আজও ঢেঁকিতেই চলে অষ্টমীর সংসার

নূপুর মাহমুদ

এক সময় এই ঢেঁকি দিয়ে চাল, আটা, ডাল ভাঙ্গা, সিদল (ছোট মাছ আর কচুর ডেরা সমন্বয়ে) তৈরি করা হতো। তবে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকির কদর আগের মতো আর নেই। বিদ্যুৎচালিত যান্ত্রিক যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে, অনেকটা হারিয়ে গেছে এই ঢেঁকি।

কিন্তু, যদি বলা যায় আজো এই ঢেঁকিতেই কারো সংসার চলছে। শুনতে অনেকটা আশ্চার্য মনে হলেও, অভাব অনটনের সংসারের এটাই বাস্তব।

নওগাঁর নুরুল্যাবাদ স্কুল পাড়া গ্রামের বাসিন্দা অষ্টমী। বয়সের ছাপ পরেছে স্পষ্ট। ২৫ বছর আগে স্বামী লিলু মারা গেলে ২ ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে রাস্তার পাশে ছোট ঝুপড়ি করে মাথা ঠায় গুজার ব্যবস্থা করেন। অল্প বয়সে স্বামী হারিয়ে সন্তানদের নিয়েই চলছে তার সংসার।

আর এ সংসার চালাতে গিয়ে পরতে হয়েছে নানা সমস্যায়, কখনো বাসা বাড়িতে কাজ করে, তো  কখনো রাস্তার পাশে কিছু বিক্রি করে পার করেছেন দিন। এখন বয়স প্রায় ৫৫ ছুঁই ছুঁই। 

তরপরও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসা বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকিতেই চলছে তার সংসার। আজও তিনি শুধু মাত্র সংসার চালানোর তাগিদে এখনো ঢেঁকিকেই একমাত্র উর্পাজনের সম্বল মনে করছেন। মাত্র ৬ টাকা কেজি দরে চাল কুটে তারা জীবীকা নির্বাহ করছেন।

অষ্টমী সিল্কসিটি নিউজকে জানান,‘ তার স্বামী মারা যাবার পর ৩ সন্তান কে নিয়ে দিশেহার হয়ে পরেন। বাসা বাড়িতে কাজে গেলে অল্প বয়সী বিধবা বলে অনেকে সমস্যা মনে করতো, আর তাই ঢেঁকিতে কুটার কাজ শুরু করেন। এখন সন্তানরা বড় হয়েছে, তবে নিজের কোনো জমি-জায়গা না থাকায় রাস্তার পাশে খাশ জমিতে বাড়ি বানিয়ে থাকেন। এখনো ছয় টাকা কেজি করে চাল ভেঙ্গে দেন তা দিয়ে চলে তাদের সাংসার।

তিনি বলেন, ‘কোনো রকম বয়স্কভাতা পায় না। গ্রামের মেম্বার বা চেয়ারম্যান কেউ এগিয়ে আসেনি সাহায্য সহায়তার জন্যও। ঢেঁকি কুটার কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে চলতে হচ্ছে।’

তার প্রতিবেশী আজিরন বিবি বলেন, ‘খুব কষ্টে থাকেন তারা। কেউ আটা কুড়তে আসলে সেখান থেকে যে যা দেয় তাই খেয়। আর সাথে কিছু টাকা পায়। তাদের কষ্ট দেখে খুব খারাপ লাগে।’

স্থানীয় শিক্ষক নাম জানাতে অনিচ্ছুক তিনি বলেন, পরিবারটা খুবই অসহায়। একবেলা খেতে পারলে, দুই বেলা না খেয়ে দিন পার করতে হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তাদের প্রতি কোনো গুরুত্ব নেই। তারা যেন দুই বেলা দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকতে পারেন এজন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন করি।’

এলাকায় বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বড় ছেলে স্বপন রাস্তার পাশে খাস জমিতে বসবাস করে। সে একটি চায়ের দোকানে কাজ করেন। ছোট ছেলে মাকে নিয়ে থাকেন কুড়ে ঘরে। তিনি দিন মজুরের কাজ করেন। অষ্ঠমীর মেয়ে পুর্নিমা তার স্বামি বিয়ে পর একটা বাচ্চা রেখে পালিয়ে গেছে অন্যত্রে। এখন পুরো পরিবারের একমাএ উপার্জনের সম্বল ঢেঁকি। তবে ঢেঁকিতে কুটে আর কতদিন এভাবে চলবে তা জানা নেই।

স/অ