আজ জয়পুরহাট মুক্ত দিবস

এসএম শফিকুল ইসলাম, জয়পুরহাট:
আজ ১৪ ডিসেম্বর জয়পুরহাট মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার মুক্ত হয়েছিল জয়পুরহাট। পাকসেনাদের বর্বর নির্যাতন, খুন ও ধর্ষণের দুঃসহ স্মৃতি মনে করে আজো শিহরে ওঠে জয়পুরহাটবাসী। হত্যাযজ্ঞের নির্মম সাক্ষী বধ্যভূমিগুলোও স্মৃতি হাতড়িয়ে নিরবে নিভৃতে কাঁদে।

এইদিনে তৎকালীন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আসাদুজ্জামান  বাবলুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় ডাক বাংলোয় স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করে জয়পুরহাট কে শক্রমুক্ত ঘোষণা করেন। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের তারা খেয়ে পাকসেনারা জয়পুরহাট ছেড়ে সিরাজগঞ্জের দিকে পালিয়ে যায় । স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও জয়পুরহাটে ছড়িয়ে ছিটেয়ে থাকা স্থানীয় রাজাকারদের এখনো বিচার না হওয়ায় খুব্ধ ও হতাস মুক্তিযোদ্ধারা।

১৯৭১ সালে তারা স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় জয়পুরহাটের বিভিন্ন স্থানে চালায় হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটতারাজ। এমনকি জুম্মার নামাজের দিনে মসজিদ থেকে অর্ধ শতাধিক মুসল্লিদের ধরে নিয়ে গিয়ে পাগলা দেওয়ান বদ্ধভুমিতে নির্বিচারে চালায় হত্যা। এছাড়া পাগলা দেওয়ান ভারত সিমান্তবর্তী  হওয়ায় সেই রাস্তাদিয়ে চলাচল করতো শত শত শরণার্থীরা। সেখানে অসংখ্য শরণার্থীদের হত্যা করে পাকসেনারা।

১৯৭১ সালের২৪ এপ্রিল প্রথম সান্তাহার থেকে রেলযোগে পাকসেনারা জয়পুরহাটে এসে পাঁচবিবি গোহাটিতে আক্রমন করে। পরদিন কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে পাগলা দেওয়ান ও ক্ষেতলালের চরবাখরা ব্রিজ এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন করে। ২৬ এপ্রিল পাকসেনারা তাদের দোসরদের সাথে নিয়ে হামলা চালায় কড়ই-কাদিপুরে। কড়ই কাদিপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩৭১ জন মৃৎ শিল্পীকে স্থানীয় রাজাকার আলবদরদের সহায়তায় সারিবদ্ধ ভাবে দাড় করে তাদের নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা করে পাক সেনারা। এসময় স্থানীয়  রাজাকাররা তাদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে লুটপাট চালায়।

এছাড়াও পাগলাদেওয়ান এলাকায় কয়েক হাজারেরও বেশী নিরীহ শরনার্থীকে গলা কেটে  ও গুলি করে নৃশংশ হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকরা। হানাদার বাহিনীর ব্যবহৃত বাংকার আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে পাগলাদেওয়ান গ্রামে।

অবশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা ও সম্মূখ আক্রমনে পিছু হটতে থাকে পাকসেনারা। পরাজয় নিশ্চিত জেনে রাতের আধাঁরে তারা পালিয়ে যায় বগুড়ার দিকে। ১৪ ডিসেম্বর প্রথমে পাঁচবিবিতে এবং পরে ডাকবাংলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে জয়পুরহাটকে মুক্ত ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধারা। তবে স্বাধীনতার বহু যুগ পার হলেও এখনো অবহেলিত হানাদার বাহিনীর দ্বারা হত্যার স্বীকার পরিবারগুলো এখনো জোটেনি কোন সরকারি সহযোগিতা।

জয়পুরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার মোঃ আমজাদ হোসেন মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশীয় রাজাকার আলবদর বাহিনী যারা নিরীহ বাঙ্গালী ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল তাদের বিচার দাবি ও অবহেলিত শহীদ পরিবারগুলোর জন্য সরকারি সহযোগিতার দাবি করেন।

স/আ