংয়ে ওই পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরীক্ষা কবে হবে তা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।”
গত শুক্রবার রাজধানীর ৬১টি কেন্দ্রে এই নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হলেও আসন স্বল্পতার কারণে গণ্ডগোলে মিরপুরের একটি কেন্দ্রের সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী সেদিন পরীক্ষা দিতে পারেননি। অন্যান্য কেন্দ্রেও প্রশ্নপত্র দেরিতে পৌঁছানোসহ নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া যায়।
আবুল কালাম আজাদ জানান, পরীক্ষা কেন্দ্রে আসন বিড়ম্বনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক-১ আহমেদ জামালের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তাতে সোনালী, জনতা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জিএম থাকবেন সদস্য সচিব হিসেবে। কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার, অফিসার ও ক্যাশ অফিসারের মোট এক হাজার ৬৬৫টি শূন্য পদে নিয়োগের এ পরীক্ষায় আবেদন করেছিল তিন লাখ ২৬ হাজার চাকরিপ্রত্যাশী।
তাদের মধ্যে দুই লাখ ১৩ হাজার ৫২৫ জন পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করেন। সমন্বিত এই নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি টিমকে। আর শুক্রবারের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন প্রবেশপত্র সংগ্রহকারীদের ৫৫ শতাংশ।
অব্যবস্থাপনার বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন ও ব্যাখ্যা পাওয়ার পর পরীক্ষার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এক রিট আবেদনে এ পরীক্ষা হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হলেও শেষ মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালতের আদেশে এই নিয়োগ পরীক্ষার পথ তৈরি হয় গত বৃহস্পতিবার। আগের ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এমসিকিউ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু বসার জায়গা না পেয়ে মিরপুরে শাহ আলী মহিলা কলেজ কেন্দ্রের ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা জানালা-দরজা ভাংচুর করে। বাধ্য হয়ে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি শুধু ওই কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের নিয়ে ২০ জানুয়ারি আবারও পরীক্ষার আয়োজন করার ঘোষণা দেয়।
কিন্তু গত শুক্রবারের পরীক্ষা বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া, ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির (বিএসসি) সদস্যসচিবের পদত্যাগ, প্রতিটি কেন্দ্রে আসনবিন্যাস নিশ্চিত করা, বিতর্কিত কেন্দ্র বাদ দেওয়া, বিকল্প কোনো প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্ন প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়াসহ নয় দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে চাকরি প্রত্যাশিরা।
সোমবার আন্দোলনরতদের দুজনকে দৈনিক বাংলা মোড় থেকে আটক করে পুলিশ। এরপর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন, ১২ ঘণ্টার মধ্যে ওই দুজনকে ছেড়ে দেওয়া না হলে এবং ১২ জানুয়ারির পরীক্ষা বাতিল না করলে তারা কঠোর আন্দোলনে যাবেন।
এই পরিস্থিতিতে গভর্নর ফজলে কবির মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি এবং ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের জরুরি বৈঠক ডাকেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ওই বৈঠক শেষে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দিলে শাহবাগে উল্লাসে ফেটে পড়ে আন্দোলনরত চাকরিপ্রত্যাশিরা। সেখানে তারা নিজেদের মধ্যে মিষ্টিও বিতরণ করে বলে খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে।
সূত্র: বিডিনিউজ