আজ রাজশাহী মুক্ত দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আজ সোমবার রাজশাহীবাসীর স্মৃতিপটে আঁচড় কেটে যাওয়া স্মরণীয় একটি দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে (১৮ ডিসেম্বর) হানাদার মুক্ত হয় রাজশাহী। ৪৫ বছর আগে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর এসেছিল বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল বিজয়। পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের এই দেশে উদিত হয়েছিল নতুন সূর্য।

রাজশাহীতে স্বাধীন দেশের প্রথম পতাকা ওড়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার দুই দিন পর। দীর্ঘ নয় মাস পর বিভীষিকাময় সময়ের অবসান ঘটে। বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় আর আত্মপরিচয়ের ঠিকানা করে নেওয়ার অনুভূতিতে পুলকিত হয়ে ওঠেন রাজশাহীর মানুষ। মুক্তিকামী জনতার ঢল নামে রাজশাহী শহরের প্রতিটি সড়কে।

মুক্তিযুদ্ধের ৭নং সেক্টরে থাকা এ অঞ্চলে বিদেশী প্রতিনিধিদের পরিস্থিতি জানাতে মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্ত পার হয়ে আসে। একাত্তরের ১৭  জুন ২৩ জন মুক্তিযোদ্ধা রাজশাহী শহরে গ্রেনেড বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে শুরু করেন তাদের অ্যাকশন-অপারেশন। বাড়তে থাকে পাকিস্তানী সৈন্য ও দোসরদের নির্যাতন হতাযজ্ঞ। সব শ্রেণি ও পেশার মানুষ অংশ নেন অস্তিস্ত রক্ষার সংগ্রামে। রাজশাহীর নারীরাও শরিক হন তাতে।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে আলবদর বাহিনী পরাজয় আঁচ করতে পেরে শুরু করে ত্রাস, হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ ও নির্যাতনসহ নানা নিপীড়ন। পাকিস্তানি সৈন্যরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমিতে হত্যা করে চার হাজার মানুষকে। নারীরাও তাদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাননি।

কেউ সীমান্ত পার হয়ে ভূমিকা রাখলেন, কেউ এ পারেই হয়ে উঠলেন দুঃসাহসিক গেরিলা। ওই সময় আলবদর বাহিনী গঠনের পর শুরু হলো ত্রাস, হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ নানা নিপীড়ন। পাকিস্তানি সৈন্যরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমিতে হত্যা করলো চার হাজার মানুষকে। নারীরাও তাদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাননি।

পাকিস্তানি সৈন্যরা দোসরদের মদদে বিভিন্ন কায়দায় লোকজনকে হত্যা করে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে ফেলে দেয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা ঢুকে পড়তে থাকে রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলে। ২৫ নভেম্বর পাকিস্তানী সৈন্যরা রাজশাহী মহানগরীর শ্রীরামপুর বাবলাবন চরে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জীবন্ত অবস্থায় বালির মধ্যে পুঁতে হত্যা করে। সবকিছু সহ্য করে স্বাধীনতার দিনগুণতে থাকে রাজশাহীর মানুষ।

মিত্র বাহিনীর বিমানকে স্বাগত জানাতে সবাই তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। সে সময় পাক সেনাদের বিমান বোমা ফেলতে থাকলো রাজশাহীতে। লালগোলা সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও সেখপাড়া সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর রশিদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাক সেনাদের সাথে লড়াই করে মুক্ত করে ফেলে রাজশাহীর গ্রামাঞ্চল।

মহদিপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর রাজশাহী অ্যাডভান্সের পরিকল্পনা নিলেন। তিনি ১৪ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেহায় চরে শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী রাজশাহীর দিকে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয়। ১৬ ডিসেম্বর পরাজয় বরণের পর যৌথ বাহিনীর এই অগ্রগামী দল পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছ থেকে সাদা পাগড়ী ও আত্মসমর্পণের চিঠি নিয়ে রাজশাহী শহরে বীরদর্পে প্রবেশ করে।

এরপর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী দ্রুত গতিতে রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর পরাজয় বরণের পর যৌথ বাহিনীর এ অগ্রগামি দল পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছ থেকে সাদা পাগড়ি ও আত্মসমর্পণের চিঠি নিয়ে রাজশাহী শহরে বীর দর্পে ঢোকে। স্বজন হারানোর কষ্ট আর স্বাধীনতার উল্লাসে গোলাপজল, ফুলের পাপড়ি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা-মিত্রবাহিনীকে বরণ করে নেয় রাজশাহীবাসী।

১৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয়ে যায় রাজশাহী। রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলেন লাল গোলা সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী। পরে পাকিস্তানি সৈন্যরা রাজশাহী ছেড়ে চলে যায় নাটোরে। রাজশাহীর অবরুদ্ধ মানুষ মুক্ত বাতাসে নেমে আসে বহুল কাঙ্খিত মুক্তির স্বাধ।

স/আ