আইসিটি প্রশিক্ষণ পাবেন ৫১৮০ তরুণ

আইসিটি খাতে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে বেকার যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণ দেবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। কম্পিউটার বেসিক অ্যান্ড আইসিটি অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে ৪৮৩০ জন ও প্রফেশনাল গ্রাফিকস ডিজাইন বিষয়ে ৩৫০ জন প্রশিক্ষণ পাবেন।

সাভার শেখ হাসিনা যুব উন্নয়নকেন্দ্র থেকে ২০১১ সালে ছয় মাসের কম্পিউটার বেসিক কোর্স করেন হারুন-অর-রশিদ সাব্বির। ২০১৩ সালে সাভার কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নকেন্দ্র থেকে করেন গ্রাফিকস ডিজাইন কোর্স।

কোর্স চলাকালীন প্রশিক্ষক ফরিদা পারভীনের সহায়তায় অনলাইনে শুরু করেন আউটসোর্সিংয়ের কাজ। এখন আউটসোর্সিং করে সাব্বির মাসে গড়ে আয় করেন ৩০ হাজার টাকা। তিনি জানান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কোর্সগুলো কর্মসংস্থানের জন্য বেশ সহায়ক।

 

প্রশিক্ষণ নিয়ে আপনিও নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারেন। সম্প্রতি ‘৬৪ জেলায় তথ্য-প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। জানুয়ারি-জুন ২০১৮ সেশনে কম্পিউটার বেসিক অ্যান্ড আইসিটি অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ে বিভাগীয় ও জেলা শহরের ৬৯টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ৭০ জন করে মোট ৪৮৩০ জন এবং প্রফেশনাল গ্রাফিকস ডিজাইন বিষয়ে বিভাগীয় শহরের সাতটি কেন্দ্রের মাধ্যমে ৫০ জন করে মোট ৩৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

কেন এই প্রশিক্ষণ

প্রশিক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও যুগ্ম সচিব শিশির কুমার রায় জানান, আইসিটি সেক্টরে কাজের সুযোগ দিন দিন বাড়ছে। এর জন্য দরকার দক্ষ জনবল। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের আউটসোর্সিংসহ আইসিটি খাতের নানামুখী কাজে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা দেশের শিক্ষিত বেকারদের আইসিটি খাতে প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা গেলে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবেভর্তির যোগ্যতা

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ঢাকার প্রধান কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ছয় মাস মেয়াদি প্রফেশনাল গ্রাফিকস ডিজাইন ও কম্পিউটার বেসিক অ্যান্ড আইসিটি অ্যাপ্লিকেশন কোর্সে ভর্তির যোগ্যতা এইচএসসি। আগে যাঁরা কম্পিউটার বেসিক অ্যান্ড আইসিটি অ্যাপ্লিকেশন কোর্স করেছেন, শুধু তাঁরাই প্রফেশনাল গ্রাফিকস ডিজাইন কোর্সে অংশ নিতে পারবেন। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী বেকার যুবক-যুবতীরা অংশ নিতে পারবেন এ দুটি কোর্সে। অগ্রাধিকার দেওয়া হবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও যুব মহিলা প্রার্থীদের। অগ্রাধিকার পাবেন উদ্যোক্তা ও আইটি বিষয়ে কাজের প্রতি আগ্রহী প্রার্থীরাও।

কোথায় কোন কোর্স

প্রফেশনাল গ্রাফিকস ডিজাইন কোর্সটি করা যাবে ঢাকা বিভাগের উপপরিচালকের কার্যালয়, ১২ গজনবী রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭ এবং কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নকেন্দ্র, সাভার থেকে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল এবং সিলেট বিভাগের উপপরিচালকের কার্যালয় থেকেও দেওয়া হবে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ। কম্পিউটার বেসিক অ্যান্ড আইসিটি অ্যাপ্লিকেশন কোর্সটি করা যাবে ঢাকা জেলার কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নকেন্দ্র, সাভার, খিলগাঁও কেন্দ্র এবং শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়নকেন্দ্র, সাভার থেকে। এ ছাড়া দেশের ৬৪ জেলার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয় থেকেও দেওয়া হবে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ।

আবেদন যেভাবে

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ওয়েবসাইটে (www.dyd.gov.bd) পাওয়া যাবে আবেদন ফরম ও প্রশিক্ষণসংক্রান্ত তথ্য। প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করতে হবে। পূরণ করা আবেদন ফরম নিজ জেলার উপপরিচালকের দপ্তরে জমা দিতে হবে। জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২০ ডিসেম্বর। আবেদনপত্রের সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও বয়স প্রমাণের প্রত্যয়নপত্রের ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি কিংবা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা পৌর কমিশনারের দেওয়া নাগরিকত্ব সনদের ফটোকপি এবং দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি যুক্ত করতে হবে।

বাছাই প্রক্রিয়া ও সাক্ষাত্কার

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাওয়া সব আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করবে জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। প্রাথমিক বাছাইয়ের পর যোগ্যদের ডাকা হবে চূড়ান্ত বাছাই পরীক্ষার জন্য। অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। পরীক্ষার তারিখ অধিদপ্তরের নিজ নিজ জেলার উপপরিচালকের কার্যালয় থেকে জানা যাবে। সাক্ষাত্কারে জানতে চাওয়া হতে পারে—কোর্সে প্রার্থী কেন অংশ নিতে চান এবং কোর্স শেষে কী ধরনের কাজ করতে চান। নির্ধারিত তারিখ সকাল ৯টায় উপস্থিত হতে হবে নিজ জেলার উপপরিচালকের কার্যালয়ে। ভর্তি কার্যক্রম শেষে প্রশিক্ষণ শুরু হবে ১ জানুয়ারি।

প্রশিক্ষণ ফি ও আবাসন

চূড়ান্ত বাছাইয়ের পর কোর্স ফি সংশ্লিষ্ট জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে জমা দিতে হবে। কম্পিউটার বেসিক অ্যান্ড আইসিটি অ্যাপ্লিকেশন কোর্সে লাগবে ১০০০ টাকা এবং প্রফেশনাল গ্রাফিকস ডিজাইন কোর্সের ফি ২০০০ টাকা। জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের হোস্টেলে বিনা খরচে আবাসন সুবিধা পাওয়া যাবে। আসন খালি থাকলে প্রশিক্ষণার্থীরা এ সুবিধা নিতে পারবেন। খাওয়া ও অন্যান্য খরচ নিজেকেই বহন করতে হবে।

আছে ঋণের সুবিধা

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ঢাকা জেলার উপপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, সফলভাবে কোর্স শেষ করতে পারলে পাওয়া যাবে ঋণ সুবিধা। সে জন্য প্রার্থীকে আবেদন করতে হবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর। আবেদন যাচাই করে দেখা হবে প্রার্থী ঋণ পাওয়া এবং পরিশোধের যোগ্য কি না। মনোনীতদের প্রথমবার দেওয়া হবে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত। ২৭ মাসে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারলে ঋণ মিলবে দ্বিতীয়বার। মহিলারা ৯ শতাংশ ও পুরুষরা ১০ শতাংশ সুদে এ ঋণ পাবেন বলে জানান দেলোয়ার হোসেন।

যোগাযোগ

ভর্তি ও প্রশিক্ষণসংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে হবে নিজ জেলার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয়ে।

প্রয়োজনে যোগাযোগ করা যাবে ‘৬৪ জেলায় তথ্য-প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প’, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, যুব ভবন,

১০৮ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০ ঠিকানায়।

ওয়েব : www.dyd.gov.bd

সূত্র: কালের কন্ঠ